২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

চার দিনের টানা বৃষ্টিতে তালার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

- ছবি : নয়া দিগন্ত

সাতক্ষীরার তালার নিম্নাঞ্চল টানা চার দিনের প্রবল বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়ে শত শত মৎস্য ঘের, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে আমন ধানের আবাদ, কাঁচা সবজি, হলুদ ক্ষেত, ঝাল বেগুনসহ বিল অঞ্চল বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হওয়ায় কৃষকদের কৃষি ফসল ও মৎস্য ঘের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। অনেক মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে। মানুষের স্বাবাভিক জীবনযাপন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে আমন ধানের ক্ষেত। পানিতে ভেসে গেছে বেশ কিছু মাছের ঘের, পুকুর ও ফসলি জমি। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বেশ কিছু ঘর-বাড়ি ও রাস্তাঘাট। কোনো কোনো এলাকায় বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে গেছে লোকালয়। কিছু কিছু অঞ্চলে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করেছে নোংরা পানি। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট আর বিভিন্ন রোগ বালাইয়ে বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে এসব এলাকা। বেড়েছে সাপ, পোকা-মাকড়ের উৎপাত।

বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। বিশেষ করে দৈনন্দিন উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল দরিদ্র পরিবারগুলো নিদারুণ কষ্টে পড়েছেন। বৃষ্টির কারণে উপার্জন বন্ধ থাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। সেইসাথে গোখাদ্য নিয়ে চরম সঙ্কটে পড়েছেন গবাদি-পশু লালন পালনকারীরা।

কৃষকরা জানিয়েছেন, বৃষ্টির পরিমাণ আরো বাড়লে আমন ধানের ক্ষতি হবে।

অন্যদিকে মাঝিয়াড়া কেরামত খাঁ ইদগাহ হতে শাহাপুর দধিসারা, চন্ডিপুর খালটি শালতা নদীর সাথে পানি নিষ্কাশনের যোগসূত্র।

এদিকে, জেয়ালা নিকারীপাড়ায় পানি নিষ্কাশনের গতিপথ বন্ধ করে ঘর তৈরী করায় গ্রামটির একাংশ প্লাবিত হয়ে পানিতে ডুবে রয়েছে।

দোহার গ্রামের উপাধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দোহার দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ে হাটু পানি, এলাকার শত শত মৎস ঘের তলিয়ে গেছে, বাড়ি-ঘর প্লাবিত।’

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু জানান, তার ইউনিয়নের সবকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এলাকার বেশিরভাগ ঘের ও ফসলি জমি ভেসে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দির এমনকি মানুষের বাড়ি-ঘরে পানিতে তলিয়ে গেছে।

এছাড়া তেতুলিয়া ইউনিয়নের, লাউতাড়া, শিরাশুনি, শুভাশিনী, তেরছি, আড়ংপাড়া, হাতবাস, কলিয়া, ধলবাড়িয়া, কলাপোতাসহ বেশিরভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়ে মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করেছে।

মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী শাকদহ গ্রামের আবুবক্কার বলেন, ‘সোমবার দুপুর পর্যন্ত আমার ঘের ভালো ছিল কিন্তু বেতনানদের পানির বৃদ্ধি পাওয়াই প্রবল স্রোতে ঘের তলিয়ে যায়। এতে লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে যায়।

এদিকে, গত তিন দিন ধরে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় এনজিওদের সহযোগীতায় এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা স্বেচ্ছাশ্রমে এসব এলাকার পানি সরানোর কাজ করছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন, ‘উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা ওবায়দুল হক উপজেলা নগরঘাটা, তালা সদর-সহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে পানি সরানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। নিজে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন খাস খাল দখলমুক্ত করে পানি নামানোর ব্যবস্থা করছেন।

উপজেলা পানি কমিটির সাধারন সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান জানান, উপজেলার টিআরএম কার্যকর থাকলে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না। অপরিকল্পিত নদী খনন, সংযোগ খাল উন্মুক্ত না থাকা এই উপজেলায় জলাবদ্ধতার মূল কারণ। এখনই যদি পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে তালাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সকল উপজেলা পানির নিচে তলিয়ে যাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, উপজেলাব্যাপী কৃষি ফসলের ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করছি। এখনো চুড়ন্ত তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধ্যা খা বাবলি জানান, উপজেলায় ৫২০টি মাছের ঘের সম্পূর্ণরুপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৮২৭ দশমিক ৪৫ টন মাছ ভেসে গেছে।

উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা ওবায়দুল হক জানান, এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য সকল ইউপি ও সরকারি দফতরে তথ্য চাওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কাছে দ্রুত সমাধানের জন্য আর্থিক চাহিদা দেয়া হয়েছে। পানি দ্রুত নামানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করছি।


আরো সংবাদ



premium cement