বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতির শীর্ষে পাসপোর্ট-বিআরটিএ-আইন রক্ষাকারী খাত : টিআইবি
- বাসস
- ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে, বিগত সরকারের আমলে সব থেকে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে পাসপোর্ট, বিআরটিএ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সেবাখাতগুলো।
সেই সাথে মে ২০২৩ থেকে এপ্রিল ২০২৪ সময়সীমার মধ্যে প্রস্তুতকৃত দুর্নীতিবিষয়ক জরিপে আরো জানা যায়, উল্লেখ্য সময়ে সর্বোচ্চ ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায়ে বিচারিক সেবা, বীমা ও ভূমি সেবাখাতগুলো শীর্ষে ছিল। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ টিআইবি কার্যালয়ে ‘সেবা খাতে দুর্নীতি : জাতীয় খানা জরিপ, ২০২৩’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, ভূমি, কৃষি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, বিচারিক খাতসহ ১৭টি সুনির্দিষ্ট খাতের ওপর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতে সেবা নিতে গিয়ে সেবাগ্রহীতারা কী ধরনের দুর্নীতির শিকার হন তা পরিমাপ করতে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সার্বিকভাবে দুর্নীতির শিকার ৭০ দশমিক ৯% খানা (পরিবার) এবং ঘুষের শিকার ৫০ দশমিক ৮% খানা। সেইসাথে সার্বিকভাবে খানাগুলো গড়ে ৫,৬৮০ টাকা ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে বাধ্য হয়েছে, যেখানে গড় ঘুষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বিচারিক সেবা, ভূমি সেবা ও ব্যাংকিং খাতে।
২০২৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের (সংশোধিত) ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং বাংলাদেশের জিডিপির শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ। পাশাপাশি, জরিপের তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০২৪ (এপ্রিল) পর্যন্ত সেবা খাতে জাতীয় পর্যায়ে মোট ঘুষের ন্যূনতম প্রাক্কলিত পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা।
এ ছাড়াও জরিপে আরো উঠে এসেছে যে, গ্রামাঞ্চলের খানার তুলনায় শহরাঞ্চলের খানাগুলোকে বেশি পরিমাণে ঘুষ দিতে হয়েছে এবং সেবা নিতে গিয়ে উচ্চ আয়ের তুলনায় নিম্ন আয়ের খানা তাদের বার্ষিক আয়ের অপেক্ষাকৃত বেশি অংশ ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে, যা নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর অতিরিক্ত বোঝার সৃষ্টি করেছে, যা বিগত সরকারের দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্বলতা হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে।
সার্বিক পর্যবেক্ষণ এ দেখা গেছে- নারী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা দুর্নীতি ও ঘুষের শিকার হওয়ার অর্থ তাদের সীমিত আর্থ-সামাজিক সক্ষমতার ওপর অতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি করে তাদের প্রান্তিকতা আরো বৃদ্ধি করছে।
পুরুষ সেবাগ্রহীতার তুলনায় নারী সেবাগ্রহীতাদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য হারে বেশি দুর্নীতির শিকার হওয়ার ফলে এসব খাতে নারীদের অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। যারা অভিযোগ করেছেন তাদের মধ্যে শূন্য দশমিক ৬% দুদক এবং একেবারেই নগণ্য সংখ্যক খানা (০০.০০১%) জিআরএস এর মাধ্যমে করলেও তাদের প্রায় ৫০% ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এবং প্রায় ২০% ক্ষেত্রে অভিযোগই গ্রহণ করা হয়নি, যা দুর্নীতির প্রতিকারে বিগত সরকারের প্রবল অনীহা ও চরম অব্যবস্থাপনাকে নির্দেশ করে বলে টিআইবি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তবে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সব পর্যায়ে দুর্নীতি ও ঘুষ কমিয়ে আনার অঙ্গীকার পূরণে সেবা খাতে দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া, সেবা পুরোপুরি ডিজিটাইজ করা, সেবা খাতে হয়রানি বন্ধে ‘গ্রিভেন্স রিড্রেস সিস্টেম (জিআরএস)’ ও অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা এবং অভিযোগগুলো নিয়মিত পর্যালোচনা করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশকিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে টিআইবি।
অন্যান্য সুপারিশ সমূহের মধ্যে আছে, সেবাদাতার জন্য যুগোপযোগী আচরণবিধি প্রণয়ন, সেবাগ্রহণের পর গ্রহীতার মতামত নেয়া, সেবাদানের সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেধা ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতি, সেবার মূল্য ও সেবা প্রাপ্তির সময় সম্পর্কিত তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা।
এর পাশাপাশি দ্রুত এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্য জনবল, অবকাঠামো ও লজিস্টিকসের বিদ্যমান ঘাটতি দূরীকরণ, কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণশুনানি ও সামাজিক নিরীক্ষা চালু করা, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদ বিবরণী বার্ষিকভিত্তিতে বাধ্যতামূলকভাবে হালনাগাদ করে জমা দেয়া ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করার সুপারিশ করেছে টিআইবি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা