অনুপ্রবেশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসের তুমুল বিতর্ক
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭
সীমান্ত দিয়ে কথিত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে তুমুল বিতর্ক চলছে। পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক অবস্থানকে কটাক্ষ করে রাজ্যের বিজেপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গিদের সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করে দেয়ার জন্য মমতা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।
এদিকে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও পশ্চিম বাংলার পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তুলে বলেন, সীমান্ত সুরক্ষায় আরো বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত অমিত শাহের। কারণ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় সরকার। একাধিক তৃণমূল কংগ্রেস নেতাও একই অভিযোগে সোচ্চার হয়েছেন।
অন্যদিকে গত রোববার ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবাংলার বাম ও কংগ্রেসের সরকারকে তুলোধুনা করে বলেন, কমিউনিস্টরা দাবি করে, তারা নাকি গরিবের মাসিহা। অথচ, তারা ৩৫ বছর ধরে এখানে শাসন করেছে। কংগ্রেসও এখানে বহু বছর সরকার চালিয়েছে। কিন্তু কেউই ব্রু অভিবাসীদের যন্ত্রণা অনুভব করতে পারেনি। কংগ্রেস বা সিপিএমের সরকার যা করতে পারেনি, সেই কাজ করে দেখিয়েছে ত্রিপুরার বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে জাতিদাঙ্গার কবল থেকে বাঁচতে মিজোরামের মামিট, কোলাসিব এবং লুংলেই জেলা থেকে ৩২ হাজারেরও বেশি ব্রু অভিবাসী ত্রিপুরায় চলে আসতে বাধ্য হন। এই ঘটনার ২৩ বছর পর কেন্দ্রীয় সরকার, ত্রিপুরা সরকার এবং মিজোরাম সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় ২০২০ সালে। যার মাধ্যমে ত্রিপুরাতেই ব্রু অভিবাসীদের থাকার পাকাপাকি বন্দোবস্ত করা হয়।
বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ভারতের লাভ হবে এ রকম সব বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধিতা করবে এটাই স্বাভাবিক। এক দেশ, এক ভোট তাতে বিরোধিতা করছেন। এনআরসিতে বিরোধিতা করেছে, সিএএ’তে বিরোধিতা করেছে। নতুন কিছু নয়। আমরা এতে অভ্যস্ত।
সুকান্ত মজুমদার বলেন, সীমান্তে অনুপ্রবেশ নতুন ঘটনা নয়, তবে অনুপ্রবেশকারীরা যেভাবে অনুপ্রবেশের কয়েক দিনের মধ্যে আধার কার্ড, ভোটার কার্ডের মতো বিভিন্ন ভারতীয় নথি বানিয়ে ফেলছে তা উদ্বেগের। আর এ জন্য দায়ী তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ এ ধরনের নথি বানাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে রাজ্যে যেসব এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের দাপটে বিরোধীরা দাঁত ফোটাতে পারে না সেসব জায়গা থেকে বেশি করে জারি হচ্ছে এ ধরনের জাল সার্টিফিকেট।
তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগের জবাবে বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার বলেন, গোটা তৃণমূল কংগ্রেস অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাতে ওস্তাদ। তারা বলছে, অনুপ্রবেশ হলে দায় বিজেপির। কারণ সীমান্ত কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। ১০০ শতাংশ দায় কেন্দ্রীয় সরকার নেবে যদি, পশ্চিমবঙ্গে যেখানে যেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়নি সেখানে জমি দেয়ার ব্যবস্থা রাজ্য সরকার করে। আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছিলেন, ৭২টি পোস্টে বিএসএফের জন্য জায়গা দরকার। দুই বছর পার হয়ে গেলেও একটা জায়গাও পাওয়া যায়নি। এগুলো দিয়ে দিন, অনুপ্রবেশের ১০০ শতাংশ দায় নেবে কেন্দ্রীয় সরকার।
তৃণমূলের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এর আগে বলেন, অনুপ্রবেশ হলে দায় বিজেপির। কারণ তারা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে। জবাবে গতকাল সোমবার বাগডোগরা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সুকান্ত বলেন, শুধু ববি হাকিম নয়, গোটা তৃণমূল কংগ্রেস অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাতে ওস্তাদ। আমরা জঙ্গি এক্সপোর্ট করছি। এটা বিরাট ব্যাপার। এগিয়ে বাংলা মডেল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা এতদিনে সফল হয়েছেন। শুধু যে কাশ্মিরের জঙ্গি ক্যানিংয়ে পাওয়া যাচ্ছে তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গিদের সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করে দেয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।