০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১, ৪ শাবান ১৪৪৬
`

পূর্বাচল প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হলো দ্বিগুণ

-

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নতুন শহর প্রকল্প পূর্বাচলের ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সব প্রকল্পের মতোই পূর্বাচল প্রকল্পেও প্রথমে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল শেষ পর্যন্ত তা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি ১৯৯৫ সালে শুরু হলেও পরে কয়েকবার সময় বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের মধ্যে সমাপ্ত হবে বলে ব্যয় ধরা হয়; কিন্তু ২০২২ সালেও রাজউক কাজটি শেষ করতে পারেনি। আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সাল নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রকল্পটি সমাপ্ত করার জন্য। এখানেও রাজউক ব্যর্থ, এই ডেটলাইনের মধ্যেও প্রকল্পটি শেষ করতে পারেনি। অবশেষে চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটি শেষ করবে বলে পূর্বাচল প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।

২০০৫ সালে বিগত জোট সরকারের সময় প্রকল্পটি শেষ করতে তিন হাজার ৩১১ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি ধরা হয়েছিল; কিন্তু প্রকল্পটি ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর দ্বিতীয় সংশোধনীতে এই ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ছয় হাজার ৪৪৮ কোটি ৫১ লাখ ৯ হাজার টাকা। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে তিন হাজার ১৩৬ কোটি ৭৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকা বেশি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পটি আরো দুই বছর বাড়ানোর কারণে তাতে আরো ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়। অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পূর্বাচল প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় তিন হাজার ৪৩৬ কোটি ৭৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
প্রকল্পে কিছু ব্যয় দেখে যে কারো মনে প্রশ্নের উদয় হতে পারে। যেমন পূর্বাচলের প্রায় ছয় হাজার ২১৩ একরের ভূমি উন্নয়নে ৭৫৯ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণে ৫৪২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বেশি, ৪৩ কিলোমিটার লেক উন্নয়নে ৩৭৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এর সাথে অবশ্য ৮৬ কিলোমিটার ৩৬৫ কিলোমিটার বাইসাইকেলের জন্য এবং ওয়াকওয়ে উন্নয়ন রয়েছে। ৫৬৫ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে ব্যয় এক হাজার ৯১ কোটি ৭১ লাখ টাকার বেশি, বাউন্ডারি পিলার দেয়া নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার বেশি, ৫২টি ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬৪৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বেশি, স্কুল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বেশি।

প্রকল্পটিতে আরো অনেক কিছু ব্যয় করার বাকি রয়েছে। ইউটিলিটি সার্ভিসের জন্য কোনো ব্যয় ধরা হয়নি, পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য কোনো ব্যয় ধরা হয়নি। বর্তমানে মাথার ওপর দিয়েই বিদ্যুতের লাইন টানা হয়েছে। ভবিষ্যতে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ স্থাপনের জন্য জায়গা রাখা হয়েছে। রাজউকের নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্পের সব ব্যয় করা হচ্ছে। প্রকল্পটি ঢাকা জেলার খিলক্ষেত, নারায়গঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা এবং গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানায় অবস্থিত। বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পাশে অবস্থিত এই প্রকল্পে ২৬ হাজার আবাসিক প্লটের পাশাপাশি ৬২ হাজার এপার্টমেন্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। মোট ভূমির ৩৮.৭৪ শতাংশ ভূমি ব্যবহার করা হবে আবাসিক প্লটের জন্য, ২৫.৯ শতাংশ ভূমি ব্যবহার করা হবে রাস্তা নির্মাণের জন্য, ৬.৪১ শতাংশ ভূমি ব্যবহার করে প্রকল্পের প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কাজে, ৩.২ শতাংশ থাকবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য, প্রকল্পের মাত্র ৬.৬ শতাংশ ভূমি রাখা হয়েছে সবুজ বনানী ও খোলা ময়দান, লেকের জন্য থাকবে ৭.১ শতাংশ, খেলাধুলা করার জন্য ২.৫ শতাংশ ভূমি থাকবে (৩৭.৩৯ একর ভূমিতে ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট কাউন্সিলকে বরাদ্দ করা হয়েছে)। পূর্বাচলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্য ও সামাজিক কাজে ব্যবহারের জন্য ভূমি বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট ভূমির ৬ শতাংশ। রূপগঞ্জে সাড়ে চার হাজার একর এবং কালীগঞ্জে পূর্বাচল প্রকল্পের দেড় হাজার একর জায়গা রয়েছে, বাকিটা ঢাকা জেলার খিলক্ষেত এলাকায় রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement