২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সন্তানের অনুপ্রেরণায় বগুড়ার আজিজের কমলা চাষ

সন্তানের অনুপ্রেরণায় বগুড়ার আজিজের কমলা চাষ -


নিজ সন্তানের অনুপ্রেরণায় প্রায় দুই বিঘা জমিতে বগুড়া সদরের আব্দুল আজিজ গড়ে তুলেছেন চায়না কমলার বাগান। তার বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে পাকা-আধা পাকা কমলা। গাছে গাছে নয়, যেন কমলা ধরেছে পাতায় পাতায়। কমলার ভারে নুইয়ে পড়েছে গাছগুলো। পাকা-আধা পাকা কমলায় বাগান এক অপরূপ সাজে সেজেছে। তার বাগানে ২০০ গাছে দার্জিলিং ও চায়না মালটাও ধরেছে। বগুড়া পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোবরধনপুর গ্রামের ফনির মোড়ের বাসিন্দা মো: আব্দুল আজিজ। ২০১৯ সালের শেষের দিকে প্রায় দুই বিঘা জমিতে চায়না কমলার বাগান শুরু করেন। প্রথমে চুয়াডাঙ্গা জেলার চাপাতলা জিরো পয়েন্টে গিয়ে ভারত থেকে চারা সংগ্রহ করেন। এর আগে তিনি সন্তানের অনুপ্রেরণায় ইউটিউবে দেখে কমলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন।

একই বাগানে তিনি চায়না, দার্জিলিং, ম্যান্ডোলিনা কমলা, মালটা-১, মালটা আফ্রিকান, মালটা ভিয়েতনামা, লাল আঙুর, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়ান কালো ও দেশী জাতের আঙুুরের চাষ করেছেন। তার বাগানে ২০০টি কমলা রয়েছে। এ ছাড়া ওই বাগানে ১০০টি লেবু গাছ, ১০০টি সুপারি গাছ, সাথী ফসল বস্তায় আদা চাষ, রসুন, মরিচ ও শিম চাষ করছেন চাষি আজিজ। চারা লাগানোর পর ২০২০ সাল থেকে তিনি কমলা বিক্রি শুরু করেন। মাত্র ১ লাখ টাকা খরচ করে তিনি এ পর্যন্ত ফল বিক্রি করেছেন প্রায় ৪ লাখ টাকার।
যে জমিতে তিনি এতদিন আদার চাষ করতেন সেই জমিতে এখন কমলা চাষ করে তিনি ভাগ্য বদলাতে চান। কমলা চাষে তাকে সহযোগিতা করেন বগুড়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
পোল্যান্ডে চাকরিরত সফটওয়্যার প্রকৌশলী সন্তানের ইচ্ছায় কমলা চাষ শুরু করেন চার বছর আগে। সন্তান বিদেশে চাকরিতে চলে গেলে তিনি সন্তানের স্বপ্ন পূরণ করতে কমলা চাষের হাল ছাড়েনি। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে সমতল ভূমিতে সুমিষ্ট কমলা ফলাতে হয়। এখন তিনি কমলা চাষের পাশাপাশি কমলার চারাও করছেন। বগুড়ার আনাচে-কানাচে কমলা চাষ ছড়িয়ে দিতে চান আজিজ।

তার বাগানে অনেকে কমলা দেখতে, আবার অনেকে কমলা কিনতে আসছেন। কমলা বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। বাগানেই বসেই কমলা বিক্রি করেন তিনি। এক সময় যারা তাকে নিরুৎসাহিত করেছিল তারাও কমলার চাষ করে স্বাবলম্বী হতে চায় এখন। অনেক শিক্ষিত যুবকও এগিয়ে আসছেন কমলা চাষি আজিজের কাছে। তারা কমলার আবাদ করে বেকারত্ব মোচন করতে চান। এ পর্যন্ত তিনি কমলা বিক্রি করে প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় করেছেন। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমলা চাষ হচ্ছে। বগুড়াতেও শুরু হয়েছে কমলার চাষ। তবে এক এক ধরনের কমলা এক এক জমিতে হয়ে থাকে। মাটি ভালো ও সঠিক পরিচর্যা হলে ভালো ফলন আসবে। ধীরে ধীরে বগুড়ায় কমলা চাষ বাড়ছে। জেলায় এ পর্যন্ত ২ হেক্টরের বেশি জমিতে কমলা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে চায়না কমলা বেশি। তিনি আরো জানান, আব্দুল আজিজের বাগানের কমলা সম্পূর্ণ বিষ মুক্ত ও সুমিষ্ট। গাছের বয়স যতই বাড়বে ফলের উৎপাদন বাড়বে। ফলও আরো মিষ্টি হবে।
কমলা চাষে জৈব সার ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় এবং ফলও সুস্বাদু হয়। দেশে কমলা চাষ বৃদ্ধি পেলে বিদেশ থেকে আমদানি কমে যাবে। ফলে দেশের সম্পদ দেশেই থাকবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement