দেশে আর কখনো রাতে ভোট হবে না : গোলাম পরওয়ার
- এম আইউব, যশোর অফিস
- ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৮:১৩
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ভবিষ্যতে আর কোনোদিন যেন রাতে ভোট না হতে পারে সবাইকে মিলে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে যত দিন লাগে অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই সময় দেবে জামায়াত। কারণ এখন পর্যন্ত প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা ঘাপটি মেরে আছে। এসব জঞ্জাল আগে সরাতে হবে।’
রোববার যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জামায়াতের শহর সাংগঠনিক জেলার উদ্যোগে আয়োজিত শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘চার দিন আগে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। আর চার দিন পরে অত্যাচারী ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবাণীতে এই দেশের মানুষ নিষিদ্ধ করেছে, এটি ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো ১৫ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করে অত্যাচারী জালিম হাসিনাকে হঠাতে পারেনি। অথচ মাত্র এক মাসের আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে এ দেশের ছাত্র-জনতা সেই কাজটি করতে পেরেছে। এটি ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
গত ১৫ বছর ধরে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বাড়িছাড়া, পরিবারছাড়া করা হয় উল্লেখ করে পরওয়ার বলেন, ‘এই বিজয় ধরে রাখতে হবে। আর বিজয় ধরে রাখতে হলে প্রতিশোধ পরায়ণ হওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বরাবরই হিন্দু সম্প্রদায়কে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করেছে নিজেদের স্বার্থে। কোনোকিছু হলেই তারা জামায়াত-শিবির করেছে বলে জিগির তুলতো। অথচ গত ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর সারাদেশে হিন্দু ভাইদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দির জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরাই পাহারা দিয়েছে। এরপর জামায়াত হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছে। সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে, সারাদেশের কোথাও জামায়াত-শিবির তাদের কোনো মন্দির কিংবা স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর করেছে কিনা, করলে তার একটি প্রমাণ দিতে পারবেন কিনা। তারা একটি প্রমাণও দিতে পারেননি। যারা এগুলো করেছে তারা দুর্বৃত্ত। দুর্বৃত্তদের কাজ আওয়ামী লীগ সবসময় জামায়াত-শিবিরের ঘাড়ে চাপিয়ে ফায়দা লুটতে চেয়েছে। কিন্তু তাদের বানোয়াট অপপ্রচার দেশ-বিদেশের মানুষ এখন আর নিচ্ছে না। ৫ আগস্টের পরে জামায়াতের ভূমিকার প্রশংসা করেছে খোদ ভারতীয় সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীরা। গোটা বিশ্ব দেখেছে জামায়াত-শিবিরের ভূমিকা।’
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘মহান রবের দরবারে শ্রদ্ধাবনতচিত্তে কেঁদেছি। কারণ তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষকে অবরুদ্ধ এক অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আর এর জন্য প্রায় এক হাজার মানুষের জীবন দিতে হয়েছে। তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে দেশের মানুষ মুক্ত বাতাসে ঘুরতে পারছে, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। এ কারণে আমরা তাদের কাছে ঋণী।’
তিনি বলেন, ‘১৫ বছরে যেসব কর্মকর্তার সাথে দেখা করা যায়নি সেসব কর্মকর্তারা প্রতিদিন ফোন করে নানা তদবির করছেন। এটিই মহান রবের বিচার।’ এ কারণে তিনি শুকরিয়া আদায় করেন।
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন সেসব পরিবারের পাশে জামায়াত থাকবে। তাদের পরিবারের সব ধরনের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করবে সংগঠন। যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে জামায়াত। কেউ যাতে বিনা চিকিৎসায় কষ্ট না পায় সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত দেশী-বিদেশী ষড়ষন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে তারা জুডিশিয়ারি ক্যু করার অপচেষ্টা করেছিল। যা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও ছাত্র-জনতা ঠেকিয়ে দিয়েছে।’
তিনি শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তার ফয়সালা ছাড়া কিছুই হয় না। আপনারা গর্বিত যে আপনাদের কারো সন্তান, কারো স্বামী অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে গিয়ে শাহাদাতবরণ করেছেন। তারা দুনিয়া এবং আখেরাতে মর্যাদাবান হয়েছেন।’
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক মোবারক হুসাইন।
যশোর শহর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তৃতা রাখেন শহীদ তৌহিদুরের স্ত্রী নাসরিন সুলতানা, শহীদ ইমতিয়াজের বাবা নওশের আলী, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজীজুর রহমান, খুলনা মহানগর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, যশোর পশ্চিম জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, পূর্ব জেলার ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আব্দুল আজিজ ও শহর সাংগঠনিক জেলার নায়েবে আমির বেলাল হুসাইন।
তৌহিদুরের স্ত্রী নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘আমি গর্বিত। কারণ আমি একজন শহীদের স্ত্রী।’
এ সময় তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। একই ধরনের কথা বলেন শহীদ ইমতিয়াজের বাবা নওশের আলীও। জামায়াত সেক্রেটারি নওশের আলীকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে একাধিবার চুমু খান।
সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট ইসলামী সঙ্গীত শিল্পী অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান। কোরআন তেলোয়াত করেন হাফেজ মঈনুদ্দিন।
উল্লেখ্য, ১৭ বছর পর যশোরে এ ধরনের একটি কর্মসূচির আয়োজন করতে পেরেছে জামায়াত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা