২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩০, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিবৃতি

দুর্নীতি, কালো টাকা ও অর্থ পাচার বন্ধে কমিশনের দাবি

-

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ভূয়সী প্রশংসা ও সাধুবাদ জানিয়েছে। যেহেতু দুর্নীতি, কালো টাকা, অর্থপাচার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও উন্নত করার পথে অন্যতম প্রতিবন্ধকে পরিণত হয়েছে। সেহেতু ‘দুর্নীতি, কালো টাকা ও অর্থপাচার বন্ধে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছে অর্থনীতি সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো: আইনুল ইসলামের পাঠানো গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। সমিতি বলছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অন্তত ৩ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থপাচার হয়ে যাচ্ছে। সমিতির হিসাবে ৪৬ বছরে (১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে) দেশের মোট অর্থপাচারের পরিমাণ কমপক্ষে সাত লাখ ৯৮ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।
বিবৃতিতে সমিতি বলছে, অর্থপাচারের উৎসগুলো বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টাকে সর্বোতভাবে সমর্থন জানাচ্ছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি মনে করে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চালকের আসনে থাকা জ্ঞানাভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতিতে ক্যানসার ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়া কালোটাকা, অর্থপাচার ও দুর্নীতির মতো মৌলিক সমস্যা নির্মূলে সফল হবেন। কালো টাকা, অর্থপাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন অর্থনীতি সমিতি প্রয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারকে সবধরনের সহায়তা দেবে।
বিইএ বলছে, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি দীর্ঘ দিন ধরেই বলে আসছে, দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থপাচার যৌক্তিক কারণেই অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ঘৃণ্য অপরাধ। কারণ রাষ্ট্রের উন্নয়নে তা মারাত্মক ঋণাত্মক প্রভাব ফেলে। ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর সরকারের ঘোষিত জাতীয় বাজেটের বিপরীতে অর্থনীতি সমিতির বিকল্প জাতীয় বাজেট প্রস্তাবনায় বরাবরই বলা হচ্ছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অন্তত ৩ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থপাচার হয়ে যাচ্ছে। যা দেশে বহুমাত্রিক বৈষম্য ও দারিদ্র্যের বিস্তার ঘটাচ্ছে এবং সর্বগ্রাসী দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে।
অর্থনীতি সমিতির হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে অর্থপাচারের পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৭৫ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। যা একই অর্থবছরের সৃষ্ট মোট কালোটাকার (৮ লাখ ৪১ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা) ৯ শতাংশের সমপরিমাণ। একই অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১৬.৩ শতাংশের সমপরিমাণ। যেখানে প্রতি বছর বাজেট সঙ্কুলানের জন্য সরকারকে দেশী-বিদেশী বিপুল ঋণ নিতে হচ্ছে, সেখানে মোট বাজেটের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের সমপরিমাণ অর্থপাচার হয়ে যাওয়া জাতি হিসেবে অত্যন্ত লজ্জা ও উদ্বেগের।
সমিতি বলছে, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৩-২৪ : বৈষম্য নিরসনে জনগণতান্ত্রিক বাজেট’ দলিলে এই কমিশনের বিশদ রূপরেখা দেয়া আছে, যেখানে বলা হয়েছে, এই কমিশনের প্রধান কাজ হবে দুর্নীতি, কালো টাকা ও অর্থপাচারসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি গভীর অনুসন্ধান ও গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড নিরন্তর চালিয়ে যাওয়া। অনুসন্ধান-গবেষণাফল প্রতি তিন মাস অন্তর দেশের সব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণকে অবহিত করা। একই সাথে কমিশনের নিজস্ব ভেরিফায়েড ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা। প্রস্তাবিত এ কমিশন যেহেতু স্বাধীন, সেহেতু কমিশন তার কাজের জন্য সরাসরি জনগণের কাছেই জবাবদিহি করবে (প্রয়োজনে জনগণের পক্ষে রাষ্ট্র প্রধানের কাছে)।
অর্থনীতি সমিতি জানিয়েছে, প্রস্তাবিত এ কমিশন স্বাধীন, বিধায় কমিশনের সাথে বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশনের তেমন কোনো সম্পর্ক থাকবে না। তবে স্বাধীন এই কমিশন প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পর্কে বলতে পারবে। দুর্নীতির কারণে, কালোটাকার মালিক হওয়ার কারণে, অর্থপাচার করার কারণে প্রস্তাবিত এই কমিশন কাউকে শাস্তি দিতে পারবে না, শুধু সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশ্লেষণপূর্বক রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধান বিচারপতির বরাবর শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুপারিশ প্রেরণ করতে পারবে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে দারিদ্র্য ও বৈষম্য প্রশমিত করে বাংলাদেশ দ্রুতই সমৃদ্ধ ও শোভন একটি দেশে পরিণত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল