ভ্যাট বাড়ানো হলেও ওষুধের দাম বাড়তে দিতে চায় না সরকার
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২৩
নতুন করে বহু পণ্যের ভ্যাট বাড়ালেও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম বাড়তে দিতে চায় না সরকার। সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভায় ওষুধ শিল্পসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা: সায়েদুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। সভায় ইনসেপ্টা ও ডেল্টা ফার্মাসিউটিক্যাল, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), ক্যান্সার সোসাইটি, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), ইউনিসেফসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় বক্তারা বলেন, কারো মনগড়া নয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় রয়েছে এমন একটি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা করতে হবে। এটি করা গেলে দাম কমে যেতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে সরকারের এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। এটাকে শক্তিশালী করা গেলে পুরো বাজারেই প্রভাব পড়বে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেককেই কম-বেশি ওষুধ খেতে হয়। আমরা ব্যবসা করব, লাভও করব। কিন্তু মানুষের কথা সবার আগে মাথায় রাখতে হবে। ইডিসিএলকে কীভাবে শক্তিশালী করা ও পৃথিবীর অন্যতম সেরা সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়া যায় এ ব্যাপারে সবার পরামর্শ চান উপদেষ্টা।’
অধ্যাপক ডা: সায়েদুর রহমান বলেন, ‘ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এবং ওষুধ রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। একসময় আমরা ৮০ শতাংশ ওষুধ আমদানি করতাম, এখন দেড় শ’র বেশি দেশে রফতানি করি। চিকিৎসায় রোগীদের বেশির ভাগই যায় ওষুধ কিনতে। অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, এজন্য আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্য কাঠামো তৈরি করতে চাই। মানুষ যেন কম দামে মানসম্মত ওষুধ পায়, সেজন্যই আমাদের এই প্রয়াস।’
তিনি বলেন, ‘ওষুধ নীতিতে অত্যাবশ্যকীয় একটি ওষুধের তালিকা করা হয়েছিল ৯০ ভাগ মানুষ যেন কিনতে পারে। পরবর্তীতে সেটি নানাভাবে সংযোজন হয়েছে। এটাকে হালনাগাদ ও ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা আমাদের মূল লক্ষ্য। কোনো ওষুধের ক্ষেত্রে কোন মডেল আমরা বেছে নিতে পারি সেটি দেখতে হবে।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা নিয়ম তৈরি করি কিন্তু মানি না। ১৯৯৮ সালে আইন করা হলেও ২০২৩ সালে ওষুধের সাথে কসমেটিক রাখার আইন পাস হয়েছে। ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা সীমাহীন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এটিকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা যায় সেটি ভেবে দেখতে হবে। কোম্পানিগুলো যেভাবে এগোচ্ছে তাতে তারা গণশত্রুতে পরিণত হবে। যারা ব্যবসা করছেন, তাদের লাভ হচ্ছে বলেই তারা ব্যবসা করছেন।
এ সময় ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান আবদুল মুক্তাদির বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ওষুধের বাজার ৩০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে যতো কম টাকায় ওষুধ পাই, পৃথিবীর আর কোথাও নেই। বিদ্যুৎ, কর্মীদের বেতনসহ প্রতিটিতে খরচ বেড়েছে। আমরাও চাই মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ পাক। এজন্য নীতিনির্ধারকদের মূল্য নির্ধারণীটা পূর্ণাঙ্গভাবে জানা থাকতে হবে। আমরা কোনো ওষুধের দাম বাড়াতে চাই না। সমাধান করতে চাইলে কারো কথায় নয়, ভেবে চিন্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অত্যাবশ্যকীয় তালিকা অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করা যেতে পারে।
সরকারের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমরাও দেশের মঙ্গল চাই। এ ব্যাপারে ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো সরকারকে সহযোগিতা করবে।’
ক্যান্সার সোসাইটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা: গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘প্রটোকল অনুযায়ী কোন ওষুধ রোগীর জন্য উপযোগী সেটি লিখতে গিয়ে আমাদের জটিলতার মুখে পড়তে হয়। সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ রোগীর হাতে তুলে দিতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অনুসরণ করতে হবে। সাধারণ ওষুধ থেকে শুরু করে ক্যান্সারের ওষুধেরও তালিকা আছে। সরকারি হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসা আছে, সেখানে অত্যাবশ্যকীয় ২৪টি ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে রোগীদের জন্য অনেক বড় উপকার হবে। ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের প্রচার-প্রচারণায় যত খরচ করে এটিকে যদি কমিয়ে আনা যায়, কিংবা বিকল্প উপায় বের করা যায় তাহলে দাম কমবে। এ ছাড়া কোনো একটি কোম্পানির সাথে যদি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের হয় তাহলেও সঙ্কট কমে আসবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা