১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ইসলামী শ্রমনীতি ছাড়া দুঃখী মানুষের ভাগ্য বদল হবে না : গোলাম পরওয়ার

টাঙ্গাইলে গণমাধ্যমে ব্রিফ করছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার : নয়া দিগন্ত -


সাবেক এমপি ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন ছাড়া দুঃখী, অনাহারি মানুষের ভাগ্যের বদল হবে না। তাই ইসলামী শ্রমনীতি কায়েম করতে হবে। ইসলামী দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এবং শ্রমনীতির সংগ্রাম এক ও অভিন্ন। ইসলামী দ্বীন প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। ছাত্র আন্দোলন যেমন একটি নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে, তেমনি শ্রমিকদের এই বিশাল বিপ্লবী আন্দোলন আরেকটি নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিবে। সেই বাংলাদেশ হবে একটি নতুন কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের বাংলাদেশ।
গতকাল বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে গাজীপুর মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় দেড় হাজার কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে নির্বাচন পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ঢাকা উত্তর অঞ্চলের পরিচালক মনসুর রহমান। এতে ২০২৫-২৬ সেশনের জন্য গাজীপুর মহানগরীর সভাপতি নির্বাচিত হন হোসেন আলী এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মু. ফারদিন হাসান হাসিব।
ফেডারেশনের গাজীপুর মহানগর শাখার নবনির্বাচিত সভাপতি হোসেন আলীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মু. ফারদিন হাসান হাসিবের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, গাজীপুর মহানগরের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, সব কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অবাধ অধিকার দিতে হবে। একসময় ট্রেড ইউনিয়ন ছিল স্কুল অব কমিউনিজম। অবশেষে ইসলামী আদের্শ বিশ্বাসী কিংবদন্তি দুই শ্রমিকনেতা ব্যারিস্টার কুরবান আলী ও ব্যারিস্টার আখতার উদ্দিন শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করেন। তখন ট্রেড ইউনিয়নে নতুন ধারা তৈরি হলো। আজ বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন। আমাদের পূর্বসুরিরা যে পতাকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, সেটা বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পথচলা থামবে না। শ্রমিকদের সব ন্যায্য অধিকার আদায়ে শ্রমিক কল্যাণকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শ্রমিকদের মাঝে বেতন-বৈষম্য দূর করতে হবে। রাসূল সা: শ্রমিকদের বেতনের মান ঠিক করে দিয়েছেন। আর তা হলো, মালিক যা খাবে, যা পরবে, সেই সমমানের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা শ্রমিকদেরও করতে হবে। নারী শ্রমিকরা আজ দাবি জানিয়েছেন, প্রত্যেক কলকারখানা ও শ্রম অঙ্গনে নারীদের নামাজের আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করা।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারকে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বশীলদের আমরা বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো অপশক্তি ও আধিপত্যবাদীর চোখ রাঙানিকে আপনারা ভয় পাবেন না। সারা দেশের মুক্তিকামী মানুষ আপনাদের সাথে আছে। একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কাজ করতে হবে। নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে আজকের এই সম্মেলন ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ বলেন, শ্রমিক-মালিক পরিচয়ের ভিত্তিতে আল্লাহর কাছে মর্যাদা নিরূপিত হয় না। বরং তাকওয়ার মাধ্যমে মর্যাদা নিরূপিত হয়। সুতরাং তাকওয়া অর্জনে আমাদের অগ্রণী হতে হবে। আমরা আজ শ্রদ্ধা জানাচ্ছি গাজীপুরের শহীদ রুহুল আমিনের প্রতি। আমরা দাবি জানাচ্ছি, ২০০৬ সালের অক্টোবরে শহীদ রুহুল আমিন ভাইয়ের খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। শিল্প নগরী গাজীপুরের শ্রমিকজনতার প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আজকে নির্বাচিত নতুন নেতৃত্বের প্রতি আপনারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।
হারুনুর রশিদ খান বলেন, ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান সব শ্রমিকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ক্ষুধার্থ, বস্ত্রহীন মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। তাই শ্রমিকজনতাকে ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, শ্রমিক-কর্মচারী ভাই-বন্ধুরা আগস্টের গণ-আন্দোলনে রাজপথে দুর্বার ভূমিকা রেখেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশে বেতন ও আয়ের বৈষম্য আমরা আর সহ্য করব না। অতএব, শ্রমিকদের হিস্যা ঠিক রেখে নতুন বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ভোট চোর, ডাকাত ও খুনিদের আর ফেরত আসতে দেয়া হবে না। আগামী দিনে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন করা যেতে পারে
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালে দেশের সাধারণ মানুষ কোনো ভোট দিতে পারেনি। ভোট দিতে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ লীগ সাধারণ মানুষদের বলেছে আপনাদের ভোট হয়েছে। গতকাল বিকেলে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে জামায়াতে ইসলামের সদস্য শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠানে যোগদানের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ সব কথা বলেন। তিনি বলেন, ফ্রি, ফেয়ার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের সংস্কার করা প্রয়োজন। পুলিশ, নির্বাচন কমিশন ও জুডিশিয়ালসহ পাঁচ-সাতটা দফতরের সংস্কার করার পর যখন জাতি বুঝতে পারবে এখন নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়া প্রয়োজন, তখন নির্বাচন হতে পারে। সেই সময়টা বেশি লাগার কথা নয়। ডিসেম্বরের পর নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা করে ২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন শেষ করা যেতে পারে।
বর্তমান সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে কোনো দল ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করছে না। যারা রাজনীতি চর্চা করে তাদের মধ্যে একটি সরকারি দল, অপরটি হচ্ছে বিরোধী দল। সাইকেলের যেমন দু’টি চাকা না থাকলে যেমন সাইকেল চলে না, ঠিক তেমনি সরকার ও বিরোধী দল না থাকলে রাষ্ট্র চলে না। সমালোচনা রাষ্ট্রের একটি সৌন্দর্য। তিনি বলেন, আমরাও সরকারকে বলি আপনাদের প্রশাসনের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিদায় করুন। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার আহ্বান জানাই।

তিনি আরো বলেন, বিপ্লবের পরেই বর্তমান সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে। পাল্টা কু, জুডিশিয়াল কু, আনসার কাণ্ড, প্রশাসনের অস্থিরতা, হিন্দু ভাইদের নিয়ে রাজনীতি অন্যতম। শেখ হাসিনা দিল্লি বসে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ সবই সরকার মোকাবেলা করছে। এগুলো সামনে না এলে সংস্কার আরো তরান্বিত হতে পারত। সরকার যা করছে তাতে আমরা হ্যাপি।
টাঙ্গাইল জেলা জামায়াতের আমির আহসান হাবিব মাসুদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহ, জামালপুরের আমির মাওলানা আব্দুস সাত্তার, টাঙ্গাইল জেলার সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির, জেলা নায়েবে আমির খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement