১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কপ২৯ সম্মেলনে ৩০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি

-


কপ২৯ সম্মেলন থেকে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, যা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ন্যূনতম ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের চাহিদার তুলনায় খুবই কম। এমন প্রতিশ্রুতি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা অর্জনের চাহিদা মেটাতে মোটেই যথেষ্ট নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তারা বলছেন, জলবায়ু অর্থায়নের নামে ঋণনির্ভরতা বাড়াবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশেকে তার নিজস্ব সম্পদ নির্ভর জলবায়ু পরিকল্পনা তৈরির ওপর গুরুত্ব দেয়ার জন্য খাত সংশ্লিষ্টরা আহ্বান জানিয়েছেন।

গতকাল ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি (ডিআরইউ) অডিটোরিয়ামে ইক্যুইটিবিডির নেতৃত্বে জলবায়ু সম্মেলন নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘বাংলাদেশকে স্বনির্ভর জলবায়ু পরিকল্পনা করতে হবে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের বক্তারা এসব কথা বলেন।
ইক্যুইটিবিডির প্রকল্প পরিচালক আবুল হাসান তার মূল প্রবন্ধে বলেন, এবারের বাকু সম্মেলনে সর্বাধিক জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অগ্রাধিকারভিত্তিক দাবিগুলো বিশেষ করে প্রশমন ও অভিযোজন তহবিলের ভারসাসাম্যহীনতা দূর করা, ক্ষয়ক্ষতি তহবিল বৃদ্ধি ও অ-অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির অন্তর্ভুক্তি, নতুন জলবায়ু অর্থায়ন (এনসিকিউজি)-এর পরিমাণ ও কর্মকাঠামোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করার দাবি থাকলেও গুরুত্ব পায়নি। তিনি সরকারের কাছে কয়েকটি সুুপারিশ তুলে ধরে বলেন, জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় বৈশ্বিক সাহায্য ছাড়াই দেশকে নিজস্ব পরিকল্পনা করা উচিত। বিদ্যমান জলবায়ু পরিবর্তনের কৌশলগত পরিকল্পনার পর্যালোচনা করা দরকার এবং নিজস্ব সম্পদ দিয়ে স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক অংশগ্রহণমূলক অভিযোজন পরিকল্পনা করা এবং সরকারের ২০২৫ সাল পরিবর্তী এনডিসি কোনো উচ্চাভিলাষী পর্যালোচনায় না যাওয়া।

সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ (সিপিআরডি)-এর নির্বাহী পরিচালক মো: শামসুদ্দোহা বলেন, কপ২৯-এ উন্নত দেশগুলো কৌশলে বৈশ্বিক ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরে আসছে। উন্নত দেশগুলো প্যারিস চুক্তির শর্তগুলো থেকে সরে গিয়ে সব দায়বদ্ধতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা জলবায়ু তহবিল প্রক্রিয়ায় উন্নয়নশীল দেশকে শোষণ ও আধিপত্য বিস্তার করতে নব্য উদারনীতিবাদ নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করছেন। তাই আগামী সম্মেলনে জলবায়ু সম্মেলনে তহবিল পেতে আমাদের ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাকে পরিবর্তনে সংগ্রাম করতে হবে।
বাংলাদেশ ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরাম (বিসিজেএফ) সভাপতি মো: কাওসার রহমান বলেন, ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিলের নামে উন্নত বিশ্ব আমাদের ফাঁদে ফেলছে। আমরা যদি বেসরকারি খাত এবং বহুপক্ষীয় ব্যাংকগুলোকে এই প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করি, তাহলে আমরা আরো ফাঁদে পড়ব। উন্নত দেশগুলো জলবায়ু অর্থায়নের নামে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে এবং উন্নত দেশগুলো কৌশলে তাদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।

কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিডিপি)-এর নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন মাসুম বলেন, গত কপ২৯ সম্মেলনে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা উদ্ভাবনী ও কৌশলী ছিল না। বরং তারা দরকষাকষিতে সিএসও, সুশীলসমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারত; কিন্তু সরকার তা করেনি। তিনি সরকারকে পরের কপ সম্মেলনের জন্য এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করতে বলেন। কারণ, আগামী ব্রাজিল সম্মেলন ইন্টারসেকশনাল অ্যাপোস গ্রহণ করা হবে।
ইক্যুইটিবিডির চিফ মডারেটর রেজাউল করিম চৌধুরী সমালোচনা করে বলেন যে, সব দেশ তাদের পরিকল্পনা ঋণনির্ভর ও পরামর্শের ভিত্তিতে করছে, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক। ডেল্টা প্ল্যান-২০৩০ তার একটি উদাহরণ, যা আমাদের নিজস্ব জ্ঞান ও সম্পদের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। তিনি সরকারকে সব জলবায়ু সম্পর্কিত অথবা উন্নয়ন পরিকল্পনা পর্যালোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement