২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় নয়া সঙ্কট

-

- বেরিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়
- সরকারি নির্দেশও মানছে না অনেক প্রতিষ্ঠান

গুচ্ছ পরীক্ষার সঙ্কট সহসাই কাটছে না। সরকারের তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে কয়েক দফায় চিঠি দেয়া হলেও সেই নির্দেশনাও মানছে না অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে দীর্ঘ ৫ বছরেও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা (গুচ্ছ পদ্ধতি) নিয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। যদিও ২০২০ সাল থেকেই সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় একক এবং অভিন্ন পদ্ধতির সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পবরর্তীতে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্বাতন্ত্র্যতা এবং আর্থিক বিষয়াদি বিবেচনা করে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর থেকে গত চার বছর নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা হলেও গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এ বছরও গুচ্ছ নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এ দিকে গত কয়েক দিনে সরকারের তরফ থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছের বিষয়ে তাগিদ দিয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘাষণা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের দফায় দফায় চিঠি ও নির্দেশনাও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমনকি শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বাক্ষরিত একটি আধা-সরকারি পত্রও প্রেরণ করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গুচ্ছ ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে একটি জরুরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ১ ডিসেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা একটি চিঠিতে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এর পর ১০ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে গুচ্ছ ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আরেকটি চিঠি দেয়া হয়।

এর আগে গত ২৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতির বিষয়ে জরুরি বৈঠকও করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বেশি এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং তুলনামূলক নতুন প্রতিষ্ঠিত ও জনবল কম থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতি রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ফলে কোনো রকম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছিল। সর্বশেষ গতকাল বিগত দিনের সব উদ্যোগের কথা জানিয়ে এবং ইতঃপূর্বে দেয়া পত্রের সূত্র ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গুচ্ছ ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে একটি জরুরি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের উদ্দেশে বলা হয়, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সুষ্ঠু উন্নয়ন ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য ২০২০ সাল থেকে দেশের সরকারি সাধারণ, কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও মানসিক চাপ কমানো, ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় সাশ্রয় করা এবং মেধাভিত্তিক, স্বচ্ছ ও সমন্বিত পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন নিশ্চিত করা। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীবান্ধব একটি কার্যক্রম হিসেবে গুচ্ছ পদ্ধতি ইতোমধ্যে জনমনে আস্থা অর্জন করেছে। এ পদ্ধতিতে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, আবাসন এবং অন্যান্য খরচ বহুলাংশে হ্রাসও পেয়েছে। গুচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে একটি মানসম্মত প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে মেধাভিত্তিক ভর্তি নিশ্চিত হবার পাশাপাশি অভিভাবকরা একাধিক ভর্তি পরীক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

সূত্র মতে গত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে পৃথকভাবে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের জন্য তা বাড়তি আর্থিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে এবং জনমনে শিক্ষা প্রশাসনের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চিঠিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদেরকে পুনরায় গুচ্ছ পদ্ধতির সুফল বিবেচনা করে এ পদ্ধতি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে এ সংক্রান্ত একটি সভা করার পাশাপাশি গুচ্ছ পদ্ধতি বহাল রাখার বিষয়ে একটি পত্র জারি করা হয়েছে।
অন্য দিকে চলতি শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যেও উৎকণ্ঠার যেনো শেষ নেই। এরই মধ্যে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে চূড়ান্তভাবে বেরিয়ে গেছে তিনটি উচ্চশিক্ষালয়। একই পথ অনুসরণ করছে আরো চারটি। বের হয়ে যাওয়া তিন উচ্চশিক্ষালয় হচ্ছে- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। একই পথ অনুসরণ করা চার বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে গুচ্ছে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতামত হচ্ছে গুচ্ছে থাকতে হলে সবাইকে থাকতে হবে। আর সেটা সম্ভব না হলে বাকিরাও গুচ্ছে থাকতে আগ্রহী হবে না। এর কারণে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই চার বিশ্ববিদ্যালয়।

ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তির ঘোষণা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যোগ্য শিক্ষার্থী না পাওয়া, সেশনজট বৃদ্ধি, আসন ফাঁকা থাকা এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মান হারাচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্বতা হারানোর অভিযোগও রয়েছে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায়। এসব প্রসঙ্গে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা চাই, গুচ্ছ থাকুক এবং সব বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিক। এটা শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর হবে।


আরো সংবাদ



premium cement