২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

যশোরে টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দী ৮৫০০ মানুষ

যশোরে টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দী ৮৫০০ মানুষ - ছবি : ইউএনবি

টানা বৃষ্টিতে যশোরের ভবদহ অঞ্চলের অভয়নগর উপজেলা অংশের চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ২৬ গ্রামের দুই হাজার ২০০ পরিবারসহ আনুমানিক সাড়ে আট হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের। আমন ধানসহ তলিয়ে গেছে কয়েক শ’ হেক্টর সবজি ও ফসলের খেত।

এছাড়া স্কুলের মাঠ, বসতবাড়ির উঠান পানিতে থই থই করছে। কোথাও কোমর কোথাও বুক পর্যন্ত পানি জমেছে। ঘরের মধ্যেই ঢুকে পড়েছে পানি।

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সূত্রে জানা গেছে, অতিবৃষ্টির কারণে অভয়নগরের প্রেমবাগ, সুন্দলী, চলিশিয়া, পায়রা ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌরসভার নিচু এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে ১ নম্বর প্রেমবাগ ইউনিয়নের জিয়াডাংগা (আংশিক), মাগুরা (আংশিক), বনগ্রাম (আংশিক), বালিয়াডাংগা (আংশিক) এই চারটি গ্রামের আনুমানিক ২০০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২ নম্বর সুন্দলী ইউনিয়নের লক্ষীপুর, ডাংগা মশিয়াহাটি, ডহর মশিয়াহাটি, ভাটবিলা, ধোপাদী (আংশিক), সুন্দলী (আংশিক), এই ছয়টি গ্রামের আনুমানিক ৫০০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩ নম্বর চলিশিয়া ইউনিয়নের ডুমুরতলা, আন্ধা, বেদভিটা, কোটা (আংশিক), বলারাবাদ, চলিশিয়া (আংশিক), বাগদাহ (আংশিক), এই সাতটি গ্রামের আনুমানিক ৭০০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪ নম্বর পায়রা ইউনিয়নের দিঘলিয়া (আংশিক), বারান্দী (আংশিক), আড়পাড়া (আংশিক) এই তিনটি গ্রামের আনুমানিক ২৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া নওয়াপাড়া পৌরসভার বুইকারা (আংশিক), সরখোলা (আংশিক) আমডাংগা, লক্ষীপুর (আংশিক), ধোপাদী (আংশিক), গাজীপুর (আংশিক) এই ছয়টি গ্রামের আনুমানিক ৫৭০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ৫৫ জন শিশু আশ্রয় নিয়েছে।

সরেজমিনে ৪ ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। বাড়ির উঠানেই কোমর পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে। স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা আসতে পারছেন না। গবাদিপশু ও মানুষ একসাথে বসবাস করছে।

অভয়নগর উপজেলা ঘের মালিক সমিতির সভাপতি মো: রবিউল আলম বলেন, ঘেরগুলো ভেসে গিয়ে মালিকরা শেষ হয়ে গেছে। তাদের পুনর্বাসন দরকার। সরকারি সহায়তা না পেলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, অভয়নগরে চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১১৪ দশমিক ৫০ হেক্টর আয়তনের ৩৩২টি মাছের ঘের এবং ২৪ দশমিক ১৫ হেক্টর আয়তনের ১৮০টি পুকুর/দীঘি/খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য আমরা সব সময় প্রনোদনা বা সহায়তা দেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলে থাকি।

এবারো অনুরোধ করেছি বলে জানান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, রোপা-আমনের এক হাজার ৫৮১ হেক্টর, সবজির ১৩৬ হেক্টরসহ এক হাজার ৭১৭ হেক্টর জমির ফসল ও সবজির খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, অভয়নগরের জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শনে যশোরের ডিসি সোমবার এসেছিলেন। তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ না দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা অভয়নগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জলবদ্ধতা নিরসনের জন্য গৃহীত সুপারিশগুলো সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠাব।

এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যারা আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের জন্য খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছি বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ভবদহের স্লুইস গেটে চারটি পানির পাম্প চলমান রয়েছে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একপি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement