গুম কমিশনে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ র্যাবের বিরুদ্ধে
৭টি ‘বন্দিশালা’ পরিদর্শন করেছে কমিশন- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৪
গুমসংক্রান্ত কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েছে দেড় হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি র্যাব কর্তৃক গুমের শিকার হয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। গুমের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গুমসংক্রান্ত কমিশন ইতোমধ্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের যেসব স্থানে বন্দী রাখা হতো, এমন সাতটি ‘বন্দিশালা’ পরিদর্শন করেছে। সেগুলো হচ্ছে, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল, ডিবি, সিটিটিসি, র্যাব সদর দফতর, র্যাব-১, র্যাব-২ ও র্যাব-১১ এর ইন্টারোগেশন সেল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে কমিশন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত কমিশন এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কমিশনে অভিযোগ জমা দেয়ার সময় শেষ হয়েছে গত ৩১ অক্টোবর। তবে যে কেউ চাইলে এখনো অভিযোগ দিতে পারবেন। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত গুম কমিশনে অভিযোগ জমা হয়েছে এক হাজার ৬০০ এর মতো। এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ৪০০ অভিযোগকারীর মধ্যে ১৪০ জনের বক্তব্য নেয়া হয়েছে।
৪০০ অভিযোগের মধ্যে ১৭২টির সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব)। ডিবির (গোয়েন্দা পুলিশ) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৫৫টির সাথে। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৩৭টি অভিযোগের সাথে। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদফতরের (ডিজিএফআই) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৬টির সাথে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৫টি অভিযোগের সাথে। যেগুলোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিচয় নেই, শুধু বলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে সেইসব অভিযোগগুলো অন্যান্য ক্যাটাগরির মধ্যে ফেলা হয়েছে।
কমিশনের সভাপতি জানিয়েছেন, গুমের সাথে জড়িত বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ সদস্যকে ডাকা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পর্যায়ক্রমে অভিযুক্ত অন্যদেরও ডাকা হবে। তিনি বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের যেসব গোপন বন্দিশালায় রেখে নির্যাতন করা হতো সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। আলামত নষ্ট করা হয়েছে। তবে যারা আলামত নষ্ট করছেন, তাদের সতর্ক করেছে কমিশন। যারা আলামত ধ্বংস করছেন, তারা গুমের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আলামত ধ্বংস না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, পুলিশ আসামিদের কিভাবে অ্যারেস্ট করবে, তার ডিটেইলস গাইড লাইন আছে। সেটা কিন্তু ফলো করা হয়নি। আইজিপি দেশের বাইরে আছেন, তিনি দেশে এলে কমিশনে নিয়ে আসা হবে। একটা সার্কুলার দেয়ার জন্য বলব। তাহলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে, ভায়োলেন্স হবে না। গুমের সাথে কারা সংশ্লিষ্ট সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গুমের সাথে বাহিনীর কতজন সদস্য সংশ্লিষ্ট এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেই সংখ্যা এখনো বলা যাবে না। ৭ নভেম্বর থেকে বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে। আমরা সমন জারি করে দিয়েছি। প্রথম দিন সাতজনকে ডাকা হয়েছে। তারপর তিনজন, সাত জন, পাঁচজন এভাবে চলতে থাকবে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ডিজিএফআইয়ের সদস্য রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ডিজিএফআই, র্যাব, ডিবি, সিটিটিসি, সিআইডি ও পুলিশের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ‘আয়না ঘর’ বা ‘বন্দিশালা’ নামে পরিচিত প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল, ডিবি, সিটিটিসি, র্যাব সদরদফতর, র্যাব-১, র্যাব-২ ও র্যাব-১১ এর ইন্টারোগেশন সেল কমিশন পরিদর্শন করেছে। কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেন, কত নিষ্ঠুরভাবে মানুষের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না।
কমিশন আরেক সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস বলেন, এখন পর্যন্ত গুমের চারটি কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক কারণে বিশালসংখ্যক মানুষকে নেয়া হয়েছে। প্রমাণিত না হলেও জঙ্গি সন্দেহে বড় একটা সংখ্যক নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়িক এবং পারিবারিক কারণেও গুম করা হয়েছে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে গুমের ঘটনা তদন্তে গত ২৭ আগস্ট গুম কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারপতি মো: ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন স্বাধীন। এই কমিশনের কাছে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে গুমের ঘটনার অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা