নির্দিষ্ট বাজারে সীমাবদ্ধ দেশের পোশাক রফতানি
- শাহ আলম
- ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৯
দেশের পোশাকশিল্পের রফতানি বাণিজ্য নির্ধারিত কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এসব প্রচলিত বাজার থেকে বের হতে পারছে না দেশের রফতানিকারকরা। অপ্রচলিত বাজারে ব্যাপক সম্ভাবনা সত্ত্বেও কাজে লাগাতে পারছে না দেশের রফতানিকারকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এলডিসি উত্তরণের পর পোশাকশিল্প যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে তা থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রচলিত বাজারের সাথে অপ্রচলিত বা নতুন বাজারকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এর মাধ্যমে দেশের পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
দেশের পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন টেকসই রফতানি বাণিজ্য এবং রফতানির ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় রাখতে আমাদের রফতানি তালিকায় পণ্যের সংখ্যা বাড়াতে হবে। একই সাথে নতুন বাজারের বিকল্প নেই। কারণ দেশের রফতানি বাণিজ্য তৈরী পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ দেশের মোট রফতানির ৮০ শতাংশ আসে পোশাক শিল্প থেকে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন দেশের পোশাক রফতানিতে একদিকে বাড়ছে চ্যালেঞ্জ। অপর দিকে সম্ভাবনাও বাড়ছে। এদিকে সরকারও দেশের রফতানির গন্তব্য বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এতে বেশ কিছু রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে। নতুন গন্তব্যে বা অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি গত এক বছরে ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশের পোশাকশিল্পের বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায় পোশাক রফতানির জন্য অপ্রচলিত বাজার আগের তুলনায় ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নতুন বাজারে বাণিজ্য বাড়াতে দেশের রফতানিকারকরা ক্রেতার চাহিদানুসারে পণ্যে বৈচিত্র্য আনছেন। একই সাথে নতুন বাজার অনুসন্ধানে গুরুত্ব দিচ্ছেন। দেশের পোশাক রফতানির জন্য অপ্রচলিত বাজারের তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, নিউজিল্যান্ড, সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় চলমান যুদ্ধের মধ্যেও রাশিয়া ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪৭.৯ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে। এর আগের বছর ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪.২৩ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে রাশিয়া। এক বছরে জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া একমাত্র দু’টি অপ্রচলিত বাজার বাংলাদেশ থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে।
এদিকে দেশের পোশাক রফতানির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছে। বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানির জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে বাংলাদেশের মোট রফতানি বাণিজ্যের ২০ শতাংশ রফতানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের রফতানিকারকরা তাদের পণ্যের গুণগত মানের কারণে দেশটিতে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে। বাংলাদেশ থেকে নিটওয়ার এবং ওভেন পণ্য আমেরিকাতে রফতানি হয়ে থাকে। আমেরিকার বাজার অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। কারণ দেশটিতে অন্যান্য প্রধান পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম এবং ভারত তাদের পণ্য রফতানি করে থাকে। তবে বাংলাদেশ যেসব নতুন দেশে পোশাক রফতানির জন্য বাজার অনুসন্ধান করছে, এসব বাজারে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা বেশি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের বেশির ভাগ রফতানিকারক আমেরিকা এবং ইউরোপের বাজারের ওপর নির্ভরশীল। এজন্য আমাদের এ ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ আমরা আমাদের প্রচলিত বাজারে ধীরে ধীরে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য চেষ্টা করছে। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর দেশের পোশাক শিল্পে চ্যালেঞ্জ আরো বাড়বে। কারণ বর্তমানে দেশের রফতানিকারকরা এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছে। গ্র্যাজুয়েশন করার পর এসব সুবিধার অনেকটাই বাতিল হবে। এজন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
শাশা ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ নয়া দিগন্তকে বলেন, পোশাক রফতানিতে প্রচলিত বাজারের তুলনায় অপ্রচলিত বাজারে দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে। এজন্য জাপান, ভারত, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অপ্রচলিত বাজারে দেশের পোশাক রফতানিতে তিনি অনেক বেশি আশাবাদী বলে জানান।
তিনি বলেন দেশের পোশাকশিল্প জ্বালানি সমস্যাসহ বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। পোশাকশিল্প যদি পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ, সরকারি নীতি ও আর্থিক সহায়তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং শিল্পনিরাপত্তা পায় তবে রফতানি বাণিজ্যে তাদের অবদান আরো বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন চলতি অর্থবছরে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি কমেছে। তবে নতুন বাজারে রফতানি বেড়েছে। তারা বলছেন আস্থার সঙ্কট কাটানো গেলে এবং পণ্য রফতানিতে শুল্ক ছাড়ের ব্যবস্থা করা গেলে নতুন বাজারে রফতানি আরো বাড়ানো সম্ভব।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায় রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে পোশাক খাত থেকেই। প্রায় দেড় শ’র মতো দেশে হলেও এখনো বাংলাদেশের পোশাক রফতানির দুই-তৃতীয়াংশের বেশি হয় ইউরোপ এবং আমেরিকায়। তবে এই দুই বাজারের বাইরে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে রফতানি হয়েছে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের পোশাক। অর্থাৎ অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে যাচ্ছে এখন মোট পোশাক রফতানির ১৯ শতাংশ। আর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা