ফ্যাসিস্ট পতনের পর নতুন দেশ বিনির্মাণের আশা দেখা দিয়েছে : মির্জা ফখরুল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১১

ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরে নতুন করে দেশ বিনির্মাণে আশার আলো দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এই প্রত্যাশার কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে অত্যন্ত আশাবাদী আমরা সবাই। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে এবং সবশেষে ছাত্র-জনতার সমবেত প্রচেষ্টায় শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। এখন একটা আশার আলো সবাই দেখছে যে, আমরা নতুন করে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। এটার জন্য সবার আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন এবং সত্যিকার অর্থেই আমরা যেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ তৈরি করার কাজ করতে পারি।’
সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মরণোত্তর একুশে পদক প্রাপ্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার এ বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহসহ ১৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে ২০২৫ সালের একুশে পদক দিয়েছে।
মাহফুজ উল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, মাহফুজ উল্লাহর প্রতি আমাদের সম্মান দেখানো তখনই সফল হবে যদি দেশকে নিয়ে তার অরাধ্য কাজটা শেষ করতে পারি। আমাদের অনেক বয়স হয়েছে এখন এখানে নবীনেরা আছেন, তরুণরা আছেন তারা দেশকে নতুন করে চিন্তা করছেন। তারাই এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
মরহুম মাহফুজ উল্লাহকে একজন প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক সাংবাদিক অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি কালোকে কালো, সাদাকে সাদা বলতে দ্বিধা করতেন না। তর্ক-বিতর্কগুলো তিনি অত্যন্ত সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন, প্রতিপক্ষ সেখানে নিঃসন্দেহে পরাজিত হতো। মাহফুজ উল্লাহকে আমি মিস করি, সত্যিই মিস করি। তাকে হারানোয় সত্যিকার অর্থে আমাদের বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। খুশি হয়েছি যে, তাকে অত্যন্ত মরণোত্তর রিকগনেশন দেয়া হয়েছে। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আর আসুন, আমরা সবাই মাহফুজ উল্লাহর আত্মার জন্য দোয়া করি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ লড়াই করেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে সামনের সারিতে তার ভূমিকা ছিল। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের ভিত্তি গড়তে ভূমিকা রেখেছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মাহফুজ উল্লাহ একসাথে একজন লেখক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে তিনি হচ্ছেন কনটেমপোরারি হিস্টোরিক্যাল।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, মাহফুজ উল্লাহকে আমার ব্যক্তিগত হিরো বলতে পারি। ওনার বেশ কিছু বই আমি পড়েছি। তাকে বাংলাদেশের পরিবেশ সাংবাদিকতার অগ্রদূত বলা যায়। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমে মানুষ, সাংবাদিকরা সত্য কথা ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি সত্য কথা বলতেন। ওটাই মনে হতো যে ইটস অ্যান অ্যাক্ট অব ডিফাইন। ভয়াবহ রকমের স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তিনি কথা বলছেন। সে জন্য তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বছরের পর বছর অনেকে সাংবাদিক নেতা হয়েছেন। সাংবাদিকদের কল্যাণে তারা কতটা কাজ করেছেন জাতি তা দেখেছে। এসব সাংবাদিক ক্ষমতাসীনদের সাথে থেকে আয়-রোজগারের চেষ্টা করেছেন। সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার।
অনুষ্ঠানে একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্র সাংবাদিক শহিদুল আলম ও শিল্পী রোকেয়া সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।
মাহফুজ উল্লাহর বড় ভাই অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাবাব রায়হান কবীরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, নজমুল হক নান্নু, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, ওয়াশিংটনের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তুজা, সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী ও ডা: বজলুল গণি ভুঁইয়া, মরহুম সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর ছেলে মোস্তফা হাবিব বক্তব্য রাখেন।