২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কথা শুনলেন রিজওয়ানা, আশ্বাস দিলেন কষ্ট কমানোর

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন : পিআইডি -


এবার স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ ১২ জেলায়। এর মধ্যে নোয়াখালীতে ভয়াবহ বন্যার এক মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। অধিকাংশ এলাকা থেকে এখনো সরেনি পানি। খোদ জেলা শহর মাইজদীর নিচু এলাকা ডুবে আছে পানিতে। এমনকি নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনেও জমে আছে পানি। অন্য দিকে বন্যায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় নদীর পাড় এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন উপকূলের মানুষ। বন্যার ধকল কাটলেও একের পর এক বিলীন হচ্ছে উপকূলীয় এলাকা। অন্য দিকে কৃষি ও মৎস্য-ডেইরি খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ায় এককালের সমৃদ্ধ জনপদ নোয়াখালী এখন অনেকটা সর্বনাশের পথে। এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে উপকূলীয় নোয়াখালীতে ছুটে গেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গতকাল সকাল থেকে তিনি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে কথা বলেছেন। পানি কেন সরছে না, কমানোর উপায় কী, নদীভাঙন রোধে করণীয় কী- এসব বিষয়ে গণশুনানি করে পরামর্শ নিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে।

দুপুরে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গণশুনানিতে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, এ জেলাজুড়ে একসময় প্রচুর খাল ছিল, যা ছিল পানি নিষ্কাশনের প্রাচীন উপায়। এখানে অতীতেও প্রচুর বৃষ্টি হতো। খালগুলো সেই বৃষ্টির পানি ধরে রাখত এবং নদী হয়ে সমুদ্রে চলে যেতে সাহায্য করত। কিন্তু পানি চলাচলের পুরনো পথ খালগুলো ভরাট করে বাড়িঘর-দোকানপাট তোলা হয়েছে দশকের পর দশক ধরে। কোথাও কোথাও খাল ভরাট করে রাস্তা তৈরি হয়েছে। খালের দুই দিক আটকে মাছের খামার বানানো হয়েছে।
গণশুনানিতে আসা অনেক সাধারণ মানুষ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, নোয়াখালীর বহু এলাকায় গাছপালা পড়ে গেছে। কয়েক দশকে গড়ে তোলা রাস্তাঘাট নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফসলি জমি প্রায় স্থায়ী জলাশয় হয়েছে। গবাদিপশুগুলো খুব সস্তায় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। যারা খামার বাঁচাতে পেরেছেন, তারাও গরুর খাবারের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনের সুযোগ বলা যায় দীর্ঘস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। সব মিলে এই অঞ্চলের মানুষ নিকট ইতিহাসে এত বড় বিপদে পড়েনি আর। জাতীয় অর্থনীতিতে নানাভাবে বিপুল অবদান রেখেও এ জেলার মানুষ নিজেদের খুবই উপেক্ষিত ভাবছে এই মুহূর্তে।
নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এভাবে একে একে তুলে ধরেন সমস্যা-অভিযোগ। সবার কথা শুনে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নদীভাঙন রোধে দ্রুত কার্যক্রম শুরু হবে। ধানী জমি সুরক্ষার উদ্যোগ নেয়া হবে এবং বন্যাদুর্গতদের দুর্দশা লাঘবে কাজ চলছে। সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খামারিদের সহায়তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। সমস্যাগুলো মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার ও জনগণকে একসাথে কাজ করতে হবে।

উপদেষ্টা আরো জানান, ভাঙন ও লোনাপানি ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের মতামত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে। আজকে জনগণ যেসব পরামর্শ দিলেন তা বিবেচনা করা হবে। মুছাপুর রেগুলেটরটি কেন এত দ্রুত ভেঙে পড়ল, তা তদন্তের নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
এর আগে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কোম্পানিগঞ্জের মুছাপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেগুলেটর ও জনতার বাজারের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এ সময় তিনি বলেন, সারা দেশে নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন দস্যুতায় পরিণত হয়েছে। বালু খেকোদের এ দস্যুতা এখনই রুখতে হবে। আমরা মাঠে এসেছি মানুষ আর সরকারের মধ্যে ভিন্ন সত্তা যেন না থাকে, সেটা ঘুচিয়ে দিতে। মানুষ আর সরকারকে এক জায়গায় এসে সমস্যার সমাধানে যেতে হবে। যেন অচিরেই এর
সঠিক সমাধান করা যায়।
পানিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, যেখানেই নদীতে বালু আছে সেখানেই জেলা প্রশাসকেরা মানুষের শত আপত্তি সত্ত্বেও রাজস্ব আয়ের কথা চিন্তা করে বালু মহাল ঘোষণা করে দেন। বালু মহল ঘোষণার যেমন সুযোগ আছে তেমনি বিলুপ্তিরও সুযোগ রয়েছে। বালু উত্তোলনকারীদের নিবৃত্ত করে সরকারিভাবে নদী ড্রেজিং করার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা নদী তীরবর্তী এলাকায় এসে স্থানীয় মানুষের কথা শুনলাম। সরকারি হিসাব মতে দেশে প্রতি বছর নদীভাঙনে ৩০ হাজার মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়, যেটি বেসরকারি হিসেবে এক লাখের বেশি বলে আমরা এত দিন ধরে বলে এসেছি।
এখানে লোনা পানির আগ্রাসন ঠেকাতে মুছাপুর রেগুলেটর লাগবে উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রেগুলেটর দিনে দিনে তৈরি করা সম্ভব না। এটার একটা প্রক্রিয়া আছে। আমরা যদি দ্রুতগতিতেও রেগুলেটর নির্মাণ করতে চাই তা-ও দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে। এখানে যে চর হয়েছে সেখানের বালু সরিয়ে দেয়ার জন্য এলাকাবাসী প্রস্তাবনা দিয়েছে। নদীকে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং করতে হবে। সরকারকে রেগুলেটর আর ড্রেজিং দুটোর কথাই ভাবতে হচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ, নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমিন ফয়সালসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা।

ইলিশ ভারতে উপহার হিসেবে যাচ্ছে না
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর রেগুলেটর এলাকা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ভারতে ইলিশ উপহার হিসেবে যাচ্ছে না, রফতানি করা হবে। তিনি বলেন, ইলিশ রফতানি করা হবে; রফতানির টাকা বাংলাদেশ সরকার পাবে। সেটা খুব ছোট করে দেখার মতো টাকা না। বাংলাদেশ থেকে ইলিশ এখনো যায়নি। শুধু একটা সিন্ধান্ত হয়েছে। তার আগেই তো দাম বেড়ে গেছে। কাজেই রফতানি হলে দাম বাড়বে এ কথাটা ঠিক না। যেটা সরকারের বিবেচনায় আছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, যারা ইলিশটা চাচ্ছে, তারাও কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ওপার থেকে অনেক সমর্থন দিয়েছে। সেটা আমরা সবাই দেখেছি। আমরা কতগুলো কথা খুব সহজে বলে ফেলি। সবসময় মনে রাখতে হবে। প্রতিবেশীর সাথে অনেক বিষয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা করতে হবে। আমরা সেই আলোচনার ধারটা ছোট ছোট বিষয়ে বন্ধ হয়ে যাক- সেটা আমরা চাই না।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল