ফেলানী হত্যার ১৪ বছর বিচার পেল না পরিবার
- জাকারিয়া শেখ ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)
- ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১১, আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৩
আজ ৭ জানুয়ারি। ২০১১ সালের এই দিনটি যেন এক কালো অধ্যায় হয়ে রয়েছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তের মানুষ এবং গোটা জাতির হৃদয়ে। এ দিনে ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী খাতুনকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নির্মমভাবে হত্যা করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা তার নিথর দেহের দৃশ্য সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ কলোনিটারি গ্রামের এই কিশোরীকে হত্যার ১৪ বছর পূর্ণ হলেও আজো ন্যায়বিচার পায়নি তার পরিবার।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ফেলানীর মা কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নিভৃতে কাঁদছেন। তার চোখে আজো অশ্রম্ন, আর মনের গভীরে একটি প্রশ্ন ‘ন্যায়বিচার কি কখনো পাবো’? ফেলানীর মা শাহানারা বেগম মেয়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রম্নসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়েকে যে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার বিচার এখনো পাইনি। প্রতি বছর এই দিনে মনটা আরো ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। কেউ আমাদের কথা শুনল না। আমরা ন্যায়বিচার ছাড়া আর কিছুই চাই না।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি, ভোরের আলো ফোটার আগেই ফেলানী তার বাবা নুর ইসলামের সাথে ভারতের কোচবিহার থেকে বাংলাদেশে ফিরছিলেন। দালালের সহায়তায় কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের সদস্য অমিয় ঘোষ গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ফেলানী কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা। সীমান্তের সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্য জাতিকে শোকাহত করে তোলে। বিশ্বব্যাপী এ ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করলেও ফেলানীর পরিবার আজো সুবিচারের মুখ দেখেনি।
এই হত্যার ঘটনায় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে ভারতের কোচবিহারের বিশেষ আদালতে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট বিচার শুরু হয়। আদালতে অমিয় ঘোষ নিজের দোষও স্বীকার করেন। ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম এবং মামা হানিফ আদালতে সাক্ষ্য দেন। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার পর ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়া হয়। পরবর্তীতে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’—এর সহযোগিতায় ফেলানীর পরিবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টে পুনর্বিচারের আবেদন জানায়। ২০১৪ সালে পুনর্বিচার শুরুর পরও ২০১৫ সালে অভিযুক্তকে আবার খালাস দেয়া হয়। এরপর একই বছর নতুন রিট করা হলেও বিচারপ্রক্রিয়া এখনো স্থবির।
ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, আমি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচার চেয়েছি। কিন্তু নানা অজুহাতে বিচার ঝুলে রয়েছে। আমি চাই অমিয় ঘোষের ফাঁসি হোক। কিন্তু এই দীর্ঘ অপেক্ষা আমাদেরকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করছে।
এ দিকে ফেলানী হত্যার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের আহ্বান জানালেও বাংলাদেশ সরকার কঠোর অবস্থান নিতে ব্যর্থ বলে অভিযোগ তুলেছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
কুড়িগ্রাম আদালতের সাবেক রাষ্ট্রপক্ষের কেঁৗসুলি আব্রাহাম লিংকন বলেন, দীর্ঘ ১৪ বছরেও বিচার হয়নি। ভারতের আদালতে মামলাটি বারবার পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমরা আশা করি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে কার্যকর চুক্তি বাস্তবায়িত হবে।
ফেলানীর হত্যার স্মরণে আজ ফুলবাড়ী সীমান্তে স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকার কর্মীরা শোকসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন। ফেলানীর মা—বাবার বিশ্বাস, একদিন তাদের মেয়ে হত্যার সুবিচার হবে। তবুও দীর্ঘ অপেক্ষার ভারে সেই আশার আলো ম্লান হয়ে আসছে। থ
ফেলানী হত্যার ১৪ বছর পরও সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি। মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে শতাধিক বাংলাদেশী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিচার হয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা