মুদ্রণের শুরুতেই ত্রুটিপূর্ণ বই আনন্দ প্রিন্টার্সকে শোকজ
সিংগাইরে ১০ হাজার কপি জব্দ- শাহেদ মতিউর রহমান
- ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
২০২৫ সালের প্রাথমিকের বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণের শুরুতেই একটি প্রেস থেকে ১০ হাজার কপি ত্রুটিপূর্ণ বই জব্দ করা হয়েছে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এক মন্ত্রীর আপন ছোট ভাইয়ের প্রেসে এই ত্রুটিপূর্ণ বই ধরা পড়েছে। জানা গেছে আওয়ামী সরকারের সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের আপন ছোট ভাই রব্বানী জব্বারের মালিকানাধীন ‘আনন্দ প্রিন্টার্স’ প্রাথমিকের বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণ কাজ শুরু করার পরপরই সেখানে ১০ হাজার কপি ত্রুটিপূর্ণ বই জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে প্রেস মালিকদের মধ্যে ব্যাপক হইচই শুরু হয়েছে। তাদের অনেকে বলছেন, পাঠ্যবই মুদ্রণ কাজ শুরু হওয়ার মাত্র এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই যদি এভাবে ত্রুটিপূর্ণ বই ধরা পড়ে তাহলে সামনের দিনগুলোতে কাজের চাপ যখন আরো বাড়বে তখনতো মানসম্পন্ন বই পাওয়া আরো দুস্কর হয়ে পড়বে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আনন্দ প্রিন্টার্সের মালিক রব্বানী জব্বার ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিকের কয়েকটি লটে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নিজস্ব পরিদর্শক টিম সম্প্রতি আনন্দ প্রিন্টার্সের ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের সিংগাইরের বিনোদপুরে ৬৯০/১ হোল্ডিংয়ের প্রেসে গিয়ে ১০ হাজার কপি ত্রুটিপূর্ণ বই জব্দ করেন। পরির্দশক টিমের এক সদস্য জানান, আনন্দ প্রিন্টার্সের সিংগাইরের একটি প্রেসে প্রাথমিকের পাঠ্যবই পরিদর্শন করে দেখা যায় সেখানে বাঁধাইকৃত বইগুলোতে ঠিকমতো গ্লু বা আঠা লাগানো হয়নি। ফলে পাঠ্যপ্রস্তকে সামান্য চাপ লাগলেই সেগুলো খুলে যাচ্ছে। পরিদর্শক টিম আরো জানায়, একই প্রেসে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণীর ইংরেজি বইয়ের ৭৭ ও ৭৮ নং পৃষ্ঠা বাঁধাই করা হয়নি। এ ছাড়া বই ভেতরেও আলগা হয়ে আছে। এগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার মতো উপযোগী নয়। প্রেসে গিয়ে দেখা গেছে কাটিংকৃত ১০ হাজার কপি পাঠ্যপুস্তক সমানভাবে কাটিং করা হয়নি। ফর্মা ও পৃষ্ঠা পাঠ্যপুস্তকের উপরে-নিচে বিভিন্নভাবে আঁকাবাঁকা হয়ে আছে।
সূত্র আরো জানায়, প্রাথমিক স্তরের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ কাজ তদারকির জন্য এনসিটিবি কর্তৃক গঠিত মনিটরিং কমিটি গত ১৯ নভেম্বর আনন্দ প্রিন্টার্সের মানিকগঞ্জের প্রেস পরিদর্শন করেন। সেখানে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ৪১ ও ৫০ নং লটের তিন লাখ কপি পাঠ্যবই ছাপানোর জন্য দেয়া হলেও পরিদর্শনকালে দেখা যায় ইতোমধ্যে মুদ্রণকৃত ২০ হাজার কপি বই বাঁধাই করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখিত ১০ হাজার কপি বইয়ের নানা ধরনের ত্রুটি ধরা পড়েছে। এ দিকে আনন্দ প্রিন্টার্সের এই বইয়ের ত্রুটি ধরা পরার পর প্রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ মুদ্রিত এই বইগুলো নোটিশ পাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। একই সাথে ইন্সপেকশন এজেন্টের কাছ থেকে ত্রুটিমুক্তের অনুমোদন নিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ত্রুটিপূর্ণ সব বই বাতিল বা কর্তন করা হবে।
ত্রুটিপূর্ণ ১০ হাজার বইয়ের বিষয়ে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় আনন্দ প্রিন্টার্সের মালিক রব্বানী জব্বার নয়া দিগন্তকে বলেন, এখনতো প্রস্তুতি লেভেলের কাজ চলছে। সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতি থাকতে পারে। সামনে এটা আমরা ঠিক করব। এনসিটিবির দেয়া নোটিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের তারা রিচেক করতে বলেছেন। এটা কোনো নোটিশ নয়।
এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ বি এম রিয়াজুল হাসান গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, পাঠ্যবইয়ের মানের বিষয়ে আমরা কাউকেই কোনো ছাড় দেবো না। তাই শুরু থেকেই আমাদের পরিদর্শন টিমকে আরো শক্তভাবে সবকিছু মনিটরিং করতে নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা চাই যেভাবেই হোক আগামী বছর শিক্ষার্থীদের হাতে মানসম্পন্ন বই তুলে দিতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা চাই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা