২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অনন্য সংগ্রহশালা বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন

অনন্য সংগ্রহশালা বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন -

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এক অনন্য সংগ্রহশালা। চারদিকে সবুজের সমারোহ। অনুপম স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন। অপরূপ নৈসর্গিক লীলাভূমি। সোনারগাঁয়ের অন্যতম পর্যটন স্থান এটি। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। দেশের অবহেলিত গ্রামবাংলার নিরক্ষর শিল্পীদের হস্তশিল্প, জনজীবনের নিত্যব্যবহার্য পণ্যসামগ্রীতে ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের রূপ ফুটে উঠেছে এ ফাউন্ডেশনে। প্রথমেই নজর কাড়বে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন এক অট্টালিকা ভবন বড় সর্দার বাড়ি। বড় সর্দার বাড়িটি আরো আকর্ষণ করতে সংস্কার করেছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়াংওয়ান করপোরেশন। বড় সর্দার বাড়িটি জাদুঘরের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্য ভাস্কর্য দুটি ঘোড়া যা সোনারগাঁও জাদুঘরের কথা বললেই এই দুই ঘোড়া দেখলে সবাই অনায়াসে চিনতে পারে।
লোকশিল্প গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে অযতœ অবহেলায় ছড়িয়ে রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প সম্ভার বিলুপ্ত হতে চলেছে। অথচ এ শিল্প সম্ভারই আমাদের দেশের জাতীয় ঐতিহ্যবাহী গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এ শিল্পকে রক্ষা করার জন্য প্রথমেই এগিয়ে আসেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল জনপদ বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁওয়ে আবহমান বাংলার লোকজ সংস্কৃতির ধারাকে পুনরুজ্জীবন, সংরক্ষণ ও বিপণনের প্রয়োজনে ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ গড়ে তোলেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। আর তখনই জয়নুলের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় এ ফাউন্ডেশন। সোনারগাঁওয়ের পানাম নগরীর একটি পুরনো বাড়িতে ফাউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৮১ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর শতাধিক বছরের পুরনো ইছাপাড়ায় গোপীনাথ সর্দার বাড়িতে ফাউন্ডেশনটি স্থানান্তরিত হয়। ১৯৯৮ সালের ৬ মে এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়। এখন সর্দার বাড়ির পূর্বদিকে রয়েছে সুরম্য প্রশাসনিক ভবন,গ্যালারি ভবন, গ্রন্থাগার, কারুশিল্প গ্রাম, কারুপল্লী যা শিল্পী জয়নুল আবেদীন দেখে যেতে পারেননি।

ফাউন্ডেশন সূত্র জানান, বাঙালি সংস্কৃতির ক্ষেত্র গ্রামের লোক জীবনের লোক ও কারুশিল্পের ঐতিহ্যের সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে ১৭০ বিঘা আয়তনের কমপ্লেক্সে খোলা আকাশের নিচে বাংলার প্রকৃতি ও পরিবেশে গ্রামীণ রূপ কেন্দ্রিক এ দেশের সাধারণ মানুষের শৈল্পিক কর্মকাণ্ডের পরিচয়কে তুলে ধরতে শিল্পী এই জাদুঘর গড়ে তোলার প্রয়াস নেন এবং উন্মুক্ত পরিবেশে ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সটি (বড় সর্দার বাড়িতে) লোক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল লোক কারুশিল্প জাদুঘরের গ্যালারিগুলোতে। দর্শনার্থীদের জন্য মোট ১১টি গ্যালারি রয়েছে। প্রতিটি গ্যালারিতে দুর্লভ সব ঐতিহ্যের নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।
সোনারগাঁওয়ে জাদুঘরে বেড়াতে আসা পর্যটক নরসিংদীর শিক্ষক রেজাউল হক তন্ময় জানান, গ্রামীণ নারীদের নকশিকাঁথা বুননের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে এখানে। এক কথায় বলতে গেলে এখানে খুবই চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আবহমান গ্রামবাংলাকে। গ্রামবাংলার মানুষের দৈনন্দিন কাজ-কর্মের ছবি নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা দেখে প্রাচীন বাংলার মানুষের গ্রামীণ জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা লাভ করা যায়। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক (উপসচিব) কাজী মাহবুবুল আলম জানান, বর্তমানে জাদুঘর ভবনে এক হাজারের বেশি লোক ও কারুশিল্পের নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে। আরও তিন হাজারেরও বেশি কারুশিল্প নিদর্শন ফাউন্ডেশনের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। এসব সংরক্ষিত সামগ্রী প্রদর্শনীর জন্য জাদুঘর ভবন সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন ভৌত সুবিধাদি বৃদ্ধির একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement