৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

উত্থান ধরে রাখতে না পারায় বিক্রির চাপে ছিল পুঁজিবাজার

সূচক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
-


উত্থানের ধারাকে ধরে রাখতে পারছে না দেশের পুঁিজবাজার। বিদায়ী সপ্তাহে পতনের আধিক্য বেশি থাকায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছেড়ে দিয়ে মুনাফা তুলে নেয়ায় বিক্রির চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে সপ্তাহজুড়ে গড়ে বিক্রির চাপ ছিল ৫৪ শতাংশ। যেখানে ক্রেতার চাপ ৪৬ শতাংশ ছিল। তবে সূচক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। ডিএসইর বাজারমূলধন সপ্তাহ শেষে ০.২৫ শতাংশ বা এক হাজার ৬৩৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা বেড়েছে। ব্যাংক ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির শেয়ার বেচার চাপ ডিএসইতে বেশি ছিল। তবে কেনার প্রতি আগ্রহ ছিল বি এন ও জেড শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ারে। এ শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ারের ডিএসইতে বাজারমূলধনে অংশীদারিত্ব কমে এখন ৮৬.৯০ শতাংশে।

লেনদেনের সাপ্তাহিক তথ্য থেকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে মিশ্রভাব থাকলেও বাজারমূলধন বেড়েছে।
ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৯০টি কোম্পানি। এর মধ্যে ২১৩টির বা ৫৪.৬১ শতাংশে দর বেড়েছে, ১২৬টির বা ৩২.৩০ শতাংশের দর কমেছে, ৫১টির দর অপরিবর্তিত ছিল এবং ২৩টির লেনদেন হয়নি। ডিএসইর প্রধান সূচক সপ্তাহ শেষে ৪.৯৯ পয়েন্ট কমে এখন পাঁচ হাজার ১৯২.৫৯ পয়েন্টে নেমেছে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ২.৮২ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯১৬.২৩ পয়েন্টে, শরিয়াহ ১৫.৩৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৬৬.৮৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসএমই সূচক ৮৬.৩৩ পয়েন্ট বেড়ে এখন এক হাজার ৯১.৪৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। গড় লেনদেন টাকায় কমেছে ১৮.১৪ শতাংশ বা ৮৪ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। আগের সপ্তাহের ৪৬৫ কোটি ৮০ লাখ ৪০ হাজার টাকা লেনদেনের জায়গায় গেলো সপ্তাহে হয়েছে ৩৮১ কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকার।

গড় শেয়ার বেচাকেনা কমেছে ১১.২২ শতাংশ। ১৫ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজারটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনার জায়গায় গেলো সপ্তাহে হয়েছে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজারটি। ফলে কমেছে এক কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজারটি।
ডিএসইতে মোট লেনদেন কমেছে ৪২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহের দুই হাজার ৩২৯ কোটি ২ লাখ ১০ হাজার টাকার লেনদেনের বিপরীতে বিদায়ী সপ্তাহে হয়েছে এক হাজার ৯০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। আর মোট শেয়ার বেচাকেনা কমেছে সাড়ে তিন কোটি। আগের সপ্তাহে যেখানে ১৯ কোটি ৪০ লাখ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছিল, সেখানে বিদায়ী সপ্তাহে হয়েছে ১৫ কোটি ৯০ লাখ হাজারটি। ডিএসইতে গত সপ্তাহে ব্যাংকের শেয়ার কেনার চাপ বেশি ছিল। ব্লক মার্কেটে ৮৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার এবং এসএমইতে ৫৩ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়েছে।

সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ ১০
গেলো সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে নিউলাইন ক্লোথিংসের। সপ্তাহজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির দর কমেছে ২৪.৮১ শতাংশ। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির দর ছিল ১২ টাকা ৯০ পয়সা। গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর কমেছে ৩ টাকা ২০ পয়সা। দরপতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফিনিক্স ফাইন্যান্সের শেয়ার দর কমেছে ১১.১১ শতাংশ। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির দর ছিল ৪ টাকা ৫০ পয়সা।

সাপ্তাহিক লেনদেনে শীর্ষ ১০
গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে এনআরবি ব্যাংক। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ৭৮ কোটি ৫১ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪.১২ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড় লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৭০ লাখ ৩০ হাজার টাকার। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সবশেষ দর ছিল ১৪ টাকা ৩০ পয়সা। লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে লাভেলো আইস্ক্রিম। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ৫৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৩.১৪ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড় লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৯৭ লাখ টাকার। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সবশেষ দর ছিল ৮৯ টাকা ৮০ পয়সায়।

চট্টগ্রাম স্টকে সূচকের পতন অব্যাহত
আগের সপ্তাহের তুলনায় গেলো সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটে দর বৃদ্ধি ও দর পতনে কোম্পানির সংখ্যা কাছাকাছি। শেয়ার বেচকেনাও কম। এক কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৭৩০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৩০ কোটি ৪২ লাখ ১৮ হাজার ৬৩১ টাকা বাজারমূল্যে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১০ কোটি টাকা কম। মূল্যসূচকের ক্ষেত্রে সিএসই-৩০ সূচক ২০০ পয়েন্টের বেশি কমেছে। সিএএসপিআই ৫১.৯৬ পয়েন্ট, এসএমই সূচক ৩০.০৪ পয়েন্ট ও সিএসসিএক্স ২৯.০৬ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩২২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৯টির, দর পতনের শিকার ১৪৩টির এবং দর অপরিবর্তিত ৩০টির। বাজারমূলধনে অংশীদারিত্ব এ শ্রেণীর কোম্পানির ৬০.৪১ শতাংশ, বি শ্রেণীর ৩২.৭১ শতাংশ, এন শ্রেণীর ৪.২৭ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর ২.৬০ শতাংশ। বাজারমূলধন এখন ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৯৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

রয়্যাল ক্যাপিটালের পর্যালোচনা
রয়্যাল ক্যাপিটাল ফিন্যান্সিয়াল পোর্টালের পর্যালোচনা অনুযায়ী, গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। ডিএসইর মূল সূচক আগের সপ্তাহের তুলনায় ০.১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বেশির ভাগ সেক্টরই ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বিনিয়োগকারীরা বাজারে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর আশানুরূপ আর্নিং না আসায় বিনিয়োগের বিষয়ে কিছুটা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। গড় টার্নওভার ১৮.১৪ শতাংশ কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ২৬ টি শেয়ারের বাজার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৮৮টি শেয়ার এর বাজার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। বাজার মূল্যের ভিত্তিতে ১৪টি সেক্টর এই সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে যার মধ্যে টপ গেইনার ছিল তথ্য প্রযুক্তি, সেবা ও ভ্রমণ খাত।


আরো সংবাদ



premium cement