১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬
`
বিডিআর বিদ্রোহ

নিরপরাধদের মুক্তির দাবিতে পদযাত্রা, পুলিশের বাধা

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের মুক্তি ও চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে সমাবেশ : নয়া দিগন্ত -


রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নিরপরাধ জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে যমুনায় (প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন) পদযাত্রা শুরু করেন পরিবারের সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। তারা শাহবাগ পর্যন্ত গেলে সেখানে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া এ পদযাত্রা শাহবাগ মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ আটকে দেয়। এতে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় মৎস্য ভবন, কাকরাইল, সাইন্সল্যাব এলাকায় তীব্র যনজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশি বাধায় বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তারা শাহবাগ জাদুঘরের সামনে অবস্থান চালিয়ে যান।

এ দিকে আন্দোলনের সদস্যদের পক্ষ থেকে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিতে যায়। তারা স্মারকলিপি দিয়ে ফিরলে সন্ধ্যায় চাকরিচ্যুত এবং কারাগারে থাকা বিডিআরদের পরিবারের সদস্যা শাহবাগ ছেড়ে চলে যান।
সরেজমিন দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত হতে থাকেন চাকরিচ্যুত এবং কারাগারে থাকা বিডিআর পরিবারের সদস্যরা। তারা সেখানে মানববন্ধন করে নিরাপরাধ চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহাল এবং কারাগারে থাকাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান। পরে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিতে তার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রাটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এ বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের পর চাকরিচ্যুত ও কারাগারে থাকা বিডিআর সদস্যদের পরিবারের লোকজন এ আন্দোলন করছেন। তারা শাহবাগে এলে পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদেরকে আটকে দেয়া হয়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, আন্দোলনরতদের পক্ষ থেকে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিতে যান। তারা স্মারকলিপি দিয়ে ফেরত আসলে সন্ধ্যায় আন্দোলনরতরা শাহবাগ ছেড়ে চলে যান।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।

হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।

হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সবমিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্য দিকে হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায় আছে।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠছে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা। ১৫ বছর আগের এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।

শাহবাগ ব্লকেডের হুঁশিয়ারি
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সব বিডিআর জেলবন্দীর মুক্তি, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে মিথ্যা মামলা বাতিল, চাকরিচ্যুতদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও পুনর্বাসন এবং প্রজ্ঞাপনের ‘ঙ’ ধারা বাতিলসহ পিলখানা হত্যা মামলায় পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচারে আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে ইতিবাচক ইঙ্গিত না পেলে শাহবাগ ব্লকেডে যাবেন সাবেক বিডিআর পরিবারের সদস্যরা।

গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন থেকে ফিরে এই ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার। তিনি বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে শুনতে চেয়েছিলাম আর যেন শুনানি পেছানো না হয়। কারণ ৫ আগস্ট পর অনেকবার শুনানি পেঁচানো হয়েছে। কালকের ভেতরে (বৃহস্পতিবার) যদি ন্যায়বিচারের কোনো ইঙ্গিত না দেখি শাহবাগ ব্লকেড করা হবে। এবং আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে। সেই সাথে আজ (গতকাল বুধবার) সারা রাত অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

মাহিন সরকারের এমন ঘোষণার পরপরই শহীদ মিনারের পাদদেশে অবস্থান নেন বিডিআর পরিবারের সদস্যরা। রাত সাড়ে ৭টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শহীদ উপেক্ষা করে পুরো শহীদ মিনার এলাকাজুড়ে তারা অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় তারা ‘বিজিবি না বিডিআর, বিডিআর-বিডিআর’, ‘আমি কে তুমি কে, বিডিআর-বিডিআর’, ‘দেশপ্রেমিক বিডিআর, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘বিডিআরে ন্যায্য হিস্যা, বুঝিয়ে দাও-দিতে হবে’, ‘আমাদের সংগ্রাম, চলছে-চলবে’, ‘মুক্তি-মুক্তি, মুক্তি চাই বিডিআরের মুক্তি চাই’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন এবং অস্থায়ী মঞ্চে একে একে বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী বিডিআর পরিবারের সদস্যরা।

বিডিআর ৬৮ ব্যাচের সৈনিক কাজী হারুন বলেন, টানা ৬৫ দিন নির্যাতনের শিকার হইছি, নানাভাবে সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এখনো সেসব মনে হলে শিউরে ওঠি। শেখ হাসিনার শাসনামলে মুখ খুলতে পারিনি, এ সরকারের কাছে প্রত্যাশা যেন আমাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়।
শাহবাগ ব্লকেডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ৪৬ ব্যাচের সৈনিক কে রাজ্জাক বলেন, আমরা তিন দাবিতে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পক্ষে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত না আসছে আমরা শহীদ মিনার থেকে সরছি না। বৃহস্পতিবার (আজ) বেলা ১১টার মধ্যে যদি আমরা কোনো ন্যায়বিচারের ইঙ্গিত না পাই, প্রয়োজনে আমরা মাহিন সরকারের নেতৃত্বে শাহবাগ ব্লকেড করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement