বাংলাদেশের যেকোনো প্রকল্পের ব্যয় ভারতের চেয়ে বেশি : রেল উপদেষ্টা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫১
বাংলাদেশের যেকোনো প্রকল্পের ব্যয় ভারতের তুলনায় বা আশপাশের দেশের তুলনায় অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মাদ ফাওজুল কবির। গতকাল সকালে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন (কমলাপুর) থেকে ঢাকা-খুলনা-ঢাকা রুটের ট্রেন চলাচল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
রেলপথ উপদেষ্টা বলেন, আপনারা সবাই জানেন রেল একটি সাশ্রয়ী যাতায়াত ব্যবস্থা। খুব অল্প খরচে এর মাধ্যমে যাতায়াত করা যায়। কিন্তু আমাদের রেলের নানারকম সঙ্কট আছে। আপনারা অনেকে অসন্তোষ ব্যক্ত করে থাকেন। আপনাদের জানতে হবে, কেন আপনাদের কাক্সিক্ষত সুবিধা দিতে পারে না। আমাদের ইঞ্জিনের সঙ্কট রয়েছে, কোচের সঙ্কট, জনবলের সঙ্কট রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আজ পদ্মা রেলসেতু সংযোগের মাধ্যমে খুলনা এবং ঢাকার মধ্যে একটা দ্রুত যাতায়াতের ব্যবস্থা হয়েছে। মাত্র পৌনে চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে খুলনায় পৌঁছে যাবে ট্রেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের যেকোনো প্রকল্পের ব্যয় ভারত এবং আশপাশের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। সবাইকে অনুরোধ করব কিভাবে এটার খরচ কমানো যায়। ব্যয় যদি কমানো না গেলে রেল সেবা দেয়ার প্রত্যাশা আমরা পূরণ করতে সক্ষম হবো না।
জাহানাবাদ এক্সপ্রেসের চলাচল শুরু
খুলনা ব্যুরো জানান, পদ্মাসেতু হয়ে খুলনা-ঢাকা পথে কম সময়ে যাতায়াতের ট্রেন জাহানাবাদ এক্সপ্রেসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। এ ট্রেন চালুর দিনক্ষণ কয়েকবার পিছিয়ে শেষমেশ গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় খুলনা স্টেশন থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
এর আগে গত সোমবার দুপুরের পর ট্রেনের র্যাকটি ঈশ^রদী থেকে খুলনা স্টেশনে এসে পৌঁছে। তারপর এখানে সেটার সাজগোজ করা হয়। জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা-ঢাকা রুটের চতুর্থ ট্রেন। আগে থেকে ঈশ^রদী-যমুনা সেতু হয়ে ইন্টারসিটি ট্রেন সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস চালু ছিল। পরে সুন্দরবন এক্সপ্রেসকে কুষ্টিয়া-ভাঙ্গা-পদ্মাসেতু পথে রিডাইরেক্ট করা হয়। সেটার সময় লাগে ৮ ঘণ্টার মতো। সেইসাথে এ রুটে লোকাল ট্রেন নক্সীকাঁথাকে কমিউটার হিসেবে চালু করা হয়।
খুলনার পুরোনো নাম জাহানাবাদের নামে নামকরণ করা ট্রেনের আনুষ্ঠানিক যাত্রাকালে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো: আফজাল হোসাইন খুলনা স্টেশনের প্লাটফর্মে বলেন, এ ট্রেনের খুলনা-ঢাকার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে শোভন চেয়ার ৪৪৫ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ৮৫১ টাকা ও এসি সিট ১০১৮ টাকা। ভাড়ার এ রেটই আপাতত বলবৎ থাকছে। তবে পরবর্তীতে কমবেশি হতে পারে।
রেলওয়ের খুলনা স্টেশন ম্যানেজার (চলতি দায়িত্ব) আশিক আহমেদ বলেন, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ছেড়ে নওয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া জংশন, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী ও ভাঙ্গা জংশন হয়ে পৌনে দশটায় ঢাকা পৌঁছবে। শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম ট্রিপে ৭৬৮ সিটের ট্রেনের খুলনা থেকে ৫৫৩টি, অর্থাৎ শতকরা ৭০ ভাগ টিকিট বিক্রি হয়েছে। ট্রেনটিতে ১১টি যাত্রীবাহী এবং একটি মালবাহী বগি রয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রমতে, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ঢাকায় গিয়ে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস নামে ঢাকা থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে বেনাপোল পৌঁছবে দুপুর আড়াইটায়। আর বিকেল তিনটা ২৫ মিনিটে বেনাপোল থেকে ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছবে সন্ধ্যা সাতটায় মিনিটে। ঢাকা থেকে আবার জাহানাবাদ নামে খুলনায় ছেড়ে আসবে ট্রেনটি।
ট্রেনের যাত্রার সময় নির্ধারণের বিষয়টি পুনঃবিবেচনার দাবি জানিয়েছেন খুলনার যাত্রীরা। শহীদ হোসেন নামের একজন বলেন, খুলনা থেকে সকাল ছয়টায় ট্রেনটি ছেড়ে যাচ্ছে। এত ভোরে অনেকেই আসতে পারবে না। তাছাড়া রাতে পৌনে ১২টায় পৌঁছানোর পর অনেক দূরের যাত্রীর বাড়ি যেতে কষ্ট হবে। এজন্য হয় ট্রেনের সময় পুনঃনির্ধারণ অথবা ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে দিনে একাধিক ট্রেন করা যেতে পারে।
নড়াইল থেকে স্বপ্নের রেলযাত্রা শুরু
নড়াইল প্রতিনিধি জানান, নড়াইল থেকে শুরু হয়েছে স্বপ্নের রেলযাত্রা। খুলনা থেকে ছেড়ে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটের দিকে নড়াইল রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায় ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ নামের নতুন ট্রেন। প্রথম দিনেই যাত্রী-সাধারণের ব্যাপক চাপ ছিল। অনেকে টিকিটও পাননি। এ ছাড়া বিভিন্ন বয়সের মানুষ আসেন প্রথম দিনের রেলযাত্রা দেখতে। সবমিলে ব্যাপক আনন্দ-উৎসব তৈরি হয় নড়াইল রেলস্টেশনে।
নড়াইল রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, খুলনা থেকে নড়াইল হয়ে পদ্মাসেতু দিয়ে ঢাকার পথে যুক্ত হয়েছে নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’। এ ট্রেনটি মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ট্রেনটি রাত ৮টার সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে নড়াইল হয়ে আবার খুলনার উদ্দেশে যাত্রা করে। এ দিকে গতকাল সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে নড়াইল হয়ে বেনাপোলে যায় ‘রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি। এ ছাড়া বিকেল সাড়ে ৩টায় বেনাপোল থেকে একই ট্রেনটি নড়াইল হয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
এ দিকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে নড়াইল রেলস্টেশনে ট্রেন আসার আগেই ভোর থেকে যাত্রীসহ উৎসুক জনতা ব্যাপক ভিড় করেন নতুন রেলযাত্রা দেখতে। এ রেলযাত্রার মধ্য দিয়ে নড়াইল থেকে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হলো। যাত্রী সাধারণের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে বলে প্রত্যাশা করছেন সবাই।
নড়াইল কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক উজির আলী, স্কুল শিক্ষক মতিয়ার রহমান, মিজানুর রহমান, কবি ও ব্যাংকার মফিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও রেলপথে যুক্ত হলো নড়াইল জেলা। খুব ভালো লাগছে। এখন নড়াইল থেকে আমরা সহজে ঢাকা, খুলনা, যশোর, বেনাপোল যেতে পারব।
পদ্মা রেল লিঙ্কের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নবনির্মিত ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইন রেল ট্র্যাকটি রূপদিয়া ও সিংগিয়া স্টেশন হয়ে খুলনাগামী রেল ট্র্যাককে সংযুক্ত করেছে। ৩৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কমলাপুর থেকে রূপদিয়া ও সিংগিয়া স্টেশন পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি ঋণ সহায়তা দিয়েছে চীন। গত বছরের অক্টোবরে এ লাইনের ঢাকা-ভাঙ্গা সেকশন চালু হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা