আনন্দমিছিলে গিয়ে জীবনপ্রদীপ নিভে গেল হাফেজ আনাস বিল্লাহর
- বাসস
- ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৯
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে বন্ধুদের সাথে আনন্দমিছিলে যায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরের মাদরাসাছাত্র হাফেজ আনাস বিল্লাহ। আর এই আনন্দমিছিল যে তার কাল হয়ে দাঁড়াবে তা সে স্বপ্নেও বুঝতে পারেনি। বুঝতে পারেনি যে, তার জীবনপ্রদীপ এভাবে নিভে যাবে। আনাস বিল্লাহর ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেষ করে সে বিদেশ গিয়ে ভালো একটি চাকরি করবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ওই আনন্দমিছিলে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ছোড়া বুলেটে তার সে ইচ্ছা আর পূরণ হলো না। হাফেজ আনাস বিল্লাহ (১৭) আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের মো: আব্দুল আরেজ (৫০)-এর মেজো ছেলে এবং স্থানীয় কাকবাশিয়া মদিনাতুল উলুম ফাজিল মাদরাসার দাখিল পরীক্ষার্থী। তার মায়ের নাম আনেয়ারা খাতুন (৪০। তিনি একজন গৃহিণী। এই দম্পতির বড় ছেলের নাম আরিফ বিল্লাহ (২৫)। সে প্রতাপনগর এবিএস ফাজিল মাদরাসার প্রথম বর্ষের ছাত্র। আর ছোট ছেলের নাম আহসান উল্লাহ। তার বয়স মাত্র সাড়ে চার বছর।
হাফেজ আনাস বিল্লাহর বড় ভাই আরিফ বিল্লাহ জানান, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে প্রতাপনগরের ছাত্র-জনতা স্থানীয় তালতলা বাজারে একটি আনন্দমিছিল বের করে। এই মিছিলে আমার ভাইসহ তার বন্ধুরা যোগ দেয়।
তিনি বলেন, মিছিলটি ফুলতলা বাজার ও কল্যাণপুর বাজার হয়ে নাকনা গ্রামের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বাড়ির সামনে গেলে সে-সহ আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী ওই শান্তিপূর্ণ আনন্দমিছিলকে লক্ষ্য মুহুর্মুুহু গুলি ছোড়ে। এতে আমার ভাই আনাস বিল্লাহসহ কয়েকজন আহত ও নিহত হন। আমার ভাইয়ের শরীরে মোট তিনটা গুলি লাগে।
তিনি আরো বলেন, এর মধ্যে একটি গুলি তার তলপেটের ভেতরে ঢুকে কিডনিতে লাগে। আরেকটি গুলি তার বুকে ও অপরটি তার ডান হাতে লাগে। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। একপর্যায়ে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আমার এই ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর শোক আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমার বৃদ্ধ মা-বাবা এখনো তার জন্য পথ চেয়ে বসে থাকে।
তিনি বলেন, আমার বাবা একজন দরিদ্র মানুষ। স্থানীয় তালতলা বাজারে আমার বাবার একটি হাঁড়িপাতিলের দোকান আছে। সেটি চালিয়ে আমাদের পরিবারের সবারই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।
তিনি এ সময় আরো বলেন, আমার ভাই মারা যাওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই লাখ ও ঢাকার নারী ও শিশুবিষয়ক অধিদফতর থেকে ৫০ হাজার টাকার অনুদান পেয়েছি। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি পাঁচ লাখ টাকার একটি অনুদান পেয়েছি।
আনাস বিল্লাহর মা আনোয়ারা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেজো ছেলে হাফেজ আনাস বিল্লাহ এভাবে আমাদেরকে ছেড়ে দুনিয়া থেকে চলে যাবে তা আমি কখনো ভাবতে পারিনি। ছেলে আমার দুপুরবেলা বাড়ি থেকে ভাত খেয়ে দোকানে গেল। আমি তাকে যতœ করে খাওয়াদাওয়া করালাম। এরপর সে দোকানে চলে গেল। তারপর কিভাবে কী হয়ে গেল জানি না।
আমার ছেলে মারা গেছে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতেই পারছি না। আমি এখনো পথ চেয়ে বসে থাকি আমার ছেলে ফিরে আসবে বলে। তিনি তার ছেলের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার দাবি করেন।
আনাসের পিতা আব্দুল আরেজ ছেলে হারানোর বর্ণনা দিতে গিয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকেন এবং বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে যারা গুলি করে হত্যা করেছে তাদের বিচার মহান আল্লাহ পাকের ওপর ছেড়ে দিলাম।