শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু ব্যাংকের অসহযোগিতায় এলসি খুলতে পারছে না
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
কিছু ব্যাংকের অসহযোগিতার কারণে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। এলসির অভাবে কাঁচামালও আমদানি করতে পারছেন না এসব প্রতিষ্ঠান। এভাবে চলতে থাকলে আগামী রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে বলে খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি মূলধনের ঘাটতি, ডলারের সঙ্কট ও উচ্চমূল্য, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে চরমভাবে ভুগছে শিল্প কারখানাগুলো। এসব কারণে দেশের তেল-চিনিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন, রড-সিমেন্টসহ নির্মাণ শিল্পের তৈরি উপকরণ, ওষুধ, সিরামিক ও বস্ত্র খাতের মতো বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎপাদন ব্যাপকহারে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি, ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট, টাকার প্রবাহ কমানো এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিল্প বাণিজ্য পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। একই সাথে নতুন শিল্প স্থাপন আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে উদ্যোক্তারা এখন কঠিন সময়ের মুখোমুখি বলে মনে করছে ব্যবসায়ীরা।
বিভিন্ন শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। তারপর দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা। কিন্তু সেটির বাস্তবায়নে বিঘ্ন ঘটায় চতুর্মুখী সঙ্কটে পড়েছে দেশের শিল্পখাত। তারা আরো বলেন, দেশের বেশ কয়েকটি বড় বড় শিল্পগ্রুপ ইতোমধ্যে এলসি খুলতে না পেরে তাদের উৎপাদন কমিয়েছে। এমনকি কেউ কেউ কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক ও ঢাকার কয়েকটি শিল্পগ্রুপ অন্যতম।
দেশবন্ধু গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্রুপ সিএফও বশির আহমেদ বলেন, বর্তমানে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে অনেক ব্যাংকে বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকগুলোর এলসি, বিদেশী ব্যাংক (এডিডি) কনফারমেশন করছে না। ফলে সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে। সামনে রমজান মাস, দেশের ভোগ্যপণ্য চাহিদা দ্বিগুণ হবে। কিন্তু সেই অনুযায়ী এলসি খোলা এবং তার বিপরীতে মাল শিপমেন্টের অবস্থা সন্তোষজনক নয়। এর মধ্যে যোগ হয়েছে ইসলামী ব্যাংকগুলোর সাথে বড় বড় শিল্পগ্রুপের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব। অতিসম্প্রতি ইসলামী ব্যাংকগুলো বিভিন্ন শিল্পগ্রুপের কোনো এলসি না করে শুধু পূর্ববর্তী ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিয়ে আসছে।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো: আবুল হোসেন বলেন এলসি জটিলতার কারণে দেশের হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতার কারণে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, দেশে ডলার সরবরাহথও বেড়েছে। আবার রাজনৈতিক অস্থিরতাও কমে এসেছে। তবে যেসব ব্যাংক তাদের আগের আমদানি দায় পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে তাদের নতুন করে এলসি খোলার জন্য গ্যারান্টি দিচ্ছে না বিদেশী গ্যারান্টাররা। এতে আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান।