গণ-অভ্যুত্থানের অংশীদারদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে
- ফেনী অফিস
- ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আমরা এত কর্মসূচি, এত আন্দোলন, জোটের পর জোট করেও যখন ফ্যাসিবাদের বিদায় করতে পারছিলাম না। অনেকে মনে করেছিলেন হাসিনা মরে না যাওয়া পর্যন্ত মনে হয় এ জুলুমের অবসান হবে না। দেশ-বিদেশে মানুষ আল্লাহর কাছে কেঁদেছেন। অনেকে কাবাঘর ধরে আর্তনাদ করেছেন। জুলুম-নির্যাতনে মানুষ যখন অতিষ্ঠ তখন ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। ওরা চেয়েছিল একাই এ দেশকে শাসন করবে। আল্লাহ হয়তো কোনো মজলুমের দোয়া কবুল করেছেন বলেই আসমান থেকে করুণা নাজিল করেছেন। আল্লাহর এ রহমতের শুকরিয়া জানাতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানের অংশীদারদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, এ অবাধ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে জাতির জন্য মহাদুর্যোগ নেমে আসবে। কোনোভাবেই সে-সুযোগ দেয়া যাবে না। তিনি আরো বলেন, যেহেতু বিগত সরকার আমলে জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে, আমাদের শত শত নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। প্রথম ১০ শীর্ষ নেতাকে বিনা অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। সুতরাং নতুন বাংলাদেশ গড়তে বেশি দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামীকে নিতে হবে। তিনি ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে বলেন, এ আন্দোলনে অনেকে অংশগ্রহণ করেছেন। যারা এ গণ-অভ্যুত্থানের অংশীদার ছিলেন সবাইকে এখনো একে-অন্যের বিরুদ্ধে না বলে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি। তিনি শনিবার সকালে ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। শহরের আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দলটির জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নান। প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবু তাহের মুহাম্মদ মাছুম।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবদুর রহীমের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, এ.কে.এম শামছুদ্দীন, মাওলানা আলাউদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. মো: ফখরুদ্দিন মানিক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য অ্যাডভোকেট এসএম কামাল উদ্দিন, জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক আবু ইউছুপ ও মাওলানা মাহমুদুল হক।
জামায়াত সেক্রেটারি আরো বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তি দেশকে জিম্মি করে রেখেছিল। প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ জালিম মুক্ত হয়েছে। এ গণ-অভ্যুত্থানে অন্তত ৪০ হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। আমরা স্বস্তি পেলেও তাদের চোখে এখনো পানি। অনেকে এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। শহীদের স্বজনদের আহাজারি থামেনি। তিনি বলেন, শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করতে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। দেশের মানুষ ১৪, ১৮ ও ২৪ সালে ভোট দিতে পারেনি। লক্ষ লক্ষ মামলার শিকার হয়েছে। নিরপরাধ নেতাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে। অনেককে কারাবন্দী রেখে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। খুন, গুম, ক্রসফায়ারসহ সমস্ত অপরাধের মাস্টারমাইন্ড ছিল শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে না থাকলেও তারা ঠিকই ষড়যন্ত্র করছে। এখনো দেশ ও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা একটি বৈষম্যমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে কোনো বাধাই মানব না। জামায়াতে ইসলামী নতুন প্রজন্মের কাছে জাতির দায়িত্ব তুলে দিতে চায়। অতীতে যারা অনৈক্যের বীজ বপন করেছেন এখনো কারো কারো কথায় সেই পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের গন্ধ পাওয়া যায়। সেই পুরোনো গান আর নয়। দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ নতুন বাংলাদেশের গান শুনতে চায়। তিনি বলেন, ইসলামে রয়েছে সুশাসন-সুবিচার। আল-কুরআন সেই সুশাসনের ব্যাখ্যা রয়েছে। নির্র্ভুল জ্ঞানের উৎস হচ্ছে কুরআন। কুরআনের ভিত্তিতে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।