১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলায় ইসরাইলের ৪ সেনা নিহত

-


ইসরাইলের হাইফার দক্ষিণে বেনইয়ামিনা এলাকায় দেশটির সামরিক বাহিনীর গোলানি ব্রিগেড ক্যাম্পে ড্রোন হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। হামলায় নিহত ইসরাইলি সেনার সংখ্যা বেড়ে চারে পৌঁছেছে। লেবাননের প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিক্রিয়ায় হাইফার বেনইয়ামিনায় ইসরাইলি সামরিক ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছে। এলাকাটি ইসরাইল-লেবানন সীমান্ত থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে।
ইসরাইলের সামরিক রেডিওতে হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলায় তিনজন নিহত হওয়ার খবর প্রচার করা হয়েছে। দেশটির অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বলছে, আহত মানুষের সংখ্যা ৩৯। যদিও পরবর্তী সময়ে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ৬৭ জন। এ হামলার দায় স্বীকার করে হিজবুল্লাহ বলেছে, তেল আবিব ও হাইফার মধ্যবর্তী এলাকায় ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর (আইডিএফ) গোলানি ব্রিগেডের একটি প্রশিক্ষণশিবির নিশানা করে হামলাটি চালানো হয়।
দক্ষিণ লেবানন ও বৈরুতে বৃহস্পতিবার ইসরাইল যে হামলা চালিয়েছিল তার জবাবে এ হামলা চালানো হয় বলে জানায় হিজবুল্লাহ। সংগঠনটি বলেছে, তারা ‘একঝাঁক’ ড্রোন ব্যবহার করে উত্তর ইসরাইলের ওই শিবির লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে, হামলায় ৬১ জন আহত হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের ৩৭ জনকে অ্যাম্বুলেন্স বা হেলিকপ্টারে করে আটটি স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

আইডিএফ প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত করার আগে এমডিএ এক বিবৃতিতে জানায়, গুরুতর আহত তিনজনের পাশাপাশি ১৮ জনের অবস্থা মাঝারি এবং ৩১ জন মৃদু আঘাত পেয়েছেন। আর ‘উদ্বেগে ভুগছেন’ ৯ জন। এমডিএ ও আইডিএফের হিসাবে গুরুতর জখমের সংখ্যা ভিন্ন হওয়ার কারণ স্পষ্ট নয়। বিবিসি লিখেছে, ইসরাইলি সেন্সরশিপ বিধির কারণে ঠিক কোথায় বা কী লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল তা আইডিএফ নিশ্চিত হওয়ার আগে সেই তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি সেখানকার সংবাদমাধ্যম। কিছু ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, লেবানন থেকে ছোড়া একটি নিম্ন-স্তরের ড্রোন আঘাত হানে ঘাঁটিতে। এটি তুলনামূলক অত্যাধুনিক অস্ত্র, যার কারণে আগাম সতর্কতা অ্যালার্ম বাজেনি। সন্ধ্যাজুড়ে টেলিভিশনের বুলেটিন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট ও অনলাইন খবরের ফুটেজে দেখা গেছে, হেলিকপ্টারসহ জরুরি যানবাহনগুলো হতাহতদের উত্তর ইসরাইলের হাসপাতালগুলোতে নিয়ে যাচ্ছে।
আহতদের অনেককে নিকটবর্তী হাদেরার হিলেল ইয়াফে মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্যদের তেল হাশোমার, হাইফা, আফুলা ও নেতানিয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। বিবিসি লিখেছে, বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি, তবে আহতদের অনেকেই সেই সময় একটি ক্যান্টিনে ছিলেন বলে মনে হচ্ছে। ঘটনার আকস্মিকতায় তারা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি ফাঁকা মেস হল, যার ছাদ ফুটো হয়ে গেছে।

আরো ৫১ জন নিহত : লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা বলেছে, রোববার সারা দেশে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৯৬ জনে।
আরো বড় হামলার হুঁশিয়ারি : রোববারের ড্রোন হামলার পর লেবাননের প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ ইসরাইলের ওপর আরো হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে। তারা বলেছে, ইসরাইল যদি লেবাননে হামলা চালিয়ে যেতে থাকে, তবে এর জবাবে দেশটিতে আরো হামলা চালানো হবে। হিজবুল্লাহ আরো বলেছে, তারা একই সময়ে আকরে ও হাইফা অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন উড়িয়েছে। এর মধ্যে কিছু ড্রোন প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। ড্রোনগুলো ইসরাইলের আকাশপ্রতিরক্ষা রাডারগুলোকে ফাঁকি দিতে পেরেছে। এগুলো রাডারে শনাক্ত হয়নি এবং তা হাইফার দক্ষিণে বেনইয়ামিনা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আঘাত করতে সক্ষম হয়। যেসব কক্ষে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে ইসরাইলি বাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও সেনা উপস্থিত ছিল।

শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা যুদ্ধাপরাধ : অন্য দিকে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন যে, শান্তিরক্ষীদের ওপর যেকোনো হামলা ‘যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে’। রোববার এক বিবৃতিতে মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক বলেছেন। ইসরাইলি ট্যাংক দক্ষিণ লেবাননে একটি শান্তিরক্ষা ঘাঁটির গেট ভেঙে ঢুকে যাওয়ার পর এ সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন মহাসচিব।
রোববার লেবাননের রামিয়ায় শান্তিরক্ষা মিশনের দু’টি ফটক ভেঙে শান্তিরক্ষীদের অবস্থানগুলোর মধ্যে ঢুকে পড়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দু’টি ট্যাংক। এটিকে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে লেবাননে জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা মিশনের বিরুদ্ধে ইসরাইলি লঙ্ঘন ও হামলার সর্বশেষ অভিযোগ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। লেবাননে শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউএনআইএফআইএল বা ইউনিফল নামে পরিচিত। বিবৃতিতে স্টেফান দুজারিক আরো বলেন, ‘ইউনিফিল শান্তিরক্ষীরা তাদের সব অবস্থানে রয়েছে এবং জাতিসঙ্ঘের পতাকা এখনো উড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘মহাসচিব পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে ইউনিফিলের কর্মী এবং এর স্থাপনাগুলোকে কখনোই লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এই আইনের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনও অন্তর্ভুক্ত। এগুলো যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।’ দক্ষিণ লেবাননে মোতায়েন করা জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নিতে অ্যান্তোনিও গুতেরেসের প্রতি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আহ্বানের পরপরই ফটক ভেঙে ইসরাইলি সেনাদের ভেতরে ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
প্রথম ত্রাণ পাঠাল সৌদি : আরব নিউজের খবর অনুসারে, ইসরাইলের হামলায় বিধ্বস্ত লেবাননে প্রথমবারের মতো ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে সৌদি আরব। সৌদি সাহায্য সংস্থা কেএস রিলিফ রোববার লেবাননে এসব জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং খাদ্যসামগ্রী পাঠায়। সৌদি বাদশাহ সালমান এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে লেবাননে যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য এসব জরুরি ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়।


আরো সংবাদ



premium cement