কুষ্টিয়ায় গুলিতে নিহত শহীদ পরিবারে দুশ্চিন্তা, সহযোগিতার আহ্বান
- কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
- ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১৯:৫৫
ছাত্র আন্দোলনের বিজয়েরক্ষণে কুষ্টিয়া শহরে পুলিশের নির্বিচারে ছোড়া গুলিতে নিহত তিন শহীদ পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ঘটনার দিন রাত ৯টায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের একইসাথে জানাজা শেষে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে।
সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানা শিক্ষার্থীরা ঘেরাও করলে পুলিশ নির্বাচারে জনগণের ওপর গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আটজনের নিহতের খবর পাওয়া যায়।
এরমধ্যে সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামের তিনজন রয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনেরা লাশ গুলো হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসে। রাত ৯টায় হরিপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষেই ঈদগাহ-সংলগ্ন গোরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে। এ সময় হাজার হাজার মানুষ জানাজায় শরীক হন।
নিহতদের মধ্যে হরিপুর ফারাজি পাড়ার নওশের ফারাজির ছেলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাবুল ফারাজি (৫৫)। নকশীঁকাথা, চাদর, মশারী ফেরি করে সংসার চালাতেন। বিজয়ের খবর পেয়ে জড়ো হন কুষ্টিয়া মডেল থানা মোড় এলাকায় এসময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। একমাত্র অসুস্থ্য ছেলে সুজন আগে কর্মক্ষম থাকলেও এখন সে অসুস্থ্য। বাবার এই আয়েই পরিবরাটি জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু তার মৃত্যুতে স্ত্রী হেলেনা খাতুন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পুক্ত নন। সাধারণ জনগণ হিসেবেই সেখানে শরীক ছিলেন বলে এলাকাবসী জানান।
একই গ্রামের শালদহের মফিজ উদ্দিনের ছেলে রং মিস্ত্রি আশলাফুল (৩০)। চারভাই-বোনের তৃতীয় ছিল আশরাফুল। স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান রেখে গেলেন। তিনি ছেলে ফাহিম ১১ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে আর শিশু মেয়ে ফারিহার বয়স ৪। ফারিহা জানে তার বাবা মারা গেছে সে আবার আসবে। আর ছেলে ফাহিম বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। সে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।
স্ত্রী শাপলা জানান, পাড়ার লোকজনের সাথে থানার মোড়ে গিয়েছিল। ৩টার দিকে খবর পেলাম সে গুলিতে মারা গেছে। একমাত্র উপার্জক্ষম স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। দুচোখে অশ্রু থামাতে পারছেন না। সন্তানদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত জেনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
বোয়ালদহের সুরুজ আলী (৪২)। স্বর্ণকার ছিলেন। সোমবার বেলা ১০টার পর টিফিন কেরিয়ারে খাবার নিয়ে বাড়ি থেকে দোকানের উদ্দেশে বের হন। থানা মোড়ে পাড়ার লোকজনের সাথে আন্দোলনে যোগ দেন। ঘটনাক্রমে সেও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে সুমাইয়া (১৬) হাবিবাতুল রওজাতুল মাদরাসায় লেখাপড়া করেন। মেঝ ছেলে ফয়সাল মাদরাসায় ছোট মেয়ে রুবাইয়তা(৭)। স্বামী হারিয়ে বিলাপ করছে স্ত্রী আজিজুন। একমাত্র কর্মক্ষম স্বামীকে হারিয়ে কেমন যেন হয়ে গেছেন। সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন। সন্তানদের দিকে তাকিয়ে কান্না থামাতে পারছেন না।
কুষ্টিয়ার শহীদদের বাড়িতে এলাকাবাসী ভিড় করছেন। সকলে পরিবারকে শান্তনা দিতে যেয়ে নিজেরাই ছোখের পানি ঝরাচ্ছেন। হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাক হোসেন মাসুদ ভোরেই ঘর থেকে বের হয়ে শহীদ পরিবারের খবর নিতে আসেন।
এ সময় তিনি জানান, নিহত তিনটি পরিবরাই অসহায়। নিজেদের ভিটামাটি সম্বল। এদের সন্তানদের দিকে তাকালে মন ঠিক রাখা যায় না। এই পরিবারের জন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতার আহ্বান জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা