ছাগলনাইয়া সীমান্তে বৈধহাটে অবৈধ পণ্য, ক্ষতি বাংলাদেশের
আবারো সীমান্তহাট চালুর গুঞ্জনে উদ্বেগ- মুহাম্মদ আবুল হাসান ছাগলনাইয়া-পরশুরাম (ফেনী)
- ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪১
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অননুমোদিত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি, সীমান্তহাট অব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা জটিলতা ও অসম বাণিজ্য ঘাটতিসহ নানা সমস্যায় বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের পর বন্ধ রয়েছে ফেনীর ছাগলনাইয়া সীমান্তহাট। আবারো সীমান্তহাট চালুর গুঞ্জনে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ। ছাগলনাইয়া সীমান্তে বৈধহাটে অবৈধ পণ্যের বিকিকিনি ও অসম বাণিজ্যে ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ এমন অভিযোগ হাটটি চালুর শুরু থেকেই।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর ভারতের ত্রিপুরার শ্রীনগর মহকুমার কৃঞ্চনগর পঞ্চায়েত ভবনে দুই দেশের মধ্যে বৈঠকের পর বাংলাদেশের মোকামিয়ায় সীমান্তহাটের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা মোকামিয়া এবং ভারতের ত্রিপুরার শ্রীনগর এলাকায় জিরো পয়েন্ট এলাকায় সীমান্তহাটের যাত্রা শুরু হয়। ভারতের কাঁটাতারের বিচ্ছেদ ছেড়ে দুই-তিন যুগ পরে একে অন্যের কাছাকাছি আসার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল সীমান্তহাট। বাণিজ্যিক সমতার ভিত্তিতে সীমান্তহাট থেকে বাংলাদেশ ও ভারত লাভবান হওয়ার কথা থাকলেও ভারতীয় প্রশাসনের সহায়তায় সে দেশের ব্যবসায়ীরা অননুমোদিত ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পণ্যের বিক্রি করে একতরফা বাণিজ্য সুবিধা লুফে নিয়েছে বলে অভিযোগ দেশীয় ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের।
দুই দেশ তাদের স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তরকারি, ফলমূল, খাদ্যসামগ্রী, অপ্রধান বনজ পণ্য, গামছা, লুঙ্গি, শাড়ি, গৃহস্থালি ও কৃষি উপকরণ দা, লাঙ্গল, কুঠার, বেলচা, বাটাল, তৈরী পোশাক, স্টেশনারি, প্রসাধনসামগ্রী, টয়লেট্রিজ, প্লাস্টিক পণ্য, উৎপাদিত স্থানীয় দেশজ পণ্য সীমান্তহাটে বিক্রির কথা থাকলেও এক দিনের জন্য তা মানেনি ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগ সীমান্তহাট চালুর শুরু থেকেই ছিল। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা মাছ, শুঁটকি, মুড়ি-চানাচুর,বিস্কুটসহ অল্প সংখ্যক কিছু পণ্যের পসরা বসিয়ে বিক্রি করত। অপর দিকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা শাড়ি, থ্রিপিছ, বিভিন্ন মসলা, হরলিক্স, গার্মেন্ট সামগ্রী, কসমেটিকস, তেল, বিদেশী ক্রিম, পাউডার, জুস, লজেন্স, চা-পাতা, বিস্কুট, চানাচুর, পাউডার দুধ, দনিয়া, জিরা, জুসসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী শুরু থেকে অবাধে বিক্রি করে সীমান্তহাটে অসম বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করে। সীমান্তহাট থেকে শুল্কবিহীন ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পণ্য কেনার সুবিধা নিয়ে ক্রেতারা চোরাচালান সিন্ডিকেট তৈরি করা নানা নামে, নানান কৌশলে সীমান্তহাট থেকে হরেক রকমের পণ্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এনে স্থানীয় হাট-বাজারে দোকানিদের সরবরাহ করার অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। এতে বাংলাদেশী পরিবেশক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছিল সবসময়। রাজস্ব হারিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রতি মঙ্গলবার হাটবারে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও ভারতীয় ব্যবসায়ীরা গাড়ি হাঁকিয়ে বস্তায় বস্তায় ও কাটুনে পণ্যসামগ্রী নিয়ে সীমান্তহাটে প্রবেশ করে। কিন্তু বিজিবি ও কাস্টমস সদস্যদের কাছে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে সীমান্তহাটে বৈধ-অবৈধ কী ধরনের পণ্য ঢুকছে এবং সীমান্তহাট থেকে দেশের অভ্যন্তরে কী ঢুকছে তা নিশ্চিতে চোখ দিয়ে একনজর দেখা ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়িত্বে নিয়োজিতদের বিকল্প সুযোগ কম বলে অভিযোগ স্থানীয় বাংলাদেশীদের।
পূর্বে সীমান্তে অবৈধ পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে যেসব পণ্য আসত, বর্তমানে সীমান্তহাটে অবাধে ওই সব পণ্য বিক্রি হওয়ায় সীমান্তহাট ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে চোরাকারবারি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। এক সময়ে সীমান্তহাটকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের কাছে সীমান্তহাটের ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের পর গত ২২ অক্টোবর থেকে বন্ধ রয়েছে ছাগলনাইয়া সীমান্তহাট। এ দিকে সীমান্তহাট আবারো চালুর ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। ফেনী জেলা প্রশাসকের অফিস ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এ নিয়ে চিঠি চালাচালি চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে গত মঙ্গলবার ফেনীর ছাগলনাইয়া পৌরসভার জমাদ্দার বাজারের মৌসুমী স্টোরের মালিক শহীদ উল্লাহ রানা জানিয়েছেন, সীমান্তহাট বন্ধই থাকা উচিত।
ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ নুর আহম্মদ মজুমদার নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ছাগলনাইয়া সীমান্তহাটের কারণে বাংলাদেশের কোন উপকারই হয়নি। সীমান্তহাটের কারণে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সীমান্তহাট স্থায়ীভাবে বন্ধ চান তিনি। ফেনী জেলা জামায়াতের সাবেক আমির একেএম সামছুদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা সীমান্তহাটে তেমন কোনো ব্যবসা করতে পারেনি । দেশের স্বার্থে সীমান্তহাটটি বন্ধই রাখা উচিত বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা