২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সিরিয়ায় সরকার গঠনে তৎপরতা দুই মন্ত্রীর নাম ঘোষণা

-

- দামেস্কে ১৩ বছর পর কাতারের দূতাবাস চালু
- বাশারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা সময়ের ব্যাপার মাত্র

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে উৎখাতের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে তৎপরতা শুরু করেছেন বিপ্লবী গ্রুপ এইচটিএসের প্রধান আল-শারা। এরই মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এইচটিএসের দুই কমান্ডারের নাম ঘোষণা করেছেন তিনি। খবর রয়টার্সের।
সিরিয়ার ডি ফ্যাক্টো নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি ওরফে আহমদ আল-শারা শনিবার দেশটির সশস্ত্র দলগুলোর সাথে ক্ষমতার পটপরিবর্তনজনিত পরিস্থিতিতে করণীয় ইস্যুতে বৈঠক করেছেন। এ সময় ‘নতুন সিরিয়ায়’ সামরিক প্রতিষ্ঠানের রূপ নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানিয়েছে, বৈঠকের পর আল শারা সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে এইচটিএসের কমান্ডার মুরহাফ আবু কাসরার নাম ঘোষণা করেন। আবু হাসান নামে পরিচিত এই কমান্ডার হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গ্রুপের একজন সিনিয়র ব্যক্তি। সিরিয়ার বিপ্লবের সময় অসংখ্য সামরিক অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
সিরিয়ার সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এর আগে আল-শারা নতুন সরকারের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও নিয়োগ করেছেন। তার নাম আসাদ হাসান আল-শিবানি। ৩৭ বছর বয়সী শিবানি দামেস্ক ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক এবং এর আগে ইদলিব প্রদেশে বিদ্রোহীদের সরকারে রাজনৈতিক প্রধান ছিলেন তিনি। সিরিয়ায় নতুন প্রশাসনে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মোহাম্মদ আল-বশির। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইদলিবে এইচটিএস-অধিভুক্ত প্রশাসনের নেতৃত্বদানকারী আল-বশির বলেছেন, তিনি তিন মাসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দেবেন। এর পরে কী ঘটবে সে বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি নতুন প্রশাসন।

সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস ও তার মিত্ররা গত ৮ ডিসেম্বর দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ দখল করে। দেশটিতে ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের পর প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে পালাতে বাধ্য করে এবং তার পরিবারের পাঁচ দশকের শাসনের অবসান ঘটায়।
দামেস্কে ১৩ বছর পর কাতারের দূতাবাস চালু
প্রায় ১৩ বছর পর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে আনুষ্ঠানিকভাবে দূতাবাস পুনরায় চালু করল কাতার। ২০১১ সালে সিরীয় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর কাতারি দূতাবাসে আসাদ সমর্থকদের হামলার জেরে দূতাবাসটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কাতারভিত্তিক আলজাজিরা টেলিভিশনে সিরীয় বিদ্রোহীদের সংবাদ প্রচারকে কেন্দ্র করে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

শনিবার দূতাবাস ভবনে কাতারের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দূতাবাসের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় শুরু হয়। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা খালিদ আল খালিদ বলেন, কাতার সিরিয়ার বিপ্লবের অন্যতম প্রধান সমর্থক ছিল। আমি আশা করি অন্যান্য দেশও কাতারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করবে।
বাশারের পতনের পর আন্তর্জাতিক সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা চাই আরব বিশ্ব আমাদের পাশে থাকুক। নুর গায়ছ নামের আরেকজন সিরীয় নাগরিক কাতারের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, কাতারি দূতাবাস পুনরায় চালু হওয়া সিরিয়ার নিরাপত্তার বার্তা দেবে এবং দেশত্যাগী সিরিয়ানদের প্রত্যাবর্তনে উৎসাহিত করবে।
বাশারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা সময়ের ব্যাপার মাত্র
সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত নেতা বাশার আল-আসাদ স্পষ্টভাবে রোম সংবিধি লঙ্ঘন করেছেন এবং সিরিয়ার জনগণের ওপর ব্যাপক নিপীড়ন চালিয়েছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে একটি শক্তিশালী গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা শুধু সময়ের ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের একজন বিশেষজ্ঞ।

তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আঙ্কারা হাচি বাইরাম ভেলি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদ লেভেন্ট এরসিন ওরালি বলেন, নিজ দেশের জনগণের ওপর অমানবিক দমন-পীড়নের জন্য বাশার আসাদকে আইসিসির বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ওরালি বলেন, বাশার সরকারের পতনের পর কারাগারসহ বিভিন্ন নির্যাতন কেন্দ্র ও গণকবরের যেসব নির্দশন পাওয়া গেছে, সেগুলো বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সব প্রতিবন্ধকতা দূর করবে এবং একটি শক্তিশালী অভিযোগপত্র তৈরি করতে সহায়ক হবে। বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় থাকাকালীন তাকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। কারণ সিরিয়া রোম সংবিধির পক্ষভুক্ত নয়। তাই আইসিসির সরাসরি দেশটির ওপর কোনো এখতিয়ার নেই। সেখানে আইসিসিকে হস্তক্ষেপ করতে হলে, সিরিয়াকে হয় আদালতের এখতিয়ার মেনে নিতে হবে অথবা জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক মামলাটি আদালতে স্থানান্তর করতে হবে। এর আগে ফ্রান্স এ ধরনের একটি প্রস্তাব দিয়েছিল, তবে রাশিয়া তাতে ভেটো দিয়েছিল। ওরালি আরো বলেন, বাশারের শাসনামলে নিরাপত্তা ঝুঁকি ও অঞ্চলটির বিপজ্জনক পরিস্থিতির কারণে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করা কঠিন ছিল। তবে তার সরকারের (কার্যত) পতনের পর এলাকাটি আইসিসিসহ আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সব পক্ষের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে।

পলাতক বাশার আল আসাদকে বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে ওরালি বলেন, রোম সংবিধির ধারা ১২(৩)-এর অধীনে, কোনো রাষ্ট্র পক্ষভুক্ত না হলেও আইসিসির এখতিয়ার মেনে নিয়ে একটি ঘোষণার মাধ্যমে অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। সিরিয়ায় এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময়ে সংঘটিত গণহত্যা, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র ব্যবহারের মতো অপরাধগুলো আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচারযোগ্য।
আসাদ শাসনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো এসব মানদণ্ড পূরণ করে। অন্য দিকে সিরিয়ার নতুন সরকার যদি আইসিসির এখতিয়ারকে স্বীকৃতি দেয়, তবে এটি আসাদের অপরাধের বিচারের পথ প্রশস্ত করতে পারে। সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটসের (এসএনএইচআর) প্রধান ফাদেল আবদুলগানি বলেন, আসাদের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের কারণে তাকে ক্ষমতায় থাকাকালে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এখন বাশার আল আসাদকে পলাতক হিসেবে অভিযুক্ত করা সহজ।
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার কেন্দ্রের সিরিয়া প্রোগ্রামের প্রধান নুশা কাবাওয়াত বলেন, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বাশার আল আসাদকে অভিযুক্ত করা যায়। তিনি বিশ্বাস করেন, রোম সংবিধি ও জেনেভা কনভেনশনগুলোর মতো আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো এমন বিচার প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো সরবরাহ করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement