ডিএসসিসির রাজস্ব আদায়ে ভাটা
- খালিদ সাইফুল্লাহ
- ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৬
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়েছে। গত বছরের তুলনায় গত পাঁচ মাসে প্রায় ৮০ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় করেছে সংস্থাটি। জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনবল সঙ্কট, অনলাইন জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, শেখ ফজলে নূর তাপস ২০২০ সালে মেয়র হওয়ার পরই বাজেটের আকার দ্বিগুণ হয়ে যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। বিদেশী অর্থায়নের প্রকল্প আসবে বলে দেখিয়ে বাজেটের দুই-তৃতীয়াশ আয়-ব্যয় দেখাতেন মেয়র তাপস। কিন্তু বছর শেষে সে আয়-ব্যয় আর দেখা যেত না। বিদেশী কোন অর্থায়নই আসত না ডিএসসিসিতে। ফলে বছর শেষে দেখা যেত বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল তিন ভাগের এক ভাগ। মূলত বাজেট এভাবে ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখাতেন তাপস। যা ছিল মূলত শুভঙ্করের ফাঁকি। জনগণের চোখ ফাঁকি দিতেই তিনি এ ধরনের ছলনার আশ্রয় নিয়েছিলেন। অন্যান্য আয় কম হলেও নিজস্ব উৎস থেকে আয় বাড়াতে আগের খাতগুলোর পাশাপাশি আরো ২৩টি খাত বাড়ান মেয়র তাপস। তবে এর সবগুলো তেমন কার্যকর হয়নি। অবশ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাত থেকে ওয়ার্ড প্রতি নির্দিষ্ট ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা আয় করতেন তাপস। নিজস্ব উৎস থেকে আয় বলতে হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্সের আওতা বাড়ান তিনি। বেশি সংখ্যক লোককে করের আওতায় নিয়ে আসেন তিনি। এতে ডিএসসিসির প্রতি বছর রাজস্ব আয় বাড়তে থাকে। আর জনগণের এ ট্যাক্স থেকেই মূলত চলত সিটি করপোরেশন। কিন্তু তার তুলনায় নাগরিকরা সেবা পেয়েছেন সামান্যই। নগরীর রাস্তাগুলো তার সাক্ষী হয়ে এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে। অধিকাংশ রাস্তাতেই চোট বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। নতুন প্রশাসক নজরুল ইসলাম এর জের টানছেন। সম্প্রতি এসব রাস্তা মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে দক্ষিণ সিটি নিজস্ব উৎস থেকে রাজস্ব আয় করে ৭০৩ কোটি টাকা, তার পরের ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৭৯ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক হাজার ৩২ কোটি টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক হাজার ৬১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে ডিএসসিসি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিজস্ব উৎস থেকে আয়ের টার্গেট ধরা হয়েছিল এক হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। জুলাই থেকে নভেম্বর প্রথম পাঁচ মাসে আয়ের টার্গেট ছিল ৬৫২ কোটি টাকা। তবে আয় হয়েছিল ৪৫০ কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ধরা হয় এক হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম পাঁচ মাসের টার্গেট ছিল ৬৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু গত পাঁচ মাসে আয় হয়েছে মাত্র ৩৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ৮০ কোটি টাকা আয় কম হয়েছে। আয়ের দু’টি বড় খাত হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে এসেছে ১৯২ কোটি টাকা এবং ট্রেড লাইসেন্স খাত থেকে এসেছে ৫৬ কোটি টাকা। এ পাঁচ মাসের মধ্যে প্রথম মাস জুলাই ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। সে সময় মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন তাপস। তিনি ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দুইদিন আগেই দেশ ছেড়ে চলে যান। পরের মাসের মাঝামাঝিতে অস্থিরতা কমে আসে। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। তবে ডিএসসিসির বিভিন্ন বিভাগের মতোই রাজস্ব বিভাগেও সাবেক সরকারপন্থীরা দায়িত্বে থাকায় তারা গা ঢাকা দেন। এর মধ্যে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাও বদলি হয়েছেন। এতে রাজস্ব আদায় কমে যায়। পরের তিন মাসে ক্রমেই রাজস্ব আদায় বাড়ছে। তবে এখনো আগের জায়গায় যেতে পারেনি ডিএসসিসি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবনিযুক্ত প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো: মুনিরুজ্জামান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের রাজস্ব বিভাগে জনবলের ব্যাপক সঙ্কট চলছে। মোট ৫৮৯টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৩০২টি পদই শূন্য রয়েছে। কর-কর্মকর্তার পদ ২০টি, এর মধ্যে ১৪টি পদেই লোক নেই। উপকর কর্মকর্তার ৭১টি পদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ৩৮টি পদ খালি রয়েছে। এ কারণে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া রাজস্ব আদায় করার জন্য যে সফটওয়ার সেটিও সঠিকভাবে কাজ করছে না। এটিএন-আরকে এ সফটওয়ার সরবরাহ করেছিল। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সম্মতি দেয়ার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের পদোন্নতিরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সাথে যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে বড় অঙ্কের রাজস্ব বকেয়া রয়েছে সেগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। শিগগিরই তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ে ক্রাস প্রোগ্রাম নেয়া হবে। আশা করি দ্রুতই আমরা সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা