সপ্তাহ শেষে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে পুঁজিবাজার
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৭
- ডিএসইর মূলধন বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা
- গড়ে দর বৃদ্ধিতে ৬৭.৭১ শতাংশ কোম্পানি
টানা তিন সপ্তাহ পর দেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর পথে এসেছে। এটি হয়েছে বিদায়ী সপ্তাহের শেষের তিন দিনে। টানা ২১ দিন পর ঢাকা স্টকের প্রধান সূচক ডিএসইক্স ১.৬৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দৌড়ঝাঁপ করছে। তবে তাদের দৌড়ঝাঁপে বাজার ইতিবাচক পথে ফিরছে বলে বাজারসংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা বলতে রাজি না। তাদের অভিমত দর হারাতে হারাতে এমন তলানিতে নেমেছে যে আর হারানোর কিছুই নেই। ফলে বাজারকে ফিরতেই হবে দুই দিন আগে বা পরে। সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধনে আট হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা ফিরেছে। ডিএসইতে গড়ে ৬৭.৭১ শতাংশ এবং সিএসইতে গড়ে ৫২.৪৫ শতাংশ কোম্পানির দর বেড়েছে। সবগুলো খাতের শেয়ারই বিক্রির চাপে ছিল। তবে শেষ তিন দিন ক্রেতার চাপে।
ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজারলেনদেনের তথ্য থেকে দেখা যায়, টানা মন্দার কারণে ডিএসইর বাজারমূলধনে খরার ছাপ পড়েছিল। কিন্তু গত সপ্তাহের শেষ তিন দিনের ইতিবাচক পথে ফিরে আসায় মূলধন বেড়েছে ১.২৯ শতাংশ বা আট হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। তিন দিন ক্রেতাদের চাপে ছিল পুঁজিবাজার। গড়ে ৬১ শতাংশ ছিল ক্রেতাদের চাপ এবং বিক্রেতাদের ৩৯ শতাংশ। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৪.৮ পয়েন্ট বেড়ে এখন পাঁচ হাজার ১৯৯.৪০ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ সূচক ৪৬.৮৭ পয়েন্ট বেড়ে এখন এক হাজার ৯২৬.০৫ পয়েন্টে এবং শরিয়াহ সূচক ০.৮৯ পয়েন্ট বেড়ে এখন এক হাজার ১৪৪.৯০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। তবে এসএমই সূচক থেকে ২৯.০১ পয়েন্ট ঝরে এক হাজার ৭২.৬৩ পয়েন্টে রয়েছে। ব্লক মার্কেটে লেনদেন হয়েছে মোট ৫৮ কোটি ৬৯ লাখ ২০ হাজার টাকার শেযার ও মিউচুয়াল ফান্ড। আর এসএমইতে ২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে গেল সপ্তাহে গড়ে লেনদেন টাকায় ২৩.০২ শতাংশ বা ৭৭ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা বেড়েছে। গেল সপ্তাহে গড়ে শেয়ার হাতবদলও ৩৭.০৯ শতাংশ বা চার কোটি ৯৩ লাখ ৬০ হাজারটি। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দর বৃদ্ধিতে ছিল ২৭৯টি বা ৬৭.৭১ শতাংশ, দর পতনে ১০১টি বা ২৪.৫১ শতাংশ, দর অপরিবর্তিত ১৫টি এবং কোনো লেনদেনে আসেনি ১৭টি কোম্পানি। তবে পুরো সপ্তাহে ডিএসইতে ৯১ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছিল মোট দুই হাজার ৮৩ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। যেখানে আগের সপ্তাহে ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজারটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছিল মোট এক হাজার ৬৯৩ কোটি ৪২ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। বিদায়ী সপ্তাহে মোট শেয়ার লেনদেন ২৪ কোটি ৬৮ লাখ বৃদ্ধি পাওয়ায় টাকায় লেনদেন ৩৮৯ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে মূলধন ডিএসইতে আট হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা বেড়েছে। সপ্তাহ শেষে মূলধন ১.২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিএসইর বাজার মূলধন এখন ছয় লাখ ৬৫ হাজার ৩৩২ কোটি ১২ লাখ টাকা।
সাপ্তাহিক লেনদেনে শীর্ষ ১০
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনের নেতৃত্বে উঠে এসেছে তাওফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে ১২ কোটি ৭৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩.০৬ শতাংশ। লেনদেনে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ২.৮৫ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ২.৫১ শতাংশ।
এ ছাড়া প্রতিদিন গড় লেনদেনে সাপ্তাহিক শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে ফারইস্ট নিটিংয়ের ৯ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ইবনে সিনা ফার্মার ৯ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, গ্রামীণফোনের আট কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা, অগ্নি সিস্টেমসের আট কোটি ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা, একমি ল্যাবরেটরিজের আট কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের আট কোটি ১২ লাখ ২৪ হাজার টাকা এবং এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের সাত কোটি এক লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০
ডিএসইতে গেল সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৬.৬২ শতাংশ বলে ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা গেছে। দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে এস্কয়ার নিটের ৩৪.৪২ শতাংশ, হামি ইন্ডাস্ট্রিজের ৩২.৪৩ শতাংশ, খুলনা পাওয়ারের ২৫.৫৩ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ২৫.২১ শতাংশ, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ২৩.৭৮ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের ২৩.১৯ শতাংশ, কেয়া কসমেটিকসের ২২.৪৫ শতাংশ, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২০.০০ শতাংশ এবং ঢাকা ডাইংয়ের ১৯.৮০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
সাপ্তাহিক দর পতনে শীর্ষ ১০
আর গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে ইফাদ অটোস পিএলসি। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৯.৭৮ শতাংশ কমেছে। দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে বিডি ফাইন্যান্সের ১৯.৫৮ শতাংশ, আলহাজ টেক্সটাইলের ১৮.৯৫ শতাংশ, মেঘনা সিমেন্টের ১৭.১৫ শতাংশ, হামিদ ফেব্রিক্সের ১৫.৭৪ শতাংশ, আরডি ফুডের ১৫.১৮ শতাংশ, ভিএফএস থ্রেড ডাইংয়ের ১৫.১২ শতাংশ, আনলিমা ইয়ার্ন ডাইংয়ের ১৪.২৯ শতাংশ, ইসলামিক ফাইন্যান্সের ১৪.১৮ শতাংশ এবং প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ১৩.১৫ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।
চট্টগ্রাম স্টকে গড় দর বৃদ্ধিতে ৫২.৪৫ শতাংশ কোম্পানি
আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক মার্কেটের (সিএসই) অবস্থা ভালোর দিকে। সবগুলো সূচকই পতনের জালকে ভেদ করে এখন ইতিবাচক পথে। বেশির ভাগ কোম্পানি বা ৫২.৪৫ শতাংশ গড়ে দর বৃদ্ধিতে ছিল। লেনদেনেও যে প্রত্যাশিত উন্নতি হয়েছে, তা বলা যাবে না। সিএএসপিআই ০.৯৭ শতাংশ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ২.৬৫ শতাংশ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ০.৮৪ শতাংশ পয়েন্ট এবং সিএসই-৫০ সূচক ০.২৩ শতাংশ পয়েন্ট ফিরে পেয়েছে। পুরো সপ্তাহে এক কোটি ৩৮ লাখ ১৯ হাজার ৪২১টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে ২৯ কোটি ৩৯ লাখ ১০ হাজার ৮৫৬ টাকা বাজারমূল্যে। ৩০৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেয়। এদের মধ্যে দর বৃদ্ধিতে ছিল ১৬০টি, দর পতনের শিকার ১২৭টি এবং দর অপরিবর্তিত হলো ১৮টি। বাজার মূলধনে বর্তমানে ‘এ’ শ্রেণীর কোম্পানির কমে ৫৯.৪৮ শতাংশ, ‘বি’ শ্রেণীর বেড়ে ১৭.২৮ শতাংশ, ‘এন’ শ্রেণীর কোম্পানির বেড়ে ৫.১১ শতাংশ এবং ‘জেড’ শ্রেণীর কোম্পানির বেড়ে ১৮.১২ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। বাজার মূলধন বেড়ে এখন ছয় লাখ ৯৮ হাজার ৩৮০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও বাজারমুখী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে অনেক বিনিয়োগকারী তাদের পোর্টফোলিওতে ক্ষতি রোধ করতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। বেশির ভাগ সেক্টরের রিটার্ন সপ্তাহ শেষে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলশ্রুতিতে গড় টার্নওভার ২৩.০২ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে ৩৬টি শেয়ারের বাজারমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৩৩৮টি শেয়ার এ বাজার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। বাজার মূল্যের ভিত্তিতে ১৬টি সেক্টর এই সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে; যার মধ্যে টপ গেইনার ছিল সিরামিক্স, বীমা ও খাদ্য খাত। দু’টি সেক্টর এই সপ্তাহে টপ লুজার। মূল্য ও লেনদেনের দিক থেকে সার্বিকভাবে ব্র্যাক ব্যাংক সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলা যায় যে, আগামী সপ্তাহে বাজারের সূচক কিছুটা নিম্নমুখী হওয়ার পাশাপাশি মাঝারি পরিমাণে লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা