০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
ড. দেবপ্রিয়র মন্তব্য

অনাচারের অর্থনীতি সৃষ্টি করে আমলা, উর্দিধারী কর্মকর্তা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীচক্র

-

দেশে একটি ‘অনাচারের অর্থনীতি’ সৃষ্টি হয়েছিল। এর প্রেক্ষাপটে আমলা, উর্দি পরিহিত প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। অর্থনীতির এই অনৈতিক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুক্ষিগত করেছিল বলে জানান শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি আরো বলেন, মেগা প্রকল্পে মেগা চুরি হয়েছে। যতটুকু অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে তার চেয়ে বেশি বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাথে মতবিনিময়কালে ড. দেবপ্রিয় এসব কথা বলেন। পরিকল্পনা কমিশনের নাজিয়া-সালমা সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দেবপ্রিয় বলেন, সরকারি খাতে অপচয়ের দায়ভার এখন জনগণের ওপর পড়বে। সুষ্ঠুভাবে রাজস্ব সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি, বরং কিছু অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে। উন্নয়নের নামে প্রচারিত বয়ান রক্ষায় একপ্রকার স্বৈরতান্ত্রিক রাজনীতির সমর্থন প্রয়োজন ছিল।
বর্তমানে পরিবর্তনের মাধ্যমে এই চক্রটি ভাঙার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কার না হলে আমাদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, কর্মদক্ষতা এবং সুশাসনের পথে বাধা সৃষ্টি হবে। আমরা বর্তমানে যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি, ভবিষ্যতেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে তা নির্ধারণ করবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাদের কতটা স্বস্তি দিচ্ছে। অর্থাৎ এ সংস্কারগুলোর পরিধি, ধারাবাহিকতা এবং গতি কী হবে, তা নির্ধারিত হবে সরকার বর্তমান অর্থনীতির বিষয়ে কতখানি আশ্বস্ত থাকে এবং জনগণ কতখানি স্বস্তিতে থাকে।
দেবপ্রিয়ের মতে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। সরকারের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জনগণের আস্থার সাথে জড়িত। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট স্থিতিশীল না হলে, রাজনৈতিক নিয়ামক হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

দেবপ্রিয় উল্লেখ করেন, বর্তমানে সরকার বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তবে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলের রাজনৈতিক ভূমিকার পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিক প্রভাব সঙ্কুচিত করার ঝুঁকি থাকলেও টেকসই উন্নয়নের জন্য এসব সংস্কার অপরিহার্য বলে তিনি মন্তব্য করেন।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হাসান বলেন, শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য কিছু বিষয় উঠে এসেছে। কিন্তু ব্যাপকতা ও গভীরতা বলে একটা বিষয় আছে। এখন আমরা ব্যাপকতার চেয়ে গভীরতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। রেলপথ, পানিপথ, সড়ক পথ ছাড়াও অদৃশ্য কিছু পথ রয়েছে। এখন এই সব পথের গভীরতা বিবেচনায় সংস্কার অগ্রগতি পরিচালনা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের মাটির কাছাকাছি থাকতে হবে খুব বেশি আকাশচুম্বী প্রত্যাশা করা উচিত হবে না। তবে জবাবদিহিতার পদ্ধতিগত সংস্কারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এ ব্যাপারে প্রণয়ন কমিটি একটি দৃশ্যমান পদ্ধতি প্রণয়নে কাজ করছে।
কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেশের সার্বিক সঙ্কটের সমস্যাটা মোটা দাগে চিহ্নিত করলে দেখা যাবে যে, এটা শুরু হয়েছে মূলত ২০১৪ সালের একটি অগণতান্ত্রিক, অগ্রহণযোগ্য ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে। তখন থেকেই উন্নয়নের বয়ানে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম বা চামচা পুঁজিবাদকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। প্রকল্পভিত্তিক দুর্নীতি, ব্যয়ভিত্তিক দুর্নীতির ইত্যাদি ক্ষেত্রে হরিলুট হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক অর্থনীতির যে আবহ সৃষ্টি হয়েছে তা রাজনীতিক আমলা ও ব্যবসায়ীরা একটি অ্যালায়েন্স তৈরি করেছে। তারাই মূলত এই উন্নয়ন বয়ানকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কার প্রয়োজন ছিল তারা তাদের স্বার্থের কারণে এই সংস্কারগুলোকে কখনোই সামনে আসতে দেয়নি। কারণ এই সংস্কারগুলো তাদের স্বার্থে বিঘœ ঘটাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement