টোলপ্লাজায় বাসের ধাক্কায় এক পরিবারের ৪ জনসহ ঝরল ৬ প্রাণ
অন্যান্য স্থানে নিহত আরো ৭- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকায় ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় টোল দিতে অপেক্ষমাণ একটি মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও একটি মাইক্রোবাসকে, পেছন থেকে ধাক্কা মারে একটি যাত্রীবাহী বাস। এতে মোটরসাইকেল আরোহী ও প্রাইভেটকারের যাত্রী শিশুসহ ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছে। শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ নিহত এবং আহতদের উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে টোলপ্লাজায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী।
মিটফোর্ড হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার বিল্লাল হোসেন জানান, নিহতদের মধ্যে একই পরিবারে চারজনসহ মোট ছয়জন রয়েছে। নিহতরা হলেন, আমেনা বেগম (৪৮), ইসরাত ইমু (২৫), রিহা (৮), আয়াত (৩), রুহি (৩২) ও আব্দুল্লাহ (৭)। এদের মধ্যে চারজন একই পরিবারের বলে জানা গেছে। তিনি আরো জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এক আত্মীয়ের কুলখানিতে অংশ নিতে রাজধানীর জুরাইন থেকে মাদারীপুর যাচ্ছিলেন তারা। এ সময় টোল দিতে অপেক্ষমাণ অবস্থায় পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসটি সামনে থাকা মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, সকাল ১১টা ৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে ঢাকা মাওয়া হাইওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় একটি মোটরসাইকেল টোল প্রদান করছিল। তার পেছনে দাঁড়িয়েছিল একটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেট কার। বেপারী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস বেপরোয়া গতিতে এসে ১১টা ৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে টোল প্লাজায় অপেক্ষমাণ গাড়িগুলোকে পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে ৫০ মিটার পর্যন্ত নিয়ে যায়।
হাসাড়া হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আব্দুল কাদের জিলানী জানান, দুর্ঘটনার পর পরই সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে রাজধানী বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় ঘাতক বাসটি জব্দ করা গেলেও চালক পলাতক রয়েছে।
হাসপাতালে দায়িত্বরত কোতোয়ালি থানার এসআই জাকারিয়া জানান, আহতদের মিটফোর্ড হাসপাতালসহ ঢাকা মেডিক্যাল ও রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ঘাতক বাসের হেলপারকে সেনাবাহিনী আটক করেছে।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার দেওয়ান আজাদ হোসেন জানান, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে হতাহতদের হাসপাতালে পাঠাই। পরে জানতে পারি নারী ও শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে।’
প্রাইভেটকার করে রাজধানী জুরাইন থেকে সোহান মিয়া স্ত্রী সন্তানসহ গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে মাওয়ামুখী লেন দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পেছন থেকে বেপরোয়া একটি যাত্রীবাহী বাস প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাইক আরোহী সুমন মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ (৭) মারা যায়। সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত আরো ৮ জনকে হাসপাতালে নেয়ার পথে সোহান মিয়ার ছেলে আইয়াজ হোসেন, শাশুড়ি আমেনা বেগম, শ্যালিকা ইসরাত জাহান ও রিয়া মনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
মুন্সীগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের উপ-সহকারী পরিচালক সফিকুল ইসলাম জানান, মাওয়াগামী প্রাইভেটকারকে পেছন থেকে বেপারী পরিবহনের বেপরোয়া গতির বাসটি প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকার এই দুর্ঘটনায় যানবাহনগুলো সরিয়ে নেয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তিনি আরো জানান, পুলিশ বাসটি আটক করেছে। সোহান মিয়া ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে গোপালগঞ্জ যাচ্ছিলেন। গত ৬ দিনে এক্সপ্রেসওয়েতে ৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন
কমপক্ষে ৩০ জন।
পাবনায় ট্রাকচাপায় করিমনের ৩ যাত্রী নিহত
পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় মালবাহী ট্রাকের চাপায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আরো পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল ভোরে পাবনা-সাঁথিয়া সড়কের নন্দধপুরের রাঙামাটিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- ধনি (৫৫), খাইরুল ইসলাম খোকন (৩৫) ও রাসেল (২৮)। নিহত ও আহতদের বিস্তারিত ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) আব্দুল লতিফ জানান, ভোর সাড়ে ৪টার ট্রাকটি পাবনার দিকে যাচ্ছিল এবং নসিমন সাঁথিয়ার দিকে যাচ্ছিল। পথে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান এবং কয়েকজন আহত হন।
পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ডুমুরিয়ায় নিহত ২
ডুমুরিয়া (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মহিলাসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও তিনজন। আহতদের ডুমুরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানায়; খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার টিপনা নতুন রাস্তা নামক স্থানে সুরাইয়া আকতার রিম্মি (২৪) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সে স্বামী মাহফুজুর রহমান (২৮) সাথে মোটরসাইকেলে খুলনা থেকে চুকনগর যাচ্ছিল। টিপনা নতুন রাস্তা মোড়ে এলে পেছন থেকে আসা একটি অজ্ঞাত ট্রাকে ধাক্কা দিলে উভয়ে ছিটকে পড়ে। এতে স্বামী স্ত্রী উভয়ে আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ডুমুরিয়া হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুরাইয়াকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
চুয়াডাঙ্গায় প্রাণ গেল বৃদ্ধের
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গায় ইঞ্জিনচালিত লাটাহাম্বারের ধাক্কায় আইজাল হোসেন (৬০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
আজ শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক খালিদ হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত তাইজেল হোসেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার পূর্ব কমলাপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে।