বিভাজন নয় এখন ঐক্য প্রয়োজন : মির্জা ফখরুল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৩
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর হয়ে গেছে আমরা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে পারিনি। আমরা সব সময় যুদ্ধ করছি, লড়াই করছি, নিজেরা ভাইয়ে ভাইয়ে রক্ত ঝরাচ্ছি। কিন্তু ওই পথে যাওয়ার জন্য কেউ সেভাবে চেষ্টা করছি না। ফ্যাসিবাদ পরাজিত হয়েছে। তবে ফ্যাসিবাদ যেকোনো সময় আবার ফিরে আসতে পারে। আমরা সেই রাস্তা যেন তৈরি করে না দেই। বিভাজন নয়, আমাদের এখন প্রয়োজন ঐক্য।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় কবিতা পরিষদের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি করি, সাহিত্যিকদের অনুরোধ করব- আপনাদের দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। আগে বলতে পারেননি। এখন জনগণকে সঠিকভাবে উদ্বুদ্ধ করুন, অনুপ্রাণিত করুন। সবার মত যে এক হবে তা তো না। আমাদের ভিন্ন ভিন্ন মত থাকবে। এসব মতগুলোকে নিয়ে এক সাথে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই হওয়া উচিত। সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন, ন্যূনতম সেটি করা এবং নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্টে যাওয়া। অনেকেই বলছেন, নির্বাচনই তো গণতন্ত্র নয়, অবশ্যই না। কিন্তু তার জন্য (গণতন্ত্রের জন্য) একটা প্রক্রিয়া তো লাগবে। সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যদি না যাই, সেই জায়গায় আমরা পৌঁছাতে পারব না। এ জন্য খুব মোটা দাগে আমাদের সবারই এখন যেটা করা উচিত, অনৈক্য সৃষ্টি না করা। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যে সুযোগ পেয়েছি, সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে অন্তত কিছুটা হলেও সামনের দিকে এগিয়ে যাই। আমি শুধু এতটুকু বুঝি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার। সেই যাওয়াটা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক লিবারেল ডেমোক্র্যাসির পথে এগিয়ে যাওয়া। আমরা কোনো বিভাজন সৃষ্টি না করি। এই মুহূর্তে প্রয়োজন সবাইকে শান্ত থেকে বিষয়গুলোকে অনুধাবন করা। এ ছাড়া আর কোনো পথ আছে কি না আমি অন্তুত মনে করি না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাকে কয়েকজন ফোন করেছিলেন। তাদের (ভারতীয় মিডিয়া) প্রশ্ন একটাই, ইসকনের ব্যাপারে আপনারা কি করছেন? এই প্রশ্নটা একেবারেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একটা অবস্থা তারা তৈরি করতে চায়, সেই অবস্থা প্রথমবার চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। এখন নতুন করে আবার সেই অবস্থা তৈরি করতে চায়। এ ব্যাপারে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।
সভায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সমস্ত কিছুকে একটা বিকৃত অর্ধসত্য মিলিয়ে টিলিয়ে এককভাবে তারা (আওয়ামী লীগ) ন্যারেটিভ তৈরি করেছে। সেই ন্যারিটিভের উদ্দেশ্য হলো চিরদিন যেন আওয়ামী লীগ সরকার থাকে। ওবায়দুল কাদের ঐতিহাসিক একটা সত্য কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনে আমাদের বিজয়ী হতে হবে। তা না হলে গাট্টি বোস্কা নিয়ে বিদেশে যেতে হবে কিংবা জেলের ভাত খেতে হবে। সুতরাং তারা বুঝেছে যে বাঘের পিঠে চড়ছি। নামা অতো সহজ না। তাদের জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে গেছিল। তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ খালি একক ব্যক্তিত্বে হয় নাই। আমি মনে করি ছবি নামানো না, এখানে একাধিক ছবি থাকা উচিত। ইতিহাসের এই সত্যটা আমাদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশের নায়ক কোনো ব্যক্তি না, নায়ক হলো দেশের জনগণ। সেনাপতি একাধিক ছিল- শেরেবাংলা, মওলানা ভাসানী, মণি সিং, অমল সেন, কর্ণেল তাহের, জেনারেল জিয়াউর রহমানরা। তাদের স্বীকৃতি দিতে হবে। তাহলে প্রপার ন্যারেটিভটা এখানে আসবে।
নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে কোনো সংস্কার টিকবে না। কনস্টিটিউশন জটিল জিনিস। আমি তো উপদেষ্টামণ্ডলীর মধ্যে কনস্টিটিউশনাল চেঞ্জ বুঝাতে পারবেন এ রকম মানুষই দেখি না। একজন-দুইজনের নাম যদি বলতেও পারি, তাকে কেউ দেখতে পারে না এখন। এ রকম একটা অবস্থা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এটা কোথায় যাবে আমি বলতে পারি না। কিন্তু এটা লাগবে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, চট্টগ্রামের ঘটনা একটা উসকানি ছিল। সেটি হলো- পাল্টা অভ্যুত্থানের একটা তৎপরতা জারি রাখা যায় কি না।
গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশসহ যেভাবে বাংলাদেশে আজকে এই অভ্যুত্থান এবং জনআকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে তৎপরতা চলছে সেখানে আমাদের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনের সঞ্চালনায় সভায় বিএনপির নুরুল ইসলাম মনি, লেখক সলিমুল্লাহ খান, গণ অধিকার পরিষদের রাশেদ খান, কবি হাসান হাফিজ, লেখক আবু সাঈদ, কবি সোহরাব হাসান, কবি মাহবুব মোর্শেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা