২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১, ২৭ রজব ১৪৪৬
`

শিক্ষা অফিসের কারসাজিতে মিলছে খোলাবাজারে বিনামূল্যের পাঠ্যবই

-


প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ের চাহিদা নিয়ে কারসাজি চলছে। এর সাথে সরাসরি জড়িত বিভিন্ন জেলা-উপজেলাপর্যায়ের শিক্ষা অফিস। ফলে একটি জেলা বা উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি দেখিয়ে বইয়ের চাহিদাও বাড়িয়ে দেখানো হয়। এই অতিরিক্ত বই গোপনে কালোবাজারে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি অসাধু চক্র। সম্প্রতি দেশের কয়েকটি জেলা-উপজেলায় বিনামূল্যের বই জব্দের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। ইদানীং ঢাকার বাংলাবাজার এবং নীলক্ষেতেও চড়া দামে হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে বিনামূল্যের পাঠ্যবই। গত কয়েক দিনে অভিযান চালিয়ে বাংলাবাজারের একাধিক দোকান ও গোডাউন থেকেও বিপুলসংখ্যক বিনামূল্যের পাঠ্যবই জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খাবাহিনী।

এ দিকে সম্প্রতি ঢাকার বাইরে শেরপুরে অভিযান চালিয়ে উপজেলার ধাতিয়াপাড়া এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বিতরণের প্রায় ১০ হাজার বই জব্দ করেছে পুলিশ। এগুলোর মধ্যে মাধ্যমিকের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীর ৯ হাজার বই ছিল। এর আগে গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর বাংলাবাজারে অভিযান চালিয়ে পাঁচ হাজার বই জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে দু’টি প্রিন্টার্সকে জরিমানা করে সতর্ক করা হয়। ওই দিন অভিযানে বাংলাবাজার বই মার্কেটের দু’টি দোকান ও একটি গোডাউনে সরকারি বই পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর বইয়ের ছাপার মান ও কাগজের মানে কোনো প্রকার ছাড় দেয়নি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ফলে স্কুলগুলোতে বই পৌঁছাতে একটু ধীর গতি থাকার সুযোগে কালোবাজারে বই বিক্রি করছে একটি চক্র। প্রতি সেট বই দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগও আসছে। তবে এ বিষয়ে শুরু থেকেই বেশ তৎপর রয়েছে এনসিটিবির পরিদর্শক টিম ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছে তারা। বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই স্কুলে-স্কুলে পৌঁছানোর আগেই বাজার ও লাইব্রেরিতে পাওয়া যাচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই খোলাবাজারে বিক্রি ও মজুদকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে তারা। সেই সাথে তাদের কাছে রক্ষিত দুই ট্রাক বইও জব্দ করা হয়েছে। একশ্রেণির অসাধু চক্র বর্তমান সরকারের বই বিতরণ প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে ও আর্থিকভাবে লাভবান হতেই অবৈধ মজুদদারির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রয় করছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর ডিবির (দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করে থাকে। বছরের শুরুতে নতুন বই পেয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে একটি অসাধু চক্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের পুস্তক অবৈধ মজুদদারির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রয় করছে এ রকম তথ্য পাওয়ার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় এবং এই চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে নিরলসভাবে কাজ শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে বুধবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণের বই খোলাবাজারে বিক্রয় ও মজুদদারি চক্রের দুই সক্রিয় সদস্যকে আটকসহ দুই ট্রাক বই জব্দ করেছে ডিবি।
তিনি বলেন, গত বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সূত্রাপুরের বাংলাবাজার ইস্পাহানি গলির বিভিন্ন গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে আটক করে ডিবি-লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনাল টিম। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ১০ হাজার সরকারি বই জব্দ করা হয়।

সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ জানতে পারে একটি অসাধু চক্র বাংলাবাজারের ইস্পাহানি গলিতে বিভিন্ন গোডাউনে প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি পাঠ্যবই বিক্রয়ের উদ্দেশে মজুদ করেছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ-এর প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় ১০ হাজার বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি পাঠ্যবই জব্দ করা হয় এবং ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সিরাজুল ও দেলোয়ার নামের দুইজনকে আটক করা হয়। জব্দকৃত বইয়ের আনুমানিক মূল্য আট লাখ টাকা।
এ বিষয়ে এনসিটিবি ও মুদ্রণকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বইগুলো মূলত দুই উপায়ে খোলাবাজারে যায়। এর মধ্যে প্রথমটি হলো উপজেলা শিক্ষা অফিস, দ্বিতীয়টি হলো অসাধু মালিকদের কিছু প্রেস থেকে। তবে এর আগে যতগুলো ঘটনার প্রমাণ মিলেছে বেশির ভাগ ছিল উপজেলা শিক্ষা অফিসের। শিক্ষা অফিস মূলত বেশি বইয়ের চাহিদা পাঠায়। বই বিতরণের পর অতিরিক্ত বইগুলো খোলাবাজারের চক্রের কাছে বিক্রি করে। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে ছোট ছোট প্রেস অতিরিক্ত বই ছাপিয়ে খোলাবাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার পাশের জেলা যেমনÑ সাভার উপজেলা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও পার্বত্য তিন জেলার বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষা অফিসাররা এই কাজ করেন। এসব বইয়ের চাহিদা হলো মূলত কিন্ডারগার্টেনগুলোতে। এসব প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যের বই পায় না, পেলেও সরকারি-বেসরকারি স্কুলে দেয়ার পর তাদের দেয়া হয়। বছরের শুরুতেই বই না পাওয়ায় তাদের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। এ জন্য স্কুল ও অভিভাবকরা বিনামূল্যের পাঠ্যবই খোলাবাজার থেকে কিনতে চায়। সেই সুযোগে এই চক্রটি বই খোলাবাজারে বিক্রি করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
নারায়ণগঞ্জে পোশাকশ্রমিক হত্যায় শ্রমিকলীগের ২ নেতা গ্রেফতার বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সংস্কারে সমর্থন ইইউ’র প্রথম ধাপে মালয়েশিয়া যাবেন ৭ হাজার ৯৬৪ বাংলাদেশী কর্মী ঢাবি আরবি বিভাগের দু’জন শিক্ষকের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত কেন অবৈধ হবে না : হাইকোর্ট ডেঙ্গুতে আরো ১ জনের মৃত্যু হামাসের কাছে থাকা পণবন্দীদের মধ্যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে অশউইৎজের ৮০ বছর পূর্তি : বেঁচে ফেরা ব্যক্তি ও বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণ মার্কিন সেনাবাহিনী থেকে ডিইআই বাতিলের আদেশ জারি ডোনাল্ড ট্রাম্পের উইকেটে তাসকিনের ২৫ সমালোচনার পাহাড় নিয়েও টানা তৃতীয় জয় রাজশাহীর কেরানীগঞ্জে সবজির বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের

সকল