স্টলে নেই হাসিনা ও জাফর ইকবালের বই
- আবুল কালাম
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২১
স্টলে নেই হাসিনা-জাফর ইকবালের বই। বিক্রেতারা বলছেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে শুরু একুশে বই মেলায় ড. জাফর ইকবাল ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বই তারা বর্জন করেছেন। ফলে এবারের মেলায় কোথাও হাসিনা কিংবা জাফর ইকবালের বিক্রি হতে দেখা যায়নি। গতকাল বইমেলা ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এর সত্যতা ও কারণ জানা যায়।
প্রকাশক ও পাঠকরা বলছেন, ছাত্র-জনতার সংগ্রামে দ্বিতীয় স্বাধীনতা ফিরে পাওয়া দেশে এবারের মেলার তাৎপর্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র সংগ্রামের বীরত্বগাথা গণ-অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত স্মৃতিতে আয়োজিত একুশের গ্রন্থমেলায় যদি ফ্যাসিসদের বর্জন না করা হয় তবে সংগ্রামে শহীদ ও আহতদের সাথে প্রতারণা হবে। শেখ হাসিনা ও ড. জাফর ইকবালকে পতিত স্বৈরশাসক ফ্যাসিস আখ্যা দিয়ে তারা বলেন, এদের যেকোনো কার্যক্রমে সায় দেয়া মানে হলো তাদের স্বৈরশাসনসহ সব অন্যায়কে সমর্থন দেয়া। ফলে ছাত্র-জনতার রক্তে স্বাধীন দেশে এমনটা অসম্ভব। যার কারণে মেলায় তাদের বর্জন হয়েছে।
একজন প্রকাশক জানান, মেলা শুরুর আগেই তারা এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে এদের বই তারা বিক্রি করবেন না। যদিও এ বিষয়ে মেলা আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি কিংবা পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতি এই বইগুলো বিক্রির বিরুদ্ধে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তারপরও প্রকাশকরা ব্যক্তিগতভাবে এই বই বিক্রির বিপক্ষে ছিলেন। এর মধ্যেও তাম্রলিপি প্রকাশনী জাফর ইকবালের বই তাদের স্টলে বিক্রির জন্য প্রদর্শন করে। কিন্তু মেলায় আগত ক্রেতাদের তোপের মুখে তারা বইটি স্টল থেকে প্রত্যাহার করে। এ বিষয়ে আরো কয়েকজন প্রকাশক তাদের বই বর্জনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, যে বিল্পবের মধ্যে দেশ স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে সেই বিপ্লব ধরে রাখতে হলে ফ্যাসিবাদকে না বলতে হবে। তাই ঘৃণা থেকেই এদের বই বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ও জাফর ইকবালের বইয়ের বিষয়ে একাধিক ক্রেতা গতকাল মেলায় নয়া দিগন্তের কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া জানান। তাদের ভাষ্য, জাফর ইকবাল দেশের ছাত্র-জনতার ভয়ানক শত্রু। তিনি আন্দোলনরত ছাত্রদের তাচ্ছিল্য করেছেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মতো একটি বিশ^বিদ্যালয়কে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এমন একটা ফ্যাসিস্টের বই এ মেলায় স্থান পেলে তা ভাষার চেতনার সাথে বেঈমানি হবে। অন্য দিকে ছাত্র-জনতার রক্তে যে হাসিনার হাত রঙিন তার বইও মেলায় আসলে আন্দোলনে শহীদ ও আহত এবং দেশের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করা হবে। তাই ধিক্কার স্বরূপ এদের বই বর্জন করেছেন সর্বসাধারণ।
গতকাল ছুটির দিন থাকলেও মেলা পরিবর্তিত সময়সূচি অনুযায়ী শুরু হয়। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাজনিত কারণে বেলা ১১টার পরিবর্তে বইমেলা শুরু হয় বেলা ২টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় ছিল না পূর্বঘোষিত শিশুপ্রহর।
সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর সঙ্গীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন আবদুস সেলিম এবং মোহাম্মদ হারুন রশিদ। সভাপতিত্ব করেন খালিকুজ্জামান ইলিয়াস। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের মেলা অনেকটা সাজানো-গোছানো। পর্যাপ্ত পানি ছিটানোয় ধুলা ছিল অনেকটা কম। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ বেহাল চেহারা বহন করে চলছে। লাল-সবুজ কাপড়ে তৈরি প্যান্ডেল দেখে হতাশ হয়েছেন অনেকে। বাঁশগুলো মোড়ানো হয়নি সাদা কাপড়ে। ফলে সৌন্দর্যহানি দেখা গেছে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে।
এবারের মেলায় এসেছে বিশিষ্ট মোফাসসিরে কুরআন ইসলামী চিন্তাবিদ ড. মিজানুর রহমান আজহারির বই ‘এক নজরে কুরআন’। বইটির প্রকাশক সত্যায়ন প্রকাশন। বিশিষ্ট লেখক আলী রিয়াজ এর বই আমিই রাষ্ট্র : বাংলাদেশে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র। বইটির প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন। ঐতিহ্য নিয়ে এসেছে ইহুদি জাতির আদ্যন্ত ও অগ্নিগর্ভ মধ্যপ্রাচ্য এর লেখক এ এন এম নূরুল হক। রয়েল পাবলিকেসন্স নিয়ে এসেছে বই ‘অবেলায় বেলা’। এর লেখক ডা: সাবরিনা হুসেন মিষ্টি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা