ইসরাইলি বোমায় লেবাননে ২ শতাধিক শিশু নিহত
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪
লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসনে গত দুই মাসে দুই শতাধিক শিশু নিহত এবং ১১০০ শিশু আহত হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে জাতিসঙ্ঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ। এক বছরের বেশি সময় ধরে লেবাননের প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সাথে ইসরাইলের চলমান সঙ্ঘাত সম্প্রতি সর্বাত্মক যুদ্ধের রূপ নেয়। ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার জেনিভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, লেবাননে দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে দুই শতাধিক শিশু নিহত হয়েছে। শিশুদের মৃত্যু নিয়ে এমন এক উদ্বেগজনক দশা তৈরি হয়েছে; যেখানে সহিংসতা থামাতে সক্ষম ব্যক্তিদের নিষ্ক্রিয়তা ফুটে উঠছে। লেবাননের শিশুদের জন্য মৃত্যু এখন ‘ভয়ের নীরব স্বাভাবিকতায়’ পরিণত হয়েছে। খবর : আলজাজিরা, রয়টার্স ও বিবিসি।
কারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা সংবাদমাধ্যমে নজর রাখেন, তাদের কাছে এটা স্পষ্ট। এল্ডার বলেন, লেবাননের সঙ্ঘাতের সাথে গাজার ঘটনাপ্রবাহের ‘রোমহর্ষক মিল’ রয়েছে, যেখানে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে ১৩ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ৪৩ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু রয়েছে। যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ শিশুকে মানসিক সহায়তা এবং চিকিৎসা সামগ্রী, খাবার ও ঘুমের ওষুধ দিচ্ছে ইউনিসেফ। গাজার মতোই লেবাননেও দুর্বিষহ পরিস্থিতি নীরবে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এল্ডার।
৩ লেবানিজ সৈন্য নিহত
এদিকে ইসরাইলের হামলায় লেবাননের আরো তিন সৈন্য নিহত হয়েছেন। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে একটি সামরিক ঘাঁটিতে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় তারা প্রাণ হারান। এতে করে দেশটিতে ইসরাইলের হামলায় নিহত সেনার সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়ে গেল। গতকাল বুধবার সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের সারাফান্দ শহরে একটি সেনা ঘাঁটিতে ইসরাইলি বিমান হামলায় লেবাননের তিনজন সৈন্য নিহত হয়েছেন এবং ওই ঘাঁটির কাছাকাছি বসবাসকারী কমপক্ষে ১৭ জন বেসামরিক লোক আহত হয়েছেন বলে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
লেবাননের সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার গভীর রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া একটি পোস্টে বলেছে, ‘ইসরাইলি শত্রুবাহিনী দক্ষিণে সারাফান্দ শহরে একটি সেনা কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা করেছে, যার ফলে তিন সেনা শহীদ হয়েছেন।’ লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইলি হামলায় দেশজুড়ে একদিনে আরো ২৮ জন নিহত এবং আরো ১০৭ জন আহত হয়েছেন। এতে করে ২০২৩ সালের অক্টোবরে হিজবুল্লাহ এবং ইসরাইলের মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে লেবাননে মৃতের সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ৫৪৪ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন আরো ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ।
এদিকে সারাফান্দে হামলার আগে লেবাননের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ফাদি ঈদ বার্তাসংস্থা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছিলেন, গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৮ জন সেনা নিহত হয়েছে। আর সর্বশেষ হামলায় আরো তিনজনের প্রাণহানির ফলে লেবাননের সেনাবাহিনীতে মোট মৃতের সংখ্যা ৪১ জনে পৌঁছেছে বলে এপি জানিয়েছে। এর আগে গত রোববার ইসরাইলি বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব হাসবাইয়া প্রদেশের মারিতে লেবাননের একটি সামরিক পোস্টে বোমা হামলা চালায়। এতে দুই সেনা নিহত এবং আরো তিনজন গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
৪ শান্তিরক্ষী আহত
অন্যদিকে লেবাননে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর আবারো হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। দক্ষিণ লেবাননে শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে রকেট হামলার কারণে এই ঘটনা ঘটে। বুধবার এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি দক্ষিণ লেবাননে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা সংস্থার বরাতে বলেছে, একটি ঘাঁটিতে রকেট আঘাত হানার ঘটনায় তাদের চারজন সেনা আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার শান্তিরক্ষা মিশনের সৈন্য ও ঘাঁটিতে গোলাবর্ষণের তিনটি পৃথক ঘটনার মধ্যে এটি একটি।
লেবাননে নিয়োজিত জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইউনাইটেড ন্যাশনস ইন্টারিম ফোর্স ইন লেবানন (ইউনিফিল) জানিয়েছে, ইসরাইলের সীমান্তের কাছে রামিয়াহ গ্রামের পূর্বে একটি ঘাঁটিতে রকেট আঘাত হানার পর ঘানার চারজন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়েছে। অবশ্য তাদের আঘাতের তীব্রতা এখনো অজানা। ইউনিফিল আরো বলেছে, শামার একটি ঘাঁটিও রকেটের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ঘটনার জন্য ‘লেবাননের মধ্যে থাকা অ-রাষ্ট্রীয় শক্তি’ সম্ভবত দায়ী। তবে সেখানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বর্তমানে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে দক্ষিণ লেবাননে স্থল আক্রমণ চালাচ্ছে। রকেট হামলার উভয় ঘটনার জন্য লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দায়ী করেছে তারা। যদিও হিজবুল্লাহ এখনো এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এছাড়াও মঙ্গলবার ইউনিফিলের একটি টহল দল খিরবাত সিলিম গ্রামের উত্তর-পূর্ব দিকে একটি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। সেই ঘটনায়ও কেউ আহত হয়নি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া এক বিবৃতিতে ইউনিফিল তার জনবল এবং অবকাঠামোর ওপর হামলার নিন্দা করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়মিত হামলার ধরন অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে যেকোনো আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইন এবং রেজুলিউশন ১৭০১ এর স্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা