এবারো জলবায়ু সম্মেলন থেকে ক্ষতিপূরণ তহবিল আদায় অনিশ্চিত
- শাহ আলম, বাকু, আজারবাইজান থেকে
- ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪১
এবারো জলবায়ু সম্মেলন থেকে ক্ষতিপূরণের তহবিল আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতের অনুপস্থিতিতে অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত আসবে না বলেই মনে করছেন দেশের জলবায়ু গবেষকরা। তারা বলছেন, সবচেয়ে দূষণকারী দেশগুলোর অনীহাতে জলবায়ু তহবিল গড়ে উঠছে না। অথচ প্রতি বছরই পরিবর্তিত আবহাওয়ায় জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব তীব্র হচ্ছে বাংলাদেশে।
এ বছর ফেনী, কুমিল্লায় অসময়ে বন্যা হয়। নগর থেকে গ্রাম তলিয়ে যায় বৃষ্টি ও নদীর পানিতে। ভারী বৃষ্টিতে ময়মনসিংহে তীব্র হয় প্লাবন। আর তিন দফা বন্যায় ডুবে যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম। বন্যা ছাড়াও প্রতি বছরই তীব্র হচ্ছে তাপপ্রবাহ। জলাধার আর বন উজাড়ে বিপর্যয়ের মুখে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরম ঝুঁকিতে ২২ জেলা।
এদিকে উপকূলের সাতক্ষীরা, বরগুনাসহ ১৯ জেলায় জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তীব্র হচ্ছে মিঠা পানির সঙ্কট ও নদীভাঙন। আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণের কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এই ক্ষতি কমিয়ে আনতে ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে আর্থিক সহায়তা দিতে বিশ্ব নেতারা একমত হয়। প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার ভর্তুকির প্রতিশ্রুতি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এ বছর আজারবাইজানে শুরু হওয়া জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯ এখন শেষ পর্যায়ে। এখানেও দূষণকারী উন্নত দেশের জাতীয় আয় থেকে জলবায়ু তহবিলের টাকা আদায়ের প্রস্তাব এসেছে।
জলবায়ু গবেষক ড. শামসুদ্দোহা নয়া দিগন্তকে বলেন, কনসেশনাল ফান্ড হিসেবে যেটা ঋণ দিচ্ছে সেটিকে, নিজেরা যে ঋণ দিচ্ছে সেটিকেও আবার ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যেটা এডিবির মাধ্যমে দিচ্ছে সেটিকেও ক্লাইমেট চেঞ্জ ফান্ড হিসেবে ধরা হচ্ছে। সুতরাং এখানে ফান্ডের কোয়ালিটি ঘাটতি রয়েছে। আর প্রাইভেট সোর্সের কথা বলা হচ্ছে, তাদের অর্থ আছে এবং তারা ইনভেস্টও করতে চায় তবে সেখানে তো লোন হবে। বিশ্বে সবচেয়ে দূষণকারী দেশের তালিকায় থাকা ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো সম্মেলনে না থাকায় ভর্তুকির টাকা আদায়ের খুব বেশি আশা দেখছে না গবেষকরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) ক্যাম্পেইন অ্যান্ড পলেসি বিভাগের কো-অডিনেটর বারেশ হাসান চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় উন্নত দেশগুলো থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। গত ১৫ বছরে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ইউএস ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিশ্রুতির সেটেল হয়নি। আমরা আশা করছি, এবার সম্মেলন থেকেও কিছু একটা পাব। তবে এখনো বলা যাচ্ছে না কী পরিমাণ প্রতিশ্রুতি পাব।
এদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি রূপান্তর ও পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন অপরিহার্য। বাকু, আজারবাইজানে অনুষ্ঠানরত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৯)-এর পাথওয়েজ টু ট্রিপলিং রিনিউএবলস ইন সাউথ এশিয়া” শীর্ষক অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি, যা দক্ষিণ এশিয়ার নিম্নভূমি ডেল্টা অঞ্চলে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এসব প্রভাব দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর অধিকতর প্রভাব ফেলছে এবং বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, যে পরিমাণ টাকা আমাদের পাওয়ার কথা তার কাছে ধারেও আমরা পাচ্ছি না। আর উন্নত দেশের মিটিগেশন কমানোর যে প্রক্রিয়া সেটা দেরি হওয়ার কারণে আমাদের খাপ খাইয়ে নেয়া বা আমাদের অ্যাডাপ্টেশন বা দুর্যোগ মোকাবেলা করার সক্ষমতা আরো কমছে।