২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ শাবান ১৪৪৬
`
গ্রন্থমেলায় প্রাণের উৎসব

শেষ সময়েও জমেনি মেলা

-


একে একে সময় ফুরিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত জমেনি এবারের বইমেলা। ব্যাপক লোকসমাগমের মাধ্যমে শুরুটা ভালো হলেও শেষ সময়ে এসে হতাশ হলো বিক্রেতারা। প্রকাশকরা বলছেন, গতকাল পর্যন্ত বিক্রির যা অবস্থা তাতে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে বড় ফারাক। বিক্রেতারা বলছেন, এ পর্যন্ত যা বিক্রি হয়েছে তাতে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। শেষ যে কয়দিন আছে তাও খুব ভালো কিছু হবে এমনটা অনিশ্চিত।

গতকাল মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, অনেক স্টল ফাঁকা। স্টল মালিকরা জানান, গত ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার বিক্রি ভালো ছিল। মেলা শুরুর পর এই দুই দিনই সবচেয়ে ভালো বিক্রি হয়েছে। তবে পুরো মাসের মধ্যে এরকম দু’একদিন বিক্রি প্রত্যাশিত না।
মেলায় প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে জানিয়ে তারা বলেন, গেট খোলার সাথে সাথে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় মেলা প্রাঙ্গণ। কিন্তু বিক্রি নেই। মানুষ আড্ডাতেই ব্যস্ত থাকেন। বই কিনতে স্টলে আসেন না।
এর কারণ সম্পর্কে তাদের ভাষ্য প্রথমত ভালো লেখকদের নতুন বই এবার কম। অন্যদিকে বিশাল একটি অংশ আছেন যারা হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের পাঠক। কিন্তু সমস্যা হলো এই লেখকের নতুন বই আসছে না, আসা সম্ভবও না। যা ছাপা হচ্ছে তা আগেই বইয়ের নানা সংস্করণ। এভাবে করে অনেক ভালো লেখক আছেন যাদের নতুন বই না থাকলেও সংস্করণ দিয়ে পাঠক ধরে রাখার চেষ্টা চলছে। কিন্তু যারা নিয়মিত পাঠক তারা তো বই হাতে নিলেই বুঝতে পারেন এর মধ্যে নতুনত্ব নেই। তাই বই খুঁজতে এসেও পুরাতন বইয়ের নতুন সংস্করণ না কিনেই ফিরে যান।
গতকাল অমর একুশে বইমেলার ২৪তম দিনে নতুন বই এসেছে ৯৮টি। নতুন বইয়ের মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম। এর লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য। প্রকাশক ঐতিহ্য। সিপাহি বিদ্রোহ এবং একটি ঐতিহাসিক অবিচার। এর লেখক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু। প্রকাশক ঐতিহ্য। মসজিদের বিধানাবলী। লেখক মুফতি মো: আবদুল্লাহ। প্রকাশক তাম্রলিপি। তবু কথা থাকে। এর লেখক রফিক লিটন। প্রকাশক চৈতন্য।

গতকাল বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন-আকাক্সক্ষার নাট্যকলা-যাত্রা : ঐতিহ্যের পরম্পরায় জাতীয়তাবাদী শিল্পরীতি এবং অমলেন্দু বিশ^াস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইদুর রহমান লিপন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শাহমান মৈশান। সভাপতিত্ব করেন মিলনকান্তি দে।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত রীতি-পদ্ধতির সর্বাধিক জনসম্পৃক্ত একটি নাট্যধারা-যাত্রা। বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যাত্রা শিল্পের জগতে স্বদেশীয় রাজনীতি ও দ্রোহচেতনার বিস্তারে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেন অমলেন্দু বিশ^াস। তার অভিনয় জীবনের প্রারম্ভে রয়েছে নগরকেন্দ্রিক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিমণ্ডলে দীর্ঘ এগারো বছরের আধুনিক থিয়েটার চর্চার অভিজ্ঞতা। আধুনিক নাট্যচর্চার জ্ঞানতাত্ত্বিক ও সাংগঠনিক পরিসরেও ছিল তার নিবিড় যোগাযোগ। তিনি বাংলাদেশের যাত্রাশিল্পে পশ্চিমবঙ্গের মুখাপেক্ষিতা থেকে বের হয়ে দেশীয় নাট্যকারদের দিয়ে নাট্যলিপি রচনার উদ্যোগ গ্রহণে যাত্রাদলের মালিক ও পরিচালকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। আজীবন তিনি দেশ ও সমাজ সংস্কারে যাত্রাশিল্পকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

আলোচক বলেন, অমলেন্দু বিশ^াস যাত্রাশিল্পের একজন কিংবদন্তি। তার অভিনয় হাজার হাজার দর্শককে আপ্লুত করেছে, সম্মোহিত করেছে। তবে তিনি নিছক একজন যাত্রাশিল্পীই ছিলেন না, তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিশেষ এক প্রপঞ্চ। এই সমাজের মধ্যে সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের যে দ্বন্দ্ব আছে তার নিরিখেই অমলেন্দু বিশ^াসকে বিচার করতে হবে। তিনি যাত্রায় অভিনয় করেছেন, যাত্রার ইতিহাস রচনা করেছেন এবং যাত্রাকে তত্ত্বায়িত করেছেন। সর্বোপরি যাত্রাকে তিনি জনগণের শিল্পভাষা হিসেবে গণ্য করেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে মিলনকান্তি দে বলেন, যাত্রাশিল্পের মানসপুত্র হিসেবে অভিহিত করা যায় অমলেন্দু বিশ^াসকে। তার শিল্প-চেতনায় ছিল লোকজ আঙ্গিকের সাথে আধুনিক নাট্যরীতির সমন্বয় ঘটানোর প্রয়াস। তার অভিনয়, যাত্রা দর্শন ও চিন্তাচেতনা গভীরতর গবেষণার দাবি রাখে।
লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শাহীন রেজা, কবি এজাজ ইউসুফী এবং কবি শোভা চৌধুরী।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি ফাতিমা তামান্না, টোকন ঠাকুর এবং রশিদ কামাল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাহবুব মুকুল এবং নূরুল হাসনাত জিলান। ছিল সেলিনা ফারজানা কেয়ার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’ এবং আলী আশরাফ আখন্দের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জিয়া সাংস্কৃতিক জোট’-এর পরিবেশনা।
আজ মঙ্গলবার বইমেলার পঁচিশতম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জুলাই অভ্যুত্থান : গ্রাফিতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মুনেম ওয়াসিফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন তাসলিমা আখতার এবং কামার আহমাদ সাইমন। সভাপতিত্ব করবেন ফারুক ওয়াসিফ।

উস্তাদ হাসান আলী খান স্মারকগ্রন্থের পাঠ উন্মোচন
উস্তাদ হাসান আলী খান স্মারকগ্রন্থের পাঠ উন্মোচন হয়েছে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলায় ঝুমঝুমি প্রকাশনীর স্টল নম্বর ১৭২-১৭৩-এর সামনের চত্বরে। দেশের বিশিষ্ট সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব শেখ সাদী খান পাঠ উন্মোচনের সূচনা করেন।
স্মারকগ্রন্থটি সম্পর্কে তিনি বলেন, তিতাস-মেঘনা-গোমতির সন্তান উস্তাদ হাসান আলী খানের সঙ্গীতজীবন নিয়ে তার সুহৃদ, শিষ্য ও শুভার্থীদের লেখায় সাজানো হয়েছে গ্রন্থটি। এক কথায় এই গ্রন্থে রয়েছে আমাদের শিকড় সংস্কৃতির অমূল্য তথ্য।
তিনি খেদের সাথে বলেন, বইমেলা কোনো বৃন্দাবন নয়; আজকাল পাঠকের চেয়ে ভ্রমণ বিলাসীদের আনাগোনাই বেশি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পণ্ডিত মিন্টুকৃষ্ণ পাল, শিল্পী বিধু চৌধুরী, শিল্পী পারভীন সুলতানা, কবি শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক, সম্পাদনা পরিষদের সদস্য রফিক সুলায়মান ও শিল্পী করিম হাসান খান। আরো উপস্থিত ছিলেন উস্তাদ হাসান আলী খানের পরিবারের সদস্যরা।
স্মারকগ্রন্থটি লিখেছেন হাসান আলী খানের ছাত্র-ছাত্রী, সুহৃদ এবং সঙ্গীতপ্রেমীরা।

বইটির সম্পাদনা পরিষদের সদস্য রফিক সুলায়মান বলেন, বইটিতে আলেখ্য অনেক তথ্য ও ঘটনা সন্নিবেশিত হয়েছে; যা বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন বলে আমার বিশ্বাস।
উস্তাদ হাসান আলী খান স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন কাজী মোমেন, করিম হাসান খান এবং রফিক সুলায়মান। স্বরলিপি প্রণয়ন করেছেন ড. পরিতোষ কুমার মণ্ডল। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ট্রিমসমার্ট। পরিবেশনায় ঝুমঝুমি প্রকাশনী। প্রচ্ছদ এঁকেছেন তানজিল হাসনাইন মঈন রনীত। উস্তাদ হাসান আলী খান ঐতিহ্যবাহী তিতাস-মেঘনা অববাহিকার সন্তান। জন্মেছিলেন সঙ্গীতের উর্বরভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের কুলাশিন গ্রামে। তার কালে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিদগ্ধ সঙ্গীতগুণী এবং শিক্ষক। তার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন ড. সনজিদা খাতুন, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, মুজিব পরদেশী, আরিফ দেওয়ান প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement