২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`
গ্রন্থমেলায় প্রাণের উৎসব

লেখক পাঠক ঢল নামবে আজ

-


অমর একুশে আজ। মেলার সবচেয়ে কাক্সিক্ষত দিন। প্রতি বছরের মতো আজো মেলায় লেখক ও পাঠক ঢল নামবে। সকাল থেকে শহীদ মিনার হয়ে মানুষের স্রোত থাকবে মেলা প্রাঙ্গণে। এ নিয়ে বিক্রেতাদের মধ্যেই উৎসাহ কাজ করছে। এতদিন যত বিক্রি হয়নি আজ তা হবে। প্রত্যাশিত বিক্রিতে মিলবে লাভ ক্ষতির হিসাব।
প্রকাশকরা জানান, মেলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত যা বিক্রি হয়েছে তা প্রত্যাশিত নয়। প্রতি বছরই তারা এমন দিনের অপেক্ষায় থাকেন। শুরুর দিন থেকে যা বিক্রি হয় তার কয়েকগুণ বেশি বিক্রি হয় ফেব্রুয়ারির এই দিনে। এ ছাড়া মেলার স্টলে স্টলে আজ দেখা মিলবে প্রিয় লেখকদের। পাঠক তাদের পছন্দের লেখকের বই কিনে অটোগ্রাফের জন্য লাইন ধরবেন স্টলের সামনে। দিন শেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন বিক্রেতারা।

তবে এতদিন মেলায় লোকসমাগম কিছু কম থাকলেও নতুন বই প্রকাশের কমতি নেই। নতুন বইয়ের মধ্যে শাপলা প্রকাশ এনেছে নির্মলেন্দু গুণের কাব্যোপন্যাস আই লাভ ইউ, জাগৃতি এনেছে সেলিম জাহানের অর্থনীতিবিষয়ক বাংলাদেশের অর্থনীতি : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, প্রথমা এনেছে প্রদীপ দেবের বিজ্ঞানবিষয়ক জামাল স্যারের মহাবিশ্ব : প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলামের বৈজ্ঞানিক জীবন। ইউপিএল এনেছে মো: কাওসার হাসান সম্পাদিত ৩৬ জুলাই : গ্রাফিতির ভাষায় চব্বিশের অভ্যুত্থান। কাঠবিড়ালী এনেছে মাসুম বিল্লাহর কিশোর উপন্যাস গুড মর্নিং পাপা, আদর্শ এনেছে ফাহমিদুল হকের রাজনীতিবিষয়ক জুলাই জাগরণের দিনলিপি, অনুপম এনেছে মোরশেদ শফিউল হাসানের রোজনামচা, দহনকালের দিনলিপি: হাওয়ার গায়ে লেখাজোখা, কথাপ্রকাশ এনেছে খসরু পারভেজের প্রবন্ধ জানা অজানা মধুসূদন, সংবেদ এনেছে মাহমুদ শরীফের উপন্যাস অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ, বাঙ্গালা গবেষণা এনেছে আজাদ খান ভাসানীর রাজনীতিবিষয়ক মওলানা ভাসানীর জেলজীবন, আহমদ পাবলিশিং হাউস এনেছে শহিদুল ইসলামের প্রবন্ধ সাহিত্য ও জীবন। আগামী এনেছে জিনাত আরার কবিতা জীবন যখন নিউইয়র্কে, ঐতিহ্য এনেছে জিয়া হাশানের প্রিয় ১৫ গল্প এবং হেলাল হাফিজের ৫০ প্রেমের কবিতা, অন্যপ্রকাশ এনেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের উপন্যাস ওয়েটিং রুম।

অন্য দিকে গতকাল অমর একুশে বইমেলা ২০তম দিনে নতুন বই এসেছে ১১২টি। এর মধ্যে ঐতিহ্য নিয়ে এসেছে পৃথিবীর পথে পথে। লিটল ফাইটার স্লিপিং উইথ আর্মস (দ্বিতীয় পর্ব)। লেখক মনজুরুল হক। জীর্ণ পাতা ঝরার বেলায়। লেখক দিলারা জামান। বৃহস্পতিবারে লিখে রাখা সুইসাইড নোটস এর লেখক নাইম আহমেদ এবং ‘লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে আমি আর নিশাথ। বইটির লেখক মো: জহুরুল হক। এটি প্রকাশ করেছে কলি প্রকাশনী।
গতকাল বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘উপন্যাস, ঔপন্যাসিক ও রশীদ করীমের উপন্যাসবীক্ষা : কয়েকটি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হামীম কামরুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অনিরুদ্ধ কাহালি এবং সাখাওয়াত টিপু। সভাপতিত্ব করেন সুব্রত বড়–য়া।

প্রাবন্ধিক বলেন, রশীদ করীমের সাহিত্যকর্মের মধ্যে উপন্যাসের সংখ্যাই সর্বাধিক, সেই অর্থে তিনি প্রথমত ও প্রধানত একজন ঔপন্যাসিক। তার উপন্যাসে মধ্যবিত্ত মানসের দ্বিধান্বিত ও অন্তর্দ্বন্দ্বময় আত্মস্বরূপের উন্মোচন ঘটেছে। ঔপন্যাসিক হিসেবে রশীদ করীম নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবণতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। বাঙালির ইতিহাস, সমাজ ও আচার-আচরণের বিবর্তন-পরিবর্তন বিষয়েও তিনি লিখেছেন। তবে সবই লিখেছেন একজন ঔপন্যাসিকের জায়গা থেকে। উপন্যাস পাঠের ভেতর দিয়ে আনন্দটাকেই তিনি প্রধান মনে করেছেন। এজন্য পরিশ্রমী পাঠকের চেয়ে রসিক পাঠকের দিকেই রশীদ করীমের পক্ষপাত। তিনি সজীব-স্বচ্ছ চোখে নিজে কী দেখতে পাচ্ছেন, সেটিই তার দৃষ্টিভঙ্গির সারকথা।

আলোচকদ্বয় বলেন, রশীদ করীম তার জীবদ্দশায় ব্রিটিশ পর্ব, পাকিস্তান পর্ব ও বাংলাদেশ পর্ব প্রত্যক্ষ করেছেন, ফলে তার দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ব্যাপক। আধুনিক সমাজে ব্যক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো রশীদ করীমের উপন্যাসে প্রবলভাবে উপস্থিত হয়েছে। তিনি সমাজকে অনেক গভীরভাবে বিচার করেছেন। তার উপন্যাসের চরিত্রগুলো পাঠককে মোহবিষ্ট করে এবং পাঠক সহজেই নিজেকে সেইসব চরিত্রের সাথে একাত্ম করতে পারেন।
সভাপতির বক্তব্যে সুব্রত বড়–য়া বলেন, রশীদ করীম আমাদের বাংলা সাহিত্যের একজন সার্থক ঔপন্যাসিক। তার সাহিত্য ও সাহিত্যচিন্তা নিয়ে গভীর গবেষণা প্রয়োজন। নতুন প্রজন্মের পাঠকদের সাথে রশীদ করীমের সাহিত্যকর্মের পরিচয় করিয়ে দেয়া আমাদের দায়িত্ব। লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি ও গদ্যকার শাহাবুদ্দীন নাগরী এবং কবি ইমরান মাহফুজ।

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। রাত সাড়ে ১২টায় একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। বইমেলা শুরু হবে সকাল ৭টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি হাসান হাফিজ। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বক্তৃতা। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। অমর একুশে বক্তৃতা প্রদান করবেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।


আরো সংবাদ



premium cement