পশ্চিম তীরে ইসরাইলি তাণ্ডবে ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫
এক মাসেই ৭ সাংবাদিককে হত্যা
পশ্চিম তীর অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইল
যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজায় ৪ ফিলিস্তিনি নিহত
নিজেরাই গাজা পুনর্নির্মাণ করবেন ফিলিস্তিনিরা
ইসরাইলি তাণ্ডবে অধিকৃত পশ্চিম তীরে কমপক্ষে ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দাবি করছে যে তারা ফিলিস্তিনি যোদ্ধা হামাসকে লক্ষ্য করে এ অভিযান পরিচালনা করছে। আলজাজিরা জানায়, তবে ইসরাইলি হামলায় হামাসের চাইতে বেসামরিক নাগরিকরাই বিপর্যস্ত। কারণ সেখানে প্রচুর বেসামরিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী সাজোয়া যানবাহনসহ জেনিনে উদ্বাস্তু শিবিরে প্রবেশ করে এবং তারা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও অবকাঠামো ধ্বংস করে। তারা অধিকৃত পশ্চিম তীরের প্রায় পাঁচটি শহরে হামলা করে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মতে, গাজায় যুদ্ধবিরতির কারণে এখন তারা পশ্চিম তীরে মনোযোগ দিতে পারছে। সেখানে বড় আক্রমণ করার মতো সামরিক সক্ষমতাও এখন তাদের রয়েছে। তবে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকরা বলছেন তাদের জোর করে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। গত ১৬ মাস ধরে গাজায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী যে নীতিগুলো অনুসরণ করে আসছে, তারই সেটিরই প্রতিফলন ঘটছে অধিকৃত পশ্চিম তীরেও।
এক মাসেই ৭ সাংবাদিককে হত্যা : গাজায় এক মাসেই সাত ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা করেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সিন্ডিকেট (পিজেএস) মিডিয়া কর্মীদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের গুরুতর এবং অব্যাহত হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গত মাসে গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে সাত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হয়েছে। খবর আলজাজিরার। দখলদার বাহিনীর হামলায় নিহত সাংবাদিকরা হলেন, ওমর আল-দিরাবি, সায়েদ আবু নাবহান, আহলাম আল-তালুলি, মোহাম্মদ বাশির আল-তালমিস, আকেল সালেহ, আহমদ আল-শিয়াহ এবং আহমদ হিসাম আবু আল রাস। পিজেএস জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী গত মাসে এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের পরিবারের ৯ সদস্যকে হত্যা করেছে এবং তাদের ছয়জনের বাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে।
পশ্চিম তীর অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইল : উত্তর-পশ্চিম তীরের নাবলুস শহর থেকে ব্যাংকার আবদুল্লাহ ফৌজি ভোর ৪টায় বাড়ি থেকে বের হন ৮টার মধ্যে তার কাজে পৌঁছানোর জন্য। তবে তিনি প্রায়ই দেরি করে ফেলেন। তবে ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর আগে পরিস্থিতি এমন ছিল না। ইসরাইলে হামাসের আক্রমণের আগ পর্যন্ত তার যাতায়াতের সময় ছিল এক ঘণ্টা। তবে এর পরে উপত্যকায় ইসরাইলি হামলা শুরুর পর পাল্টে যায় প্রেক্ষাপট।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী উত্তর-পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে। এর বাসিন্দাদের সাতটি নতুন চেকপয়েন্টের মধ্য দিয়ে সরিয়ে নিয়েছে। যার ফলে ফৌজির রাস্তায় যাওয়ার সময় দ্বিগুণ হয়েছে। এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরাইল ফিলিস্তিনি শহরগুলোর চারপাশের কড়াকড়ি আরও জোরদার করেছে। পশ্চিম তীরের ব্যবসায়িক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র রামাল্লায় ফৌজির গাড়ি চালানো খাড়া গলি এবং কৃষিজমি রাস্তা দিয়ে কমপক্ষে চার ঘণ্টার পথ জটিল হয়ে উঠেছে। ৪২ বছর বয়সী ফৌজি গত সপ্তাহে রামাল্লাহর বাইরে আতারা চেকপয়েন্ট থেকে বলেছিলেন, ‘আমরা যখন আমাদের বাড়িতে পৌঁছাচ্ছি না, তখন (সেই সময়ে) তুমি প্যারিসে উড়ে যেতে পারো।’ ইসরাইলি সেনারা এসব চেকপোস্টে একের পর এক অসংখ্য গাড়ি তল্লাশি করেছে। ফৌজি বলেছেন, ‘যাই হোক না কেন, তারা এটি সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করেছে।’ তিনি বলেছিলেন, ‘এটি আমাদের জীবনকে নরক করে তোলার জন্য সুপরিকল্পিত।’
যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজায় ৪ ফিলিস্তিনি নিহত : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গুলিতে চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি (এএ) এ খবর জানিয়েছে। বার্তা সংস্থাটি জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও রোববার গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গুলিতে চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে ভূখণ্ডটির একটি মেডিক্যাল সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, শহরের পূর্ব দিকে ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর পর তিনজনের মরদেহ গাজা শহরের ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজা শহরের পূর্বে অবস্থানরত ইসরাইলি বাহিনী শহরের কাছে কুয়েত গোলচত্বরের পূর্ব দিকে তাদের এলাকায় ফিরে যাওয়ার সময় একদল ফিলিস্তিনিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, নেটজারিম করিডোর থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার পরে ফিরে আসা ফিলিস্তিনিরা তাদের এলাকাগুলো পরীক্ষা করার চেষ্টা করছিল, ওই করিডোর উত্তর গাজাকে দক্ষিণ গাজা থেকে আলাদা করেছে। এ ছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের পূর্বে আল-কারারায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গুলিতে একজন বয়স্ক ফিলিস্তিনি নারীও নিহত হয়েছেন বলে মেডিক্যাল সূত্র জানিয়েছে। উল্লেখ্য, টানা ১৫ মাস যুদ্ধের পর গত মাসেই যুদ্ধবিরতি হয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইসরাইলি হামলা ও ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটল।
গাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আরো ৭ লাশ উদ্ধার : ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ৭ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার ২০০ জনে পৌঁছেছে। এই তথ্য জানিয়েছে আনাদোলু। বার্তা সংস্থাটি বলছে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও ৭ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজা শহরের পূর্বে অবস্থানরত ইসরাইলি বাহিনী শহরের কাছে কুয়েত গোলচত্বরের পূর্ব দিকে তাদের এলাকায় ফিরে যাওয়ার সময় একদল ফিলিস্তিনিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, নেটজারিম করিডোর থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার পরে ফিরে আসা ফিলিস্তিনিরা তাদের এলাকাগুলো পরীক্ষা করার চেষ্টা করছিল, ওই করিডোর উত্তর গাজাকে দক্ষিণ গাজা থেকে আলাদা করেছে। এ ছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের পূর্বে আল-কারারায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গুলিতে একজন বয়স্ক ফিলিস্তিনি নারীও নিহত হয়েছেন বলে মেডিক্যাল সূত্র জানায়।
নিজেরাই গাজা পুনর্নির্মাণ করবেন ফিলিস্তিনিরা : ইসরাইলের টানা ১৫ মাসের সামরিক অভিযানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকায় স্থানীয় বাসিন্দারা পুনরায় নিজেদের হোটেল ও রেস্তোরাঁ গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, গাজাকে ফিলিস্তিনি জনগণের ইতিহাস ও পরিচয়ের অংশ হিসেবেই পুনর্গঠন করা হবে। গাজার বাসিন্দা ও রেস্তোরাঁ মালিক আসাদ আবু হাসেইরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এখানে যা কিছু ধ্বংস হয়েছে, তা পুনরায় নির্মাণ করা সম্ভব। ট্রাম্প চান গাজার ইতিহাস বদলে ফেলতে, কিন্তু আমরা আরব, আমাদের ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।’ আরেক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবু হাসেইরা বলেন, ‘ট্রাম্প নতুন রেস্তোরাঁ তৈরি করতে চান, কিন্তু আমাদের রেস্তোরাঁ ও হোটেল তো আগে থেকেই ছিল! তাহলে কেন সেগুলো ধ্বংস করা হলো?’ গাজাবাসীরা দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়ে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের ভূমিতে থাকব, ধ্বংসস্তূপ থেকে আবারও গাজাকে গড়ে তুলব। আমাদের পরিচয় কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা