চট্টগ্রামসহ সারা দেশের জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে
- পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)
- ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৩
দেশে বছরজুড়ে ধনী-গরিব সকলের কাছেই মুড়ি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। পবিত্র রমজানেতো মুড়ি ছাড়া ইফতার যেন জমে না উঠে না। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ী বিগত প্রায় ২০-২২ বছর ধরে মানবদেহের জন্য অত্যন্তÍ ক্ষতিকর ইউরিয়া সার ও সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড বা হাইড্রোজ দিয়ে মুড়ি একইভাবে তৈরি করা মুড়ির মোয়া ও খই তৈরি করছে, যা চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশে কোনোপ্রকার বাধা ছাড়াই তা আবার বাজারজাত করে আসছে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। এভাবে বিভিন্ন ক্যামিকেল দিয়ে তৈরি মুড়ি বা মুড়ির মোয়া বা খই খাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে চট্টগ্রামসহ দেশের জনস্বাস্থ্য এখন অনেকটাই হুমকির মুখে পড়ছে।
সার ও ক্যামিকেল দিয়ে তৈরি মুড়ি দেখতে সুন্দর, সাদা ধবধবে হওয়ায় ও মোটা হওয়ায় এর চাহিদাও প্রচুরভাবে বেড়েই চলেছে। দেশব্যাপী বিশেষভাবে ক্যামিকেল মিশ্রিণ করে মুড়ি ও মুড়ির মোয়া বা খই তৈরির শত শত কারখানা গড়ে ওঠায় এবং তা কোনোরূপ বাধা ছাড়াই খোলা বাজারে বিক্রি হওয়ায় স্থানীয় সনাতন পদ্ধতিতে মুড়ি তৈরির সাথে জড়িত হাজার হাজার পরিবার এখন মুড়ি বিক্রি করতে না পেরে চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে এবং তাদের পুরোনো পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ইউরিয়া ও হাইড্রোজ দিয়ে তৈরি মুড়ি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করে আসলেও বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরে পড়ছে না। জনস্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করে অসাধু ব্যক্তিরা প্রশাসনকে ধোকা দিয়ে এ পদ্ধতিতে মুড়ি উৎপাদন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অপরদিকে দেশের জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনোপ্রকার নজর দাড়ি নেই বললেই চলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খোলা বাজারে মুড়ি ব্যবসায়ীরা জানায়, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাড়াও চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশে বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী মহল জনস্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মুড়ি তৈরির কারখানা স্থাপন করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টন মুড়ি উৎপাদন করে বাজারে ছাড়ছে। এদের বেতনভোগী লোকেরা বিশেষভাবে তৈরি এ মুড়ি চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের বাজারগুলোতে পাইকারিভাবে সরবরাহ করে আসছে।
দীর্ঘদিন ধরে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ ইউরিয়া সার ও হাইড্রোজ দিয়ে তৈরি মুড়ি বাজারে আসায় দেশী তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত সুস্বাদু মুড়ি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
সরেজমিনে দোহাজারী এলাকায় মুড়ি ব্যবসায়ীগণ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে জানান, তারা প্রায় ৩০-৪০ বছর ধরে মুড়ি বিক্রি করে আসছে। আগে তারা দেশী মুড়ি বিক্রি করত। হঠাৎ করে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি মুড়ি আসায় ক্রেতারা দেশী মুড়ির চেয়ে এ মুড়ির প্রতি ঝুঁকে পড়ছে বেশী। বর্তমানে ১ কেজি মুড়ি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারা জানান, পূর্বে নিজেদের বাড়িতে সনাতন পদ্ধতিতে মুড়ি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন বিশেষভাবে তৈরি মুড়ি বাজারে আসায় দেশী মুড়ির চাহিদা কমে গেছে। বায়োক্যামিস্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরিয়া ও ক্যামিকেল দিয়ে তৈরি মুড়ি খাওয়া মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব মুড়ি দীর্ঘদিন ধরে খেলে মানব শরীরের প্রয়োজনীয় অংশ কিডনি ও ব্রেইনের মারাত্মক ক্ষতিসাধন ও একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, হাইড্রোসালফাইড ও ইউরিয়া দিয়ে মুড়ি মোটা ও সাদা করা হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সব বয়সের প্রায় মানুষ কমবেশি মুড়ি খেয়ে থাকে, বিশেষ করে পবিত্র রমজানে মুড়ি চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ক্যামিকেল দিয়ে তৈরি মুড়ি খাওয়ায় ধীরে ধীরে তা পাকস্থলিতে পৌঁছে শরীরের অন্যান্য অর্গান ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এক কথায় আমাদের লাইফ সার্কেলের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এসব খাবার গ্রহণে শরীরে নাইট্রোজেন অক্সিজেনে প্রতিক্রিয়াশীল উপাদান তৈরি করছে ফলে মানবদেহের জিন পরিবর্তন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসছে। ডায়াবেটিস হচ্ছে ও লিভার কিডনি ক্ষতি করছে। কাজেই এসব ক্যামিকেল মিশ্রিত সব খাবার তৈরি ও বাজারজাত থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা