বিপ্লবে আহত আশরাফুলকে থাইল্যান্ড নেয়া হয়েছে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
আশরাফুল ইসলাম একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিকার থাকতে পারেননি, স্বৈরাচারের নির্মমতা তাকে ব্যথিত করে। তার সামনে গুলি করে মানুষ মেরেছে বিভিন্ন বাহিনী। স্বৈরাচারের অত্যাচার তাকে প্রতিবাদী করে তোলে। এমনিতেই একজন সিএনজিচালক হিসেবে প্রতি পদে পদে পুলিশের অত্যাচার সইতো হতো। আবার নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর নিপীড়ন নিজ চোখে দেখেই আর নিজেকে ঘরে বন্দী রাখতে পারেননি। সিএনজি রেখে নেমে পড়েন আন্দোলনে, ছাত্র-জনতার সাথে বিক্ষোভে অংশ নেন। ৫ আগস্ট তিনি ছিলেন মিরপুর ১০ নম্বারে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। বাসা থেকে বের হয়েছিলেন অটোরিকশা চালানোর কথা বলে।
আন্দোলনের একপর্যায়ে সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করে তার মাথায় একটা কিছু লাগে। সাথে সাথে রক্তে ভেসে যায় শরীর, পড়ে যান রাস্তায়। রক্তে ভেসে যায় রাস্তা। আর কিছু মনে নেই। সেখান থেকে কয়েকজন তাকে নিয়ে আসেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে। তাকে ভর্তি করা হয় ডা: মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদারের অধীনে। মুমূষুর্ অবস্থায় তাকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। অপারেশন করে মাথার খুলি খুলে রাখা হয় এবং আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। দীর্ঘ দুই মাস লাইফ সাপোর্টে থাকেন আশরাফুল।
চিকিৎসকদের এত চেষ্টার পরও আশরাফুল সুস্থ হয়ে ওঠতে পারেননি। চার হাত-পা অবশ হয়ে যায়, প্যারালাইজড অবস্থায় জীবন কাটে হাসপাতালের বেডে। পুরোপুরি জ্ঞান ফেরেনি কখনো তার। মাঝে মধ্যে চোখ মেলে তাকালেও কাউকে চিনতে পারেন না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মানুষের ওই অবস্থাটাকে ‘ভেজিটেটিভ স্টেট’ বলে।
প্যারালাইজড অবস্থায়ই মাঝে লাইফ সাপোর্ট ছাড়াই নিজের চলার অবস্থায় হয় কিন্তু পরক্ষণই আবার মেশিনের সাপোর্ট নিতে হয়। কখনো পুরোপুরি জ্ঞান ফিরেনি। এরই মধ্যে গত ২৪ ডিসেম্বর তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। দুটো ফুসফুসসেই ইনফেকশন হয়ে যায়। চিকিৎসকরা জানান, সংক্রমণের পর রক্তচাপও কমে যেতে থাকে। এমতাবস্থায় আবারো লাইফ সাপোর্ট নেয়া হয়। নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে তাকে নিয়ে তিনবার বোর্ড মিটিং হয়।
আশরাফুলের করুণ কাহিনীর মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম তার শারীরিক অবস্থার খেঁাজখবর রাখছিলেন। কিন্তু মেডিক্যাল বোর্ড তাকে বিদেশে নেয়ার সুপারিশ করেনি। আশরাফুল ইসলামের এ অবস্থায় গত ৫ জানুয়ারি আবারো মেডিক্যাল বোর্ড করার নির্দেশ দেন। বোর্ড এবার সিদ্ধান্ত দেয় বিদেশে নেয়ার। সেদিনই আশরাফুলকে বিদেশে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় আশরাফুল ও তার স্ত্রীর পাসপোর্ট ছিল না। দ্রুত তাদের পাসপোর্ট করার ব্যবস্থা করা হয়। সাথে সাথে অর্থের জোগান দেয়া এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয় দ্রুত। মাত্র তিন দিনের মধ্যে পাসপোর্টসহ অন্যান্য সব কাজ শেষ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছেন, সব ব্যবস্থা ঠিক থাকলে গতরাতেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে থাইল্যান্ডের ভেজথানি হাসপাতালে নেয়ার কথা। জানা গেছে, গতকাল রাত ৮টার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আশরাফুলকে নিয়ে থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।