২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

প্রথমবার সুদ খাতে ব্যয় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেল

২০২৩-২৪ অর্থবছরে খরচ ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা
-

এই প্রথমবারের মতো সরকারের সুদ ব্যয় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুদখাতেই খরচ করতে হয়েছে একলাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর আগে আর কখনো সুদখাতে এত ব্যয় হয়নি। অর্থ বিভাগের গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল বাজেটে দেশী-বিদেশী ঋণের জন্য সুদ ব্যয়খাতে অর্থ বরাদ্দ প্রাক্কলন ছিল ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে তা বৃদ্ধি করে এক লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু বছর শেষে সুদব্যয় এ সীমার মধ্যে রাখা সম্ভব হলো না। মোট সম্পদের ২৮ ভাগই চলে যাচ্ছে সুদ ব্যয়খাতে। এর পর ২১ ভাগ যাচ্ছে সরকারি চাকুরেদের বেতনভাতা খাতে।
গত অর্থবছর বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধ ৬০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বা ১৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া দেশীয় উৎস থেকে নেয়া ঋণের সুদ ২০ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ৯৯ হাজার ৬০৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সুদ ব্যয় বেড়ে যাবার কারণ হিসেবে অর্থ বিভাগ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে অনমনীয় এবং আধা নমনীয় ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ খাতের সুদের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপরন্তু টাকার অবচিতি(ডিভ্যুলুয়েশন) এবং বৈশ্বিক সুদের হার বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক উৎসের অন্তর্নিহিত সুদের হার ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ শতাংশ হতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২ শতাংশে উন্নীত হবে।

সুদ ব্যয়ের এই চিত্র অর্থ বিভাগের প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৪-২০২৫ হতে ২০২৬-২৭’ এ প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করতে হবে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেয়া সুদ ব্যয় ৯৩ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ ব্যয় বেড়ে হবে এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশী সুদ ব্যয় হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর পরের অর্থবছরে অর্থ্যৎ, ২০২৬-২০২৭ তা আরো বৃদ্ধি পেয়ে হবে এক লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশী সুদ ব্যয় হবে এক লাখ ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী সুদ ব্যয় হবে ২৬ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মধ্যমেয়াদে সরকারের প্রাক্কলিত সুদ ব্যয় এ খাতে সরকারের ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা নির্দেশ করে। সুদ পরিশোধের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২১ অর্থবছরের সুদ ব্যয় ছিল ৭৭ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে তা বেড়ে হবে এক লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মোট বাজেটের অনুপাতে সুদ পরিশোধ হ্রাস-বৃদ্ধি লক্ষণীয়। সুদ ব্যয় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটের ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ হতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে১২ দশমিক ৪ শতাংশে হ্রাস পায় তবে তা ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে পুনরায় ১৫.৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
এ দিকে, বাজেট ডকুমেন্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রতি বছরই বাজেটে সুদ ব্যয় বেড়ে চলেছে। যেমন- ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয় ৭০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মূল বাজেটে যা ছিল ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। সুদ ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদখাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় ধরা আছে চার হাজার ৩০০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২১-২২অর্থবছরে সুদ ছিল ৭০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এক লাখ ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সুদ বেড়ে হবে এক লাখ ৩৮ হাজার ৩০ কোটি টাকা।

এর আগে ,২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা এবং বিদেশী সুদ ব্যয় ৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ১৭-১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
একইভাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই ব্যয় যথাক্রমে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৪৪ কোটি টাকা ও এক হাজার ৬২৫ কোটি টাকা এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ছিল ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement