০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
ডেঙ্গু ঝুঁকিতে এক হাজার রোগী

মুগদা হাসপাতালের সামনে পুকুরসম পানি

বৃষ্টি ও স্যুয়ারেজের ময়লা পানিতে মুগদা হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তা সয়লাব : মোহাম্মদ শরীফ -


ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন মুগদা জেনারেল হাসপাতালের এক হাজারেরও বেশি রোগী। হাসপাতালের চার দিকের নোংরা পরিবেশ, প্রধান ফটকের সামনে পুকুরসম পানি, স্যুয়ারেজের পানির দুর্গন্ধ নষ্ট করছে হাসপাতালের পরিবেশ। এছাড়া সন্ধ্যার পর হাসপাতালের সর্বত্র শুরু হয় মশার রাজত্ব। ফলে হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা ডেঙ্গুসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগের আতঙ্কে আছেন।
জানা গেছে, এই হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালের নোংরা পরিবেশে কাজ করতে অস্বস্তি বোধ করছেন। অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ছাড়াও চার দিকের রাস্তায় স্যুয়ারেজের পানি সারা দিনই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মোট কথা পুঁতিগন্ধময় নোংরা পরিবেশে মুগদা হাসপাতালের রোগী, স্টাফ, ও চারপাশের মানুষ বসবাস করছেন।

স্যুয়ারেজের পাইপ লিক করায়, কোথাও কোথায় রাস্তার ওপরের অংশের ইট, সুরকি ও পিচ উঠে যাওয়ায় এবং নানা ধরনের গাড়ি চলাচলে স্যুয়ারেজের পাইপ ভেঙে ও ফুটো হয়ে বের হয়ে আসা কালো দুর্গন্ধময় ময়লা পানিতে উঠে আসছে। এছাড়া রাস্তার নিচ দিয়ে স্যুয়ারেজের পাইপ বসানোর পর আবার ঠিক করে না দেয়ায় গর্ত হয়ে গেছে অনেক স্থানে। এসব কারণে এক হাজারের বেশি রোগীর সেবা প্রদানকারী এই হাসপাতালে রোগীবান্ধব পরিবেশ নেই। সামনের ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে না পারায় বর্তমানে নার্সিং উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনের গেট দিয়ে সবাইকে ঢুকতে হয়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘মুগদা হাসপাতালের বর্তমান পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত নয়, একটা হাসপাতালে এমন পরিবেশ থাকতে পারে না। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর (তিনি প্রায় এক মাসের কিছু বেশি সময় আগে দায়িত্ব নিয়েছেন) থেকেই হাসপাতালের পরিবেশ উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু পারছি না। বর্ষার পানিতে হাসপাতালের সামনের রাস্তাটিকে লম্বালম্বি দেখলে পুকুর নয়, নদীর মতো দেখায়।’ রাস্তাটি এতটাই বিধ্বস্ত হয়েছে যে একটু বৃষ্টি হলেই কোথাও কোথাও কোমর পানি জমে যায়। তিনি বলেন, ‘সামনের রাস্তাটি সংস্কার করে দেয়ার জন্য সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত অধিদফতর এবং স্থানীয় যেসব নেতা বর্তমানে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন তাদেরও বলেছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছি না। স্যুয়ারেজের পানি মিশে পুঁতিগন্ধময় করে তুলেছে পরিবেশ।’
হাসপাতালের ভেতর পরিবেশ সম্বন্ধে তিনি বলেন, হাসপাতালের চারপাশে মশা উৎপাদনের পরিবেশ থাকায় এখানে প্রচুর মশা হচ্ছে। এখানে যারা ডেঙ্গু রোগী তারা মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে চান না, আবার দিনের বেলাও মশারির নিচে অবস্থান করতে চান না। হাসপাতালের সর্বত্র মশার অস্তিত্ব থাকায় অন্যান্য রোগীরা ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে।

দিনের বেলা মুগদা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ডেঙ্গুরোগীদের কেউই মশারির নিচে অবস্থান করছেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তারা মশারি টাঙাচ্ছেন না। কেবল হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন চিকিৎসকরা আসলেই তড়িঘড়ি করে রোগীরা মশারি টাঙিয়ে ভিতরে অবস্থান করেন দেখানো জন্য। পরে আবার মশারি খুলে ফেলেন। এ ব্যাপারে পরিচালক ডা: হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেখানোর জন্য মশারি টাঙালেও আমরা জানি রোগীরা মশারির নিচে অবস্থান করেন না। ফলে এদের থেকে হাসপাতালের অন্যান্য রোগীদের ডেঙ্গুতে ভুগতে পারেন।’
প্রধান ফটকের সামনের রাস্তাটির এই অবস্থার মধ্যেই রোগীসহ এলাকাবাসী ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পারাপার হন। পানির নিচে থাকা গর্তে এলাকাবাসীতো পড়েই আবার রোগীসহ রিকশা পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। ইঞ্জিনচালিত কোনো গাড়ি আসলে পানিতে যে ঢেউ উঠে তাতে রাস্তার পাশের স্থাপনারও ক্ষতি হচ্ছে।
এলাকাবাসী মো: মতিউর রহমান জানান, বেশ কয়েক মাস ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও রাস্তাটি মেরামত করার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। আমরা নানাভাবে সিটি করপোরেশনে গিয়ে রাস্তাটি মেরামত করে দেয়ার জন্য বলেছি কিন্তু সিটি করপোরেশনে এখন কথা শোনার কেউ নেই। চলতি বছরের জুনের দিকে রাস্তাটির বেহাল অবস্থা শুরু হয়। তখন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যর্থ হন। এই ভাঙাচোরা অবস্থার মধ্যেই রাস্তা কেটে পাইপ বসানো হয় কিন্তু রাস্তা ঠিক করে দেয়া হয়নি। তখন এই নিয়ে বেশি কথা বলাটাও বিপজ্জনক ছিল। রাস্তার ঠিকাদার ইচ্ছামতো কাজ করেছে, বলার কেউ ছিল না। কারণ তারা আওয়ামী লীগের লোক ছিল।

 


আরো সংবাদ



premium cement