লবণ উৎপাদনের মৌসুম শুরু, মূল্য নিয়ে হতাশ চাষিরা
- এস এম রহমান পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)
- ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চলতি মৌসুমে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে চাষিরা লবণ উৎপাদনে মাঠে নামলেও মূল্য নিয়ে হতাশায় পড়েছেন। গতকাল ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত মাঠে উৎপাদিত অপরিশোধিত (ক্রুড) লবণ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে মাত্র ২২০ টাকায়। অথচ প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩০০ টাকা। অথচ একই লবণ গত মৌসুমের শুরুতে বিক্রি হয়েছিল প্রতি মণ ৫২৮ টাকা। গত মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন লবণ কম উৎপাদন হয়েছিল। ফলে বিপুল পরিমাণ লবণ ঘাটতি নিয়ে শেষ হয় মৌসুম। সে হিসেবে চলতি মৌসুমের শুরুতে লবণের মূল্য বেশি হওয়ার কথা থাকলেও উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় উপকূলের চাষিরা।
চলতি মৌসুমে (২০২৪-২৫) লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। যা গত মৌসুমে ছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। তার বিপরীতে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। ফলে ৯০ হাজার ১১০ মেট্রিক টন উৎপাদন ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল গত মৌসুম।
এর পরও রহস্যজনক কারণে মাঠে অবিক্রীত লবণ রয়ে গেছে চার লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। এই বিপুল পরিমাণ লবণ অবিক্রীত থাকায় মূলত চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন শুরু হলেও পাইকারি মূল্য কমে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ দিকে লবণ মিল মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে বিপুল পরিমাণ সোডিয়াম ক্লোরাইড (ভোজ্য লবণ) আমদানি করায় মাঠে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ লবণ অবিক্রীত ছিল। এ কারণে মাঠে উৎপাদিত লবণের মূল্য কমেছে।
এ দিকে কী কারণে লবণের মূল্য কমেছে জানতে চাইলে বিসিক লবণ প্রকল্পের মহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, গত মৌসুমে ৮ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন লবণ শিল্প খাতে ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। জুলাই-আগস্ট বিপ্লব-পরবর্তী পরিস্থিতির কারণে শিল্প খাতে লবণের প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ ধরা হলেও বাস্তবে হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। ফলে প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টন লবণ রয়ে যায়। মূলত সে কারণেই চলতি মৌসুমের শুরুতে লবণের পাইকারি মূল্য কমেছে। গত মৌসুমে ভোজ্য খাতে ৮ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন, শিল্প খাতে ৮ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন, মৎস্য খাতে ০.৩৮ হাজার মেট্রিক টন, প্রাণিসম্পদ খাতে তিন লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টনসহ পরিশোধিত লবণের চাহিদা ছিল মোট ২০ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন। অপর দিকে এই বিপুল পরিমাণ চাহিদার লবণ পরিশোধন করতে ১৭ ভাগ সিস্টেম লসসহ লবণের চাহিদা ধরা হয়েছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন।
তিনি জানান, চলমান পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প খাতে ১৫ শতাংশ লবণের প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। মূলত এ কারণেই শিল্প খাতের প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টন লবণ অবব্যহৃত থাকায় বিপুল পরিমাণ লবণ মাঠে রয়ে গেছে।
বিসিক লবণ প্রকল্পের মহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, চলতি মৌসুমের ১৫-নভেম্বর পর্যন্ত মোট লবণ উৎপাদন হয়েছে ৩৪০ মে.টন। মাঠ পর্যায়ে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিমণ অপরিশোধিত লবণের মূল্য ছিল ৩৩০ টাকা (পুরাতন) এবং ২২০ টাকা (নতুন)। যা গত বছরে একই সময়ে মণপ্রতি গড় মূল্য ছিল ৫২৮ টাকা। একই দিন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে গত বছরের পুরাতন লবণ মজুদ রয়েছে চার লাখ এক হাজার ৭৮৫ মে.টন।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, পটিয়া ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে ৪০ হাজার ৬৯৫ জন চাষি মাঠে লবণ উৎপাদন কাজে নিয়োজিত ছিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা