পিরোজপুরে এলজিইডির ১৭ প্রকল্পের ১৬৪৭ কোটি টাকা তসরুপ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫
পিরোজপুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ১৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে গত চার বছরে এক হাজার ছয় শ’ সাতচল্লিশ কোটি আটচল্লিশ লাখ টাকার অনিয়ম হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক এমপি মহিউদ্দিন মহারাজ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্যসচিব মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ প্রকৌশলীরা মিলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এ টাকা তসরুপ করেছেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গতকাল ডিএসসিসি নগর ভবনের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার হাওলাদারের (পিআরএল ভোগরত; সাবেক কর্মস্থল পিরোজপুর) বিরুদ্ধে আনীত ঘুষ বাণিজ্য, সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উদ্যোগে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং মতামত প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। কমিটিগুলো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে পিরোজপুর জেলায় বিগত ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গৃহীত ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছেন।
উপদেষ্টা জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাস্তবায়নাধীন ১৭টি প্রকল্পের মোট স্কিম সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮১০টি। যার চুক্তিমূল্য ছিল তিন হাজার ৫৫৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ছাড় করা হয় তিন হাজার ১৭৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। তবে কাজ করা হয় মাত্র এক হাজার ৫২৯ কোটি ১০ লাখ টাকার। সম্পাদিত কাজের হিসাব অনুযায়ী প্রায় এক হাজার ৬৪৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তসরুপ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবেদনে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মে জড়িত ১১ জন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেনÑ আব্দুস সাত্তার হাওলাদার, নির্বাহী প্রকৌশলী (পিআরএল ভোগরত), নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়, পিরোজপুর; আরিফুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়, পিরোজপুর; এ কে এম মোজাম্মেল হক খান, হিসাবরক্ষক, নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়, পিরোজপুর, এলজিইডি; মোহাম্মদ জাকির হোসেন মিয়া, সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী, নাজিরপুর উপজেলা; মো: বদরুল আলম, উপজেলা প্রকৌশলী, ভাণ্ডারিয়া উপজেলা; রিপন হালদার, সার্ভেয়ার, নেছারাবাদ উপজেলা, এলজিইডি; মোহাম্মদ আদনান আখতারুল আজম, প্রকল্প পরিচালক; সুশান্ত রঞ্জন রায় (পিআরএল ভোগরত), প্রকল্প পরিচালক; সৈয়দ আহম্মদ আলী (পিআরএল ভোগরত), প্রকল্প পরিচালক; কাজী মিজানুর রহমান (পিআরএল ভোগরত), প্রকল্প পরিচালক।
এ ছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। দাখিলকৃত তিনটি প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িতরা হলেন, পিরোজপুর-১ (নাজিরপুর, পিরোজপুর ও ইন্দুরকানী) আসনের সাবেক এমপি শ ম রেজাউল করিম, পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ, সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম, সাবেক নাজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নুরে আলম শাহীন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্যসচিব মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
উপদেষ্টা জানান, প্রভাবশালী ঠিকাদার ইএফটিই-ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড, সিমরান মায়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (জেভি), পিরোজপুরের মেসার্স এইচ এস ইঞ্জিনিয়ার্স, বরিশালের রূপালী কন্সট্রাকশন, ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স, চিটাগাং ইত্যাদি কোম্পানি এসব কাজ করেছে এবং সমন্বিত বাজেট ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি (আইবাস++) সিস্টেমে অবৈধভাবে বিল পরিশোধে পিরোজপুর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার ও তার কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যক্ষভাবে জড়িত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পিআরএল ভোগরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সকল সরকারি পাওনা স্থগিত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তি, বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুরোধ করা হয়েছে। অনিয়মের সাথে জড়িত পিরোজপুর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারের কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রককে (সিএজি) অনুরোধ করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা