বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অসাধারণ অগ্রগতি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৭
বিশ্বব্যাপী ডাক সেবার মানোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। সম্প্রতি ইউনিভার্সেল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ) প্রকাশিত ‘ডাক উন্নয়ন সূচক-২০২৪’ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বর্তমানে ৬৮তম র্যাংকিংয়ে রয়েছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ১১৯তম। ফলে এগিয়েছে ৫১ ধাপ।
জানা যায়, ২০১৯ সালে যেখানে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অবস্থান ছিল ১৯৪তম, সেখানে ২০২৪ সালে এটি এক লাফে ৬৮তম স্থানে উঠে এসেছে, যা বিশ্বমঞ্চে বিশেষভাবে প্রশংসা অর্জন করেছে। এই অগ্রগতি ডাক বিভাগের আধুনিকায়ন, ডিজিটালাইজেশন, ইএমএস ও পজ-মেশিন ব্যবহার এবং লজিস্টিক ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলাফল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ চিঠিপত্র আদান-প্রদানের পাশাপাশি বর্তমানে ডিজিটাল ও ফিনটেক সেবার এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। অ্যানালগ চিঠি মাপার যন্ত্রে ওজন নেয়ার পরিবর্তে এখন জিপিওতে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক মেশিন, যেখানে মেশিনের এক পাশে চিঠি প্রবেশ করালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিঠির ওজন হয়, ওজন অনুযায়ী ডাক-মাশুল নির্ধারণ হয়, বার-কোডের স্টিকার লেগে যায় মেশিন থেকেই। আর এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে মাত্র ১০ সেকেন্ড। ব্রিটিশ সময়ের সেই পুরাতন ডাকঘরে আজ গতি লেগেছে আধুনিক পজ মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে। পোস্টম্যানের কাছে এখন পজ মেশিন থাকায় চিঠি অথবা অন্যান্য ডাক পণ্য পৌঁছে দেয়ার পরেই ডাটা স্ক্যান করা হয়, যার মাধ্যমে গ্রাহক তার পণ্য ইস্যু করা থেকে শুরু করে রিসিভ করা পর্যন্ত ট্রেস এবং ট্র্যাক করতে পারছে। ডাক বিভাগের চিলার চেম্বার সার্ভিসের মাধ্যমে চিটাগং থেকে রান্না করা মেজবানি গোশত ঢাকায় পাঠানো অথবা দেশের উত্তরবঙ্গ থেকে কৃষিজ পণ্য ঢাকায় পৌঁছে যায় খুব সহজেই। তেজগাঁয়ে রয়েছে সুবিশাল মেইল প্রসেসিং সেন্টারের, প্রায় ত্রিশ হাজার স্কয়ার ফিটের পুরোটা সেন্টার এক ব্যস্ত ডাক-হাব। ভবিষ্যতে পুরো দেশের বিশাল এই ডাকসেবা আরো ত্বরিত করতে নেয়া হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, ১৪টি শহরে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক মেইল প্রসেসিং সেন্টার। বর্তমানে গ্রাহকের ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ভূমি পর্চাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় পার্সেল ডাক সেবার মাধ্যমে।
বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক পার্সেল পাঠানো কতটা ব্যয়সাশ্রয়ী : বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক পার্সেল পাঠানোর জন্য বেশ কয়েকটি বেসরকারি কুরিয়ার কোম্পানিও কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এসব কুরিয়ারের মাধ্যমে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্যভাবে পার্সেল পাঠানো গেলেও, খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে একটি গড় ওজনের (এক কেজি) পার্সেল যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে পাঠাতে ইএমএস এর মাধ্যমে খরচ পড়তে পারে আনুমানিক ২,০০০-৩,৫০০ টাকা, যেখানে ডিএইচএল বা ফেডিক্সের মাধ্যমে একই পার্সেল পাঠাতে প্রায় ৪,০০০-১০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। সাধারণ পোস্টাল সার্ভিস ব্যবহার করলে এই খরচ আরো কমে যায়। তবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো ডেলিভারির সময় এবং ট্র্যাকিং সুবিধার সীমাবদ্ধতা। ইএমএস ট্র্যাকিং সুবিধা দিলেও সাধারণ ডাক বা রেজিস্টার্ড পার্সেল সেবার ক্ষেত্রে ট্র্যাকিং সুবিধা সীমিত।
ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক এস এম শাহাব উদ্দীন বলেন, অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে পণ্য পাঠানোর জন্য ডাক বিভাগের সেবা ব্যবহার করেন, কারণ এটি তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। দেশের ই-কমার্স খাতের বিস্তারের সাথে তাল মিলিয়ে ডাক বিভাগ ‘ই-কমার্স পার্সেল ডেলিভারি সার্ভিস’ চালু করেছে। এর মাধ্যমে কুরিয়ার সার্ভিসের তুলনায় কম খরচে দ্রুত পণ্য পৌঁছে দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে, ট্র্যাকিং সুবিধার জন্য মানুষ এখন তার পার্সেলের অবস্থান সম্পর্কে অবগত থাকতে পারে সবসময়ই। সরকার যদি ডাক বিভাগের আধুনিকীকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে নজর দেয়, তবে এটি বাণিজ্যিক রফতানিকারকদের জন্যও একটি কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।
‘২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের পরে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা ডাক অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভায় বলেন, ডাক অধিদফতর একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। তারা অনেক কাজ করছে কিন্তু মানুষ সে বিষয়গুলো জানে না। দেশের মানুষকে ডাক অধিদফতরের কাজ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে, এটি মানুষের আস্থার জায়গা। ডাক বিভাগকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করার কথা ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশ ডাক শুধুমাত্র দেশের মধ্যে নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা