৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১, ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

সাগর-রুনি হত্যা রহস্য উন্মোচনে লড়বেন আইনজীবী শিশির মনির

তদন্ত দায়িত্ব পিবিআইকে দিতে হবে
সাগর-রুনি হত্যা রহস্য উন্মোচনে লড়বেন আইনজীবী শিশির মনির -


বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় নতুন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশিষ্ট ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনিরকে আলোচিত এ মামলার আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবনের সামনে এক ব্রিফিংয়ে সাগর-রুনি হত্যা মামলার বাদি নওশের রোমান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এখন থেকে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাগর-রুনি হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচনে আইনি লড়াই করবেন।
এ বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ক্রিমিনাল মামলার বিচারের দায়িত্ব কিন্তু রাষ্ট্রের। কিন্তু আইনে আছে কোনো ভুক্তভোগী কিংবা অভিযোগকারী চাইলেও ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৩ ধারা অনুযায়ী স্বাধীন আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন। এভাবে সাগর-রুনি মামলার যিনি অভিযোগকারী ছিলেন তিনি আমাকে নিযুক্ত করেছেন। আমরা নিম্ন আদালতে দরখাস্ত দায়ের করব। তদন্ত যারা করছে তাদের সাথে বসব। যেসব ক্লু আছে সেগুলো ধরে পরবর্তী তদন্ত করতে হবে।
তদন্তের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন র‌্যাব করছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এ পর্যন্ত আদালত থেকে ১১১ বার সময় নিয়েছেন। আমাদের জানামতে বাংলাদেশে সবচাইতে ইফিশিয়েন্ট তদন্ত সংস্থা হচ্ছে পিবিআই। আমরা পরামর্শ করেছি, আমরা চাইবো সবচাইতে দক্ষ টিম পিবিআই কর্তৃক তদন্ত হোক।
শিশির মনির বলেন, এই মামলায় ধারাবাহিকতায় যে দু’জনের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট এসেছে তা তদন্তের ভিত্তিতে শনাক্ত করতে হবে। এ ছাড়া র‌্যাবের কাছে থাকা এই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেয়ার জন্য আবেদন করা হবে। আমাদের দাবি থাকবে তদন্তভার পিবিআইকে দিতে হবে।
হত্যায় বিগত সরকারের সময় গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে আড়াল করতে তদন্তে বাধা ছিল কি না বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তদন্তে তাও বের হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির। তিনি বলেন, আমরা সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উন্মোচনে নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো। নিম্ন আদালতে মামলাটির পরবর্তী ধার্য তারিখ আগামী ১৫ অক্টোবর।

রুনির ভাই নওশের রোমান জানান, বহুদিন ধরে মামলাটার অগ্রগতি দেখছি না। আমরা জানিও না কি হচ্ছে। র‌্যাব কিন্তু নতুন সরকার আসার পরেও সময় নিয়ে যাচ্ছে। এটার আইনি কার্যক্রম দেখার জন্য, এটার ভেতরে কি হচ্ছে মোহাম্মদ শিশির মনির ভাইকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, এত বছর তো আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকারের পক্ষ থেকে যে ধরনের রেসপন্স আমরা পাচ্ছিলাম যে, আসলে বিচার চাওয়াকেও লজ্জাজনক ব্যাপার মনে করছিলাম। এখন নতুন নির্দলীয় সরকার এসেছে। আগের যে সরকার তারা যেভাবে মামলাটা ধামাচাপা দিয়েছিল, ওই সরকার যেহেতু নেই আমরা মনে করছি কিছু হতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত না হয় কিছু ততক্ষণ পর্যন্ত আনন্দিত বা আশা করার কিছু নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতদিন যোগাযোগ করত না। গত ৫ আগস্টের তদন্ত কর্মকর্তা কয়েক দিন এসেছেন বাসায়, এতটুকুই। অগ্রগতি হওয়ার মতো আমাদের কিছু জানাইনি।
এ মামলার তদন্ত নিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশ্যে দেয়া অভিভাষণ অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছিলেন, ফৌজদারি মামলার তদন্ত কাজ যেন দীর্ঘ দিন ঝুলে না থাকে, পুলিশকে সে ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। আমরা দেখেছি চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে ১১১ বার সময় নেয়া হয়েছে। এটা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। তদন্ত কাজেই যদি একাধিক বছর সময় লেগে যায়, সে মামলার বিচারকাজ পরিচালনা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা সময়ের আবর্তে মামলার অনেক সাক্ষী ও সাক্ষ্য হারিয়ে যায়।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদি হয়ে শেরেবাংলানগর থানায় মামলা করেন।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই)। চার দিন পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement