২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ শাবান ১৪৪৬
`

যারাই ভারতের তাঁবেদারি করবে ছাত্র-জনতা তাদের উৎখাত করবে : গোলাম পরওয়ার

জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন মিয়া গোলাম পরওয়ার : নয়া দিগন্ত -

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন ১৯৫২, ১৯৭১, ১৯৯০ ও ২০২৪ একসূত্রে গাঁথা, বাংলাদেশের জনগণের সব আন্দোলন সংগ্রাম ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। তিনটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনটি শাসক গোষ্ঠীর পতন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ’৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের আইয়ুব খান, ’৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানের এরশাদ এবং সবশেষে ২০২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার খুনি হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতন হয়। এই পতনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তিলাভ করে। তিনি আরো বলেন, ভারতের তাঁবেদারি যারা করবে তাদেরকে ছাত্র-জনতা উৎখাত করবে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলরুমে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত ‘ভাষা আন্দোলন থেকে গণ-অভ্যুত্থান, অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে বিপ্লব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ মানে হচ্ছে যাকে বাধা দেয়া যায় না। বাংলাদেশের জনগণ ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে সেটি বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে। দুই হাজারের অধিক মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছে। হাজার হাজার আহত-পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। তবুও ছাত্র-জনতাকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। এই গণ-অভ্যুত্থান কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, এ দেশের ছাত্র-জনতার। অনেক সত্য ইতিহাস কেন লেখা হয় না প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড কারা? এটাও কেউ কেউ ছিনতাই করার চেষ্টা করছে। অনেক বড় দল দাবি করা দলের নেতারা বলেন, এই আন্দোলনে আমরা সম্পৃক্ত নয়। আর তাদের ছাত্র সংগঠন দাবি করে তাদের নেতৃত্বে বিপ্লব হয়েছে! অথচ যারা বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছে সেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, এই গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ববরণকারী সবাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাক্ষী এই গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড কারা।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশের জনগণের দুশমন পরিচয় দিয়েছে। তারা আমাদের ভূখণ্ডকে আসামের সাথে যুক্ত করে মানচিত্র প্রকাশ করে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে। আমাদের বিজয় দিবসকে ভারতের বিজয় দিবস দাবি করে নরেন্দ্র মোদি পোস্ট করার মাধ্যমে মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনতাই করতে চেয়েছে। ভারতকে রাষ্ট্র হিসেবে আমরা শত্রু মনে করি না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের জনগণের সাথে আমাদের আগামীতেও বন্ধুত্ব হবে। বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে প্রভু নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটা আমাদের জনগণ ঠিক করবে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এ দেশে এসে সেটি ঠিক করে দেয়ার কোনো অধিকার নাই। ভারত যদি মনে করে আওয়ামী লীগের পতনের পর তারা অন্য কোন দলকে সমর্থন দিয়ে সরকারে বসিয়ে এ দেশে আবারো তাঁবেদারি করবে তবে এ দেশের ছাত্র-জনতা সেই সরকারকেও উৎখাত করে ভারতে পাঠিয়ে দেবে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল আজিজ। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। কিন্তু পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে এটাই বৈষম্য। মানুষ সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে। মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা ছিনিয়ে নিতে দেয়নি। সেই থেকে শুরু হয় মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। পরবর্তী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এই স্বাধীনতায় এ দেশের জনগণ শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ড আর পতাকা পেয়েছে। নাগরিক হিসেবে মানুষ স্বাধীনতা পায়নি। তাই নাগরিক স্বাধীনতার জন্য ছাত্র-জনতা ২০২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করে। ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মানুষ মুক্তিলাভ করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement